নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই সম্মিলিত প্রয়াস
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে একটি নতুন বাংলাদেশের। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। আর এর মাধ্যমে বিজয় হয় ছাত্র-জনতার। দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা ‘স্বৈরাচার’ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এক নতুন আশার জন্ম নেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যে সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে গেছে, তা কোনো পরিকল্পিত ঘটনা ছিল না। সমাজের মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে এই আন্দোলনের মাধ্যমে। শুধু এ সময়ের আন্দোলন দিয়েও এটাকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। এই আন্দোলনের সূত্রপাত রাজনৈতিক নেতৃত্বে হয়নি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়েছে এই আন্দোলন। গণ-অভ্যুত্থান আগেও হয়েছে, ১৯৬৯ ও ১৯৯০ সালে। ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও ভাসানী ন্যাপ। এই আন্দোলনের ফল মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন হয়। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বাম দলের নেতৃত্বে তিনটি রাজনৈতিক জোটের সম্মিলিত আন্দোলন হয়। এবারের আগস্ট অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না, এর কোনো নির্দিষ্ট নেতাও ছিল না।
৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের প্রধান হন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা বৈষম্যহীন মানবিক দেশ গড়ার যে প্রত্যয়, যে ভয়হীন চিত্ত উপহার দিয়েছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে বিবেক ও ন্যায়বোধে উজ্জীবিত হয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও জবাবদিহি নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে এই মুহূর্তে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে আগ্রহ, ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, দেশের স্বার্থে তা সর্বোত্তম উপায়ে কাজে লাগাতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে সেই দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গত বুধবার দুপুরে সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এটিই সচিবদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক। সরকারের সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ ও সরকারি অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সচিবদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে চিন্তার সংস্কার করে সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে সেবা সহজ করার মাধ্যমে জনগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন ও সরকারি অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি কেনাকাটায় যথার্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে।
নতুন বাংলাদেশ গড়তে এই মুহূর্তে প্রয়োজন সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। একটি বাংলাদেশ গড়তে জাতি-ধর্ম, দল-মত নির্বিশেষে সবার এগিয়ে আসতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে একটি দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ- এই প্রত্যাশা সবার।
"