পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা জরুরি
আশির দশকে দেশে প্রথম পলিথিনের ব্যবহার শুরু হয়। এর আগে মানুষ বাজারে গেলে পাটের ব্যাগই হাতে করে নিয়ে যেত। আস্তে আস্তে পলিথিনের ব্যাগের বিস্তার ঘটতে থাকে। বাজারে যে ধরনের দোকানেই যাওয়া হোক না কেন বা যেকোনো কিছুই ক্রয় করুক ক্রেতারা, বিনাপয়সায় পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে দেওয়া হয় সব সময়। এসব ব্যাগ একবার ব্যবহারের পর ফেলা দেওয়া হয় যত্রতত্র। পচনশীল না হওয়ায় তা নানাভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছে।
প্রসঙ্গত, প্লাস্টিক এমন একটি পদার্থ, যার আয়ুষ্কাল হাজার হাজার বছর। পলিথিন মাটিতে গেলে ক্ষয় হয় না বা মাটির সঙ্গে মিশে যায় না। এটি মাটিতে পানি ও প্রাকৃতিক যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তার চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে। যার ফলে মাটির গুণগত মান হ্রাস পায়। গাছ তার খাবার পায় না। মাটি ও পানিতে প্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে পড়ে, যা পানি থেকে মাছের শরীরে যায়। মাটিতে প্লাস্টিকের তৈরি টক্সিক রাসায়নিক পদার্থ গাছে মিশে যায়। আর তা শেষমেশ শুধু পশু-পাখি নয়, মানুষের শরীরেও এসে পৌঁছায়। প্লাস্টিক মানুষের শরীরে আরো অনেক মরণব্যাধির পাশাপাশি ক্যানসারের জন্য দায়ী। পশ্চিমা বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক পরে পলিথিন ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু তা এতটাই বড় বিপর্যয় ডেকে আনে, ব্যবহার শুরুর ১৫ থেকে ২০ বছরের মাথায় ২০০২ সালের জানুয়ারি থেকে এর উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ ও ব্যবহারকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়। শুরুর দিকে বেশ কড়াকড়ি হলেও ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যায় আইনের প্রয়োগ। পরে একপর্যায়ে এসে দেশে এটি যে নিষিদ্ধ ছিল তা বোঝারই কোনো উপায় ছিল না।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ নেন। সর্বশেষ তিনি গত রবিবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক সভায় পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সারা দেশের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই সভায় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপগুলোয় এবং ১ নভেম্বর থেকে ঢাকার ১০টি কাঁচাবাজারে পলিথিন বন্ধে কার্যক্রম শুরু হবে। ১ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। তিনি ডিসি-এসপিদের উদ্দেশে বলেন, এ কাজে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। প্লাস্টিক পলিথিনের অপ্রতিরোধ্য ব্যবহার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি মাটির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে, নদী-নালা ও জলাশয় দূষিত করছে এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এসব কারণে প্লাস্টিক পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে সব পর্যায়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। পরিবেশ উপদেষ্টা প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন নিজ নিজ এলাকায় পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, পরিবহন এবং ব্যবহার বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের সমন্বিত পদক্ষেপই পলিথিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে।
পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে সরকারের সিদ্ধান্ত ও একক উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো ও মানুষকে পলিথিনের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানাতে হবে। একই সঙ্গে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগের ব্যবহারও বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
"