নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে উৎসাহিত করা জরুরি
জ্বালানি তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বাতাসে প্রতিনিয়ত নিঃসৃত হচ্ছে কার্বন-ডাইঅক্সাইডসহ বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণতাবৃদ্ধির জন্য দায়ী। এ কারণে বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার রোধ করাকে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংকট্যাংক সংস্থা অ্যাম্বার এক প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে বিশ্বের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৩০ দশমিক ৩ শতাংশই এসেছে সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো থেকে।
বিশ্ব জুড়ে যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। বিদ্যুতের লোডশেডিং ও বাড়তি উৎপাদন খরচের কারণে বিকল্প হিসেবে সৌরবিদ্যুতের চাহিদা এবং উৎপাদন- দুটিই বাড়ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বড় সম্ভাবনা এখন সৌরবিদ্যুতে। কিন্তু সাবেক সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে খাতটির প্রসার ঘটেনি। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, অনেক অযোগ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং এ খাতের বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব দুর্নীতি-অনিয়মের মূল কারণ হিসেবে এই বিশেষ আইনের সমালোচনা করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিযোগ, অনেক অযোগ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়েছে। ফলে গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় এবং দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি আইন (বিশেষ) আইন-২০১০-এর অধীনে আইনটি স্থগিত এবং আর কোনো চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিষুবরেখার সন্নিকটে হওয়ায় বাংলাদেশ প্রতিদিন ৪.০-৬.৫ কিলোওয়াট আওয়ার বা বর্গমিটার সৌর বিকিরণ লাভ করে। অনুমান করা হয় যে ছাদের ওপর, নদী, হাওর, পুকুরের মতো জলাশয়ে, চা-বাগানের অনাবাদি জমি ও ভূমিতে স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ২৪০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশের খসড়া জাতীয় সৌরশক্তি রোডম্যাপে ২০৪১ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ৪০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে। আগে ধারণা করা হতো, বাংলাদেশে বায়ুবিদ্যুতের তেমন সম্ভাবনা নেই। সম্প্রতি মার্কিন জাতীয় নবায়নযোগ্য শক্তি পরীক্ষাগার পরিচালিত মূল্যায়ন থেকে বাংলাদেশের বায়ুবিদ্যুৎ সম্ভাবনা অতীতের অনুমিত পরিমাণ থেকে বেশি বলে জানা যায়। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো এ জন্য বিশেষ উপযোগী। বাংলাদেশে বায়ুর সর্বোচ্চ গতিবেগ ৭.৭৫ মিলি বা সেকেন্ড, যা দিয়ে ৩০ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব হতে পারে। সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, দেশের জমির ৪ শতাংশ ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে সম্পূর্ণ জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব।
বর্তমানে যে গতিতে বিভিন্ন দেশে নবায়নযোগ্য উৎসের প্রকল্পগুলোর বিস্তার ঘটছে, তা অব্যাহত থাকলে চলতি ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বিশ্ব জুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা অন্তত ২ শতাংশ কমবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। জলবায়ু সংকট কাটিয়ে উঠতে দেশের জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা বন্ধ করা এবং ভবিষ্যতের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে উৎসাহিত করা জরুরি।
"