নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন
জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব ও অভূতশ্রুত গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। উদীয়মান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত নবজাগরণের বা রেনেসাঁর উন্মেষ থেকেই নবপর্যায়ের এই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। এ দেশের ছাত্র-জনতার বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে এই বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে। জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রূপ নিয়েছিল ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে। দুনিয়া কাঁপানো সেই আন্দোলন দেখেছে বিশ্ববাসী।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে নির্বাচন ও বিচারব্যবস্থা, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করতে সক্ষম করেছিল। যার কারণে পরপর চারবার তারা ক্ষমতায় এসেছিল। ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং বিরোধী দলের প্রার্থী ছাড়া নির্বাচন করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসে প্রতিবারই পূর্ণ মেয়াদ কাটিয়ে গেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে মানুষ যত দলীয় সরকার দেখেছে, তাদের চেহারা কমবেশি একই ধরনের ছিল। একটি সরকারের পতনের পর নতুন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সবাই ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দিকে ছুটেছে। পরিবর্তিত প্রতিটি সরকারই পূর্ববর্তী সরকারের চেয়ে বেশি দলীয়করণ, একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরাচারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। এখন প্রশ্ন হলো, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, সেই বাংলাদেশ থেকে কি দূর হবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন? শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সরকারের লক্ষ্য রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও অবাধ নির্বাচনের আয়োজন করা। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
বাংলাদেশের পুরোনো ধারার এই রাজনীতির চরিত্র দেখে মানুষের মধ্যে একটা জড়তা চলে এসেছিল। তারা পুরোনো ধারার রাজনীতিকে রাজার নীতি মনে করে নিয়েছিল এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। সেই মানুষই যখন দেখল কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্ররা ‘নতুন বাংলাদেশের’ স্বপ্ন নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে, তখন তারা আর ঘরে থাকেনি। নেমে এসেছে রাজপথে। ছিনিয়ে এনেছে বিজয়। যে তরুণরা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে, তাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও অনেক। কারণ এখন তাদের দায়িত্ব এই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া। তরুণদের স্বপ্নের একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা চেয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তরুণদের আত্মত্যাগ আমাদের সামনে বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আমরা এ সুযোগ হারাতে চাই না। বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে তরুণরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়। এটি বাস্তবায়নে আপনাদের সবার সমর্থন প্রয়োজন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গণমানুষের প্রত্যাশা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশের অবয়ব তৈরি করে দেওয়ার। মানুষ আর পুরোনো ধারার রাজনীতি চায় না। এখন সবারই প্রত্যাশা- ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশে রাজনীতির একটি নতুন ধারা তৈরি করে দিয়ে যাবে। আর তরুণরাই হবে এর কান্ডারি, যারা গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে।
"