জাতিসংঘের ভাষণে ড. ইউনূস
নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হোন
জাতিসংঘে এ বছরের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ছিল বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এবার সংস্থাটির সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অবদানকারী চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশনে শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছে। বসনিয়া থেকে শুরু করে কঙ্গো পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এসব মিশনে দায়িত্ব পালনকালে ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। যেকোনো অবস্থায় নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ শান্তিরক্ষী কার্যক্রমগুলোয় বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা একইভাবে অবদান রাখার সুযোগ পাবেন, এমনটাই আশা বাংলাদেশের। জাতিসংঘের শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের শুরু থেকেই শান্তিরক্ষার মতো শান্তি বিনির্মাণেও বাংলাদেশ সমান অঙ্গীকার ব্যক্ত করে এসেছে। সামনের দিনগুলোয়ও বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অবদানের ধারাবাহিকতা রক্ষা সমুন্নত ও প্রসারিত করতে বদ্ধপরিকর।
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক পতন ঘটে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশন হয়। সেখানে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে ভাষণ দেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বাংলায় ভাষণ দেন। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধানের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের সবচেয়ে সফলতম সফর ছিল এবার। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক পৌঁছেন। তিনি চারদিনের সফরে কর্মব্যস্ত সময় পার করেন। সফরকালে মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সাইডলাইনে ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। ভাষণে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই।’ ড. ইউনূস তার ভাষণে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব গ্রহণ, বাংলাদেশ নিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রারম্ভিক পদক্ষেপ তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। তিনি রাষ্ট্র হিসেবে দ্বিপক্ষীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের দায়িত্বের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমকালীন নানা বিষয় তুলে ধরে ভবিষ্যতের পৃথিবীর কথাও ভাষণে উল্লেখ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরে প্রধান উপদেষ্টার ব্যাপক কর্মতৎপরতা বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিশ্বের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং অংশীদারত্ব এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে বলে আশা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ‘নতুন বাংলাদেশের’ অভ্যুদয় ঘটেছে, তার সঙ্গে ‘নতুনভাবে’ সম্পৃক্ত হতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, বিশ্ববাসী এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ড. ইউনূসের আহ্বানে সাড়া দেবে।
"