মো. আমিনুল ইসলাম
ধর্মকথা
শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচুন
শয়তান মানুষের চিরশত্রু। মানুষ সৃষ্টির সূচনা থেকে মানুষের প্রতি তার শত্রুতা চলমান। এই শত্রুতা চলবে কিয়ামত পর্যন্ত। শয়তান মানুষকে সব সময় ভুলপথে পরিচালিত করে ইমান-আমল নষ্ট করার পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে সমস্যা তৈরি করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘কখনো যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহতায়লার কাছে আশ্রয় চাও। অবশ্যই তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ২০০)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নিজেদের ঘরবাড়িগুলো কবরে পরিণত করো না। যে বাড়িতে সুরা বাকারা পাঠ করা হয়, সে বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ৭৮০)
রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, ‘যখন তোমরা ঘুমাতে যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমাদের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযুক্ত থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমাদের কাছে আসতে পারবে না।’ (বোখারি শরিফ, হাদিস নং-২৩১১)
শয়তান পৃথিবীতে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আমাদের এ ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছেন।’ সে (শয়তান) বলল, হে আমার রব, তুমি যেভাবে আজ আমাকে পথভ্রষ্ট করলে, আমিও মানুষদের জন্য পৃথিবীতে তাদের (গুনাহের কাজসমূহকে) শোভন করে তুলব এবং তাদের সবাইকে আমি পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাঁটি বান্দা তাদের কথা আলাদা।’ (সুরা হিজর, আয়াত ৩৯-৪০)
আমাদের মনে রাখতে হবে, শয়তান আমাদের চিরশত্রু। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে আমাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘শয়তান হচ্ছে তোমাদের শত্রু। অতএব তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করা। সে তার দলবলদের এ জন্যই আহ্বান করে যেন তারা তার আনুগত্য করে জাহান্নামের বাসিন্দা হয়ে যেতে পারে।’ (সুরা ফাতির, আয়াত ৬) শয়তানের ফাঁদে পড়ে আমরা যেন কোনো খারাপ কাজে জড়িয়ে না পড়ি, সে জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের পবিত্র কোরআনে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘হে আদমের সন্তানরা, আমি কি তোমাদের এ মর্মে নির্দেশ দিইনি যে, তোমরা শয়তানের গোলামি করো না, অবশ্যই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৬০) ‘আর শয়তান সে তো আগেও অনেক লোককে পথভ্রষ্ট করে দিয়েছে, তা দেখেও কি তোমরা বুঝতে পারছো না?’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৬২) শয়তানের অনিষ্টতা থেকে বাঁচার জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে হবে। তার জন্য আমাদের যা করতে হবে, আল্লাহর কাছে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। সর্বদা আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে কোরআন তিলওয়াত করার শুরুতে, মসজিদে প্রবেশ করার সময়, রাগ নিয়ন্ত্রণে, খারাপ স্বপ্ন দেখলে, বাথরুম প্রবেশ করার সময়, ঘর থেকে বাহির হওয়া ও প্রবেশ করার সময়, স্ত্রীর সঙ্গে মিলনের সময়ে। ফজরের নামাজ আদায় করা হলো শয়তানের বিরুদ্ধে দিনের প্রথম বিজয়। শয়তানকে দিনের শুরুতে পরাজিত করার প্রথম আমল হলো ফজরের নামাজ। জামাতে নামাজ আদায় করাও শয়তানের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন। শয়তান সব সময় চেষ্টা চালিয়ে যায় মানুষকে বিভ্রান্ত করে অন্যায় ও পাপকাজে নিয়োজিত করতে। সে জন্য আমাদের সবার উচিত ইমান ও আমলের ওপর অবিচল থাকা। এ শয়তানই কিয়ামতের ময়দানে বিচার শেষে বলবে, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের সঙ্গে যে ওয়াদা করেছেন তা ছিল সত্য ওয়াদা, আমিও তোমাদের সঙ্গে একটি ওয়াদা করেছিলাম কিন্তু আমি তোমাদের সঙ্গে ওয়াদার বরখেলাপ করেছি, আসলে তোমাদের ওপর আমার তো কোনো আধিপত্য ছিল না, আমি তো শুধু এটুকুই করেছি, তোমাদের আমার দিকে ডেকেছি অতঃপর আমার ডাকে তোমরা সাড়া দিয়েছো, তাই আজ আমার প্রতি তোমরা দোষারোপ করো না, বরং তোমরা তোমাদের নিজেদেরই দোষারোপ করো। আজ আমি তোমাদের উদ্ধারে কোনো রকম সাহায্য করতে পারব না, তেমনি তোমরাও আমার উদ্ধারে কোনো সাহায্য করতে পারবে না।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত ২২)
সুতরাং এই শয়তানকে আমরা প্রতিহত করি আমাদের দৈনন্দিন আমলের মাধ্যমে। সর্ব অবস্থায় আমরা আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করব, যাতে সে আমাদের বিভ্রান্তু করতে না পারে। প্রতিদিন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ পাঠ করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে হেফাজত করুন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার
"