পাচারের অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ প্রশংসনীয়
শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে তার শাসনামলে অবাধ লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে ব্যাংক খাত। জনগণের লুণ্ঠিত এসব অর্থ পাচার হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য বিশ্লেষণে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে দেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৯২০ কোটি বা ১৪৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় পাচার করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। পাচার করা সেই টাকা দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাচারকারীরা গড়ে তুলেছেন প্রাসাদসম বাড়ি, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, বিপুল বিনোয়োগের ব্যবসা, নামি-দামি গাড়ি আর ঐশ্বর্যপূর্ণ জীবনযাপন। এই তালিকায় রয়েছেন বিগত সরকারের মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন পদে থাকা বড় কর্মকর্তাদের বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য এরই মধ্যে বেরিয়ে এসেছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় মদদে বিভিন্ন বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠীর অর্থ পাচারের তথ্যও এরই মধ্যে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। আর তাই দেশে-বিদেশে প্রভাবশালীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে জোর তৎপরতা শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাচারের অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতাও শুরু হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে গত ২৮ আগস্ট একটি শ্বেতপত্রপ্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে। এ ছাড়া দেশের ১১ জন স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে কমিটির সদস্যরা তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। পাচার বন্ধ এবং অবৈধ অর্থ পুনরুদ্ধারে করণীয় নিয়ে নাগরিকের পরামর্শ চায় অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর শ্বেতপত্রপ্রণয়নের লক্ষ্যে গঠন করা কমিটি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্বেতপত্রপ্রণয়ন কমিটি কয়েকটি বিষয়ে জনগণের মতামত ও পরামর্শ আহ্বান করেছে। বিষয়গুলো হচ্ছে- সরকারি পরিসংখ্যানের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা; সামষ্টিক অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ; জিডিপি প্রবৃদ্ধির পর্যালোচনা; মূল্যস্ফীতির ধারা এবং তার অভিঘাত; দারিদ্র্য, অসমতা ও বিপন্নতা; অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ; সরকারি ব্যয় বরাদ্দে অগ্রাধিকার মূল্যায়ন; বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য। এ ছাড়া ঋণ ধারণক্ষমতা, মেগা প্রকল্পগুলোর মূল্যায়ন, ব্যাংকিং খাতের প্রকৃত অবস্থা; জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের পরিস্থিতি; ব্যবসা-পরিবেশ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ; অবৈধ অর্থ ও তার পাচার; শ্রমবাজারের গতিশীলতা এবং যুব কর্মসংস্থান; বৈদেশিক শ্রমবাজার ও প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার বিষয়েও পরামর্শ চায় এ কমিটি। এ ছাড়া পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে বলে গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এই মুহূর্তে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিময় হার নিয়ে অস্থিরতা, রিজার্ভ সংকটসহ বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার যে অধপতন হয়েছে, সেখান থেকে টেনে তোলার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তাদের নানামুখী কার্যক্রমে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে এবং একই বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে, এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।
"