reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ অক্টোবর, ২০২৪

প্রধান উপদেষ্টার সংকল্প বাস্তবায়িত হোক

গণতন্ত্র হলো বিশ্বের সর্বাপেক্ষা সমাদৃত শাসনব্যবস্থা। যে ব্যবস্থা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে রাষ্ট্র বা সরকার পদ্ধতিকে নির্দেশিত করে। প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের তাৎপর্যপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে নির্বাচন। সে ক্ষেত্রে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই হচ্ছে বর্তমানে দেশের মানুষের প্রত্যাশা। যে নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোট দেবে। গঠিত জনগণের সরকার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ভোটারবিহীন নির্বাচন ও সময়ের আগে রাতের অন্ধকারে ব্যালটবাক্স ভর্তিসহ নানামুখী হীন কর্মকাণ্ড এর আগে কয়েকটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, যা এ দেশের মানুষ আর দেখতে চায় না।

বলাসংগত, কদর্য পন্থায় ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সর্বত্রই পরিত্যাজ্য। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যেক স্তরে জনগণের অংশগ্রহণই মুখ্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের যথার্থ অর্থে ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়াই গণতন্ত্রের পথকে সুগম করে। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টোকিওভিত্তিক নিউজ আউটলেট এনএইচকে ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করা এবং সরকার প্রস্তুত হলেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে।’ এদিকে রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ছয়টি কমিটির কার্যক্রম শুরুর আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে অন্তর্বর্তী সরকার। গত সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ সফর-পরবর্তী আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ১ অক্টোবর থেকে এসব কমিটির কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার মনে করছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগেই আলোচনায় বসা দরকার। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের স্টেকহোল্ডার। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারে তাদের থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে। আলোচনা শেষে দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করবে।

এটি সর্বজনবিদিত যে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের যথার্থ ধারণ ও পরিচর্যা আধুনিক জাতিরাষ্ট্রে উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রণিধানযোগ্য অনুষঙ্গ। আপামর জনগণের সামষ্টিক চিন্তাচেতনার প্রতিফলনে বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়ায় অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থাই প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকৃষ্ট পরিচায়ক। মূলত সব দল-মতের সম্মিলিত অংশগ্রহণ-সমর্থনে নেতৃত্ব বাছাই এবং সঠিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সরকার গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনা গণতন্ত্রকে শক্তিমান করে। আমরাও দেশে এমন একটি নির্বাচন দেখতে চাই, যে নির্বাচনে দেশের প্রকৃত ভোটাররা নিঃসংকোচে-নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

মনে রাখতে হবে, অর্থ-ক্ষমতা-পদ-পদবির প্রলোভনে কোনো ধরনের ব্যত্যয় সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় সহায়ক নয়, বরং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার সাধারণ জনগণের স্বাধীন মতামতকে গুরুত্ব দেবে এবং এমন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে, যা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে। পাশাপাশি গভীর প্রত্যাশায় উজ্জীবিত হবে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ- আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close