গ্যাস সংকট নিরসনে চাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
রাজধানীতে বেশ কিছুদিন ধরে চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। ফলে অনেক আবাসিক এলাকায় প্রয়োজনীয় মুহূর্তে গ্যাস থাকে না বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক এলাকায় মধ্যরাতে গ্যাস এসে চলে যায় ভোরে। ফলে বাসাবাড়িতে রান্নাবান্নায় সমস্যা হচ্ছে প্রতিদিন। অনেককে অপেক্ষা করতে হচ্ছে কখন গ্যাস আসে তার জন্য। এ ছাড়া অনেক পরিবারকে বাধ্য হয়ে নির্ভর করতে হচ্ছে হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবারের ওপর। কেউ কেউ বিকল্প উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন কেরোসিন ও লাকরির চুলা। অথচ গ্যাস বিল প্রতি মাসে নিয়মিত দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গ্যাসের এই ভোগান্তি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সকালে গ্যাস চলে যায় আর আসে বিকেলে। কিন্তু চাপ কম থাকায় চুলা ঠিকমতো জ্বলে না। পাইপের গ্যাস ঠিকমতো পাওয়া যায় না দেখে সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করছেন অনেকে। গ্যাস নিয়ে এমন ভোগান্তি অধিকাংশ আবাসিক গ্রাহকের। এ অবস্থা শুধু ঢাকাতেই নয়, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লাতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় গ্যাসের সংকট চলছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, গত সরকারের গ্যাস উত্তোলনে জোর না দিয়ে এলএনজি আমদানি করে কমিশন নেওয়ার দিকেই নজর ছিল বেশি। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের। বাসাবাড়িতে দিনের পর দিন গ্যাস থাকে না। কিন্তু মাস শেষে তাদের বিল দিতে হচ্ছে ঠিকই। আবার বিকল্প উপায়ে রান্না করতে গিয়ে মাসের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, এলএনজি ব্যয়বহুল হওয়ায় এ খাতে সরকারের ভর্তুকি বেড়েছে। সেই লোকসান কমাতে বারবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বেশি দাম দিয়েও গ্রাহক ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছেন না। আবাসিক গ্রাহকদের ঠিকমতো গ্যাস দিতে না পারলে পুরো বিল নেওয়া যাবে না। যে গ্রাহক যতটুকু গ্যাস ব্যবহার করবেন তিনি যেন ততটুকুর বিল দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে। গ্যাসের ঘাটতির প্রভাব পড়ছে সিএনজি স্টেশনগুলোতেও। স্বল্প চাপের কারণে গাড়িতে গ্যাস নিতে দীর্ঘ সময় লাগছে। ঢাকাসহ দেশের ফিলিং স্টেশনগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরেও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গত বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোকেয়া সরণি, খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকটি সিএনজি স্টেশনে দেখা গেছে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। এক্ষেত্রে অটোরিকশাচালকদের অভিযোগ, যখন সংকট কম ছিল তখন ২৩০-২৫০ টাকার গ্যাস নেওয়া যেত। সময় লাগত দুই-তিন মিনিট। ২৫০ টাকার গ্যাস নিলে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা আয় হতো। এখন গ্যাসের চাপ এত কম, ১০০ টাকার বেশি নেওয়া যাচ্ছে না। দিনে একাধিকবার গ্যাসের জন্য লাইন দিতে হচ্ছে। একবার লাইন ধরে গ্যাস নিতে লাগছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা।
বলাবাহুল্য, স্টেশন থেকে গাড়িতে গ্যাস দিতে হলে লাইনে গ্যাসের চাপ থাকতে হয় ১৫ পিএসআই। তবে বর্তমানে তা পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে বিদ্যমান সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। গ্যাস সমস্যার সমাধান করতে হবে দ্রুত। এ লক্ষ্যে মজুত গ্যাস উত্তোলনে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। গ্যাসক্ষেত্র ও সঞ্চালন লাইনে সমস্যা থাকলে তাও অবিলম্বে দূর করতে হবে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানির পরিমাণও চাহিদামাফিক বাড়াতে হবে। তা না হলে নিকট ভবিষ্যতে এ সংকট থেকে উত্তরণ কঠিন হবে। সরকার গ্যাস সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"