রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
বিশ্ব সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসতে হবে
দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গা-সংকটের সুরাহা হচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতিতে এই কার্যক্রম থেমে আছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পেরে অস্থির হয়ে পড়ছে এবং নানা ধরনের নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সৃষ্টি করছে। রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ এবং ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে বাস্তুচ্যুত হয়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া সাড়ে ৩ লাখসহ বর্তমানে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজারের ৩৩টি আশ্রয় ক্যাম্পে বসবাস করছে। কবে তারা স্বদেশে ফিরবে তা এখনো অনিশ্চিত। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাস দমনের নামে সে দেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নিধন চালায়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর দু-তিন মাসের মধ্যেই উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৭ লাখের মতো রোহিঙ্গা। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তাদের খাদ্য সহায়তা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্ব হওয়ায় দিন দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে চলেছে। মাদক পাচার, চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারা নিজেদের এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। দীর্ঘদিন এ দেশে থাকায় রোহিঙ্গারা অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে, ক্যাম্পে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলেছে। বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো মাদক ও অস্ত্র পাচারের পাশাপাশি নিরাপত্তাঝুঁকিসহ নানা ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
গত শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ তৈরি করতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’ তিনি বলেছেন, ‘সাত বছর ধরে বাংলাদেশ মানবিক কারণে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। ফলে আমরা বিশাল সামাজিক-অর্থনৈতিক-পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে সৃষ্ট এই সংকট বাংলাদেশ ও আমাদের অঞ্চলের জন্য প্রথাগত এবং অপ্রথাগত উভয় ধরনের নিরাপত্তাঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংঘটিত হওয়া ব্যাপকভিত্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’ সফরকালে প্রধান উপদেষ্টার ব্যাপক কর্মতৎপরতা বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিশ্বের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং অংশীদারত্ব এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের ওপর চেপে বসা রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা, পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে জনসচেতনতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিষয়টি প্রতিনিয়ত তুলে ধরছে। কূটনীতিকভাবে ও আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোয় এই কার্যক্রম এগিয়ে নিতে কমিশন গঠন করে একটি কাঠামোর আওতায় বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে বিশ্বনেতারা এগিয়ে আসবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশ্লা।
"