এম এ আউয়াল মিঞা
মতামত
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কিছু নিবেদন
‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার তত্ত্ব’, ‘সকল দেশবাসীকে নিয়ে এক পরিবার গড়ার তত্ত্ব’, ‘রাষ্ট্র সংস্কার তত্ত্ব’, ‘ন্যায়পাল নিয়োগদান’, ‘সরকারি কাজে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সম্পদের হিসাব বাধ্যতামূলক করণ’, ‘ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান’ এবং শ্বেতপত্র প্রকাশ করার অঙ্গীকার ঘোষণাকে স্বাগত জানাই! কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ও দলীয় সরকারের মধ্যে পার্থক্য আছে। যেমন : রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার করতে জনগণের ম্যান্ডেট প্রয়োজন। তার জন্য ডান-বাম সব দলের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনা জরুরি। আমরা জানি, সংশোধন আর সংস্কার এক নয়। আমাদের দেশে অনেক ভালো আইনের সঠিক প্রয়োগ হয় না, কিন্তু নিবর্তনমূলক আইনের প্রয়োগ দ্রুততার সঙ্গে হয়।
বিগত স্বৈরশাসক সংঘটিত অপরাধ করেছে কিন্তু এখন দেখছি একদিকে দেশময় নতুন করে দখলদারির হিড়িক, অন্যদিকে উন্মুক্ত অজ্ঞাতনামা আসামি হওয়ার ভীতি ছড়াচ্ছে। ছাত্রদের রক্তস্নাত অভ্যুত্থানের পর এই চরদখলের রাজনীতির কি অবসান হবে? আমরা কি শুধু ব্যক্তির বদল চাই? নাকি সিস্টেমের? এসব প্রশ্ন আজ জনমনে দানা বাঁধছে।
রক্তে কেনা স্বাধীনতা অর্জন ও ৯০-এর ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের পর স্বৈরশাসকরা ভিন্ন ভিন্ন নামে, ভিন্ন ভিন্ন রূপে, ভিন্ন ভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে ক্ষমতার চেয়ার দখল করে অক্টোপাসের মতো জনগণের কণ্ঠ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল। এবারও ছাত্র-জনতার বিজয়কেতনকে পুঁজি করে শোষকরা রাষ্ট্রের ওপর দখলদারি কায়েমের লক্ষ্যে তৈরি হচ্ছে, দখলদারি কায়েম করার সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এই জনতার আকাঙ্ক্ষার সরকারকে যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন করে চলে যেতে বাধ্য করতে পারে স্বার্থবাদী মহল।
এখন এই সরকারকে সংস্কারের জন্য বলা হচ্ছে আবার নির্বাচন দ্রুত করার তাগিদও আসছে আকার ইঙ্গিতে, যা কিছুদিনের মধ্যে আরো জোরালো হবে। তবে সরকার কোন পথে কীভাবে সব মত-পথকে বিবেচনায় নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ‘রোডম্যাপ’ দেবে- সেটাই এখন দেখার ব্যাপার। তবে জাতিসংঘের পরামর্শক্রমে সংস্কার করার চেয়ে এ দেশের জনগণ কী চায়, তার ওপর সংস্কার করতে হবে। মানুষ চরদখলের রাজনীতি থেকে মুক্তি চায়। সংস্কার বিষয়টির ব্যাপকতা বিশাল। এই অন্তর্বর্তী সরকারের সে ধরনের ইচ্ছা, সামর্থ্য ও সময় আছে কি না- তা একটি বড় প্রশ্ন। তবে সংস্কার দুরকম হতে পারে। ১. সংক্ষিপ্তভাবে শুধু নির্বাচন প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক সংস্কার, পুলিশ-সংক্রান্ত সংস্কার, যা প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে বলেছেন। ২. রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার, আইন ও বিচারব্যবস্থার সংস্কার, সংসদীয় পদ্ধতির সংস্কার সংবিধানের স্বৈরতন্ত্রের ধারা, এক ব্যক্তির শাসন, সংসদে শুধু হ্যাঁ না এর দায়সারা রীতির প্রচলন, দলের বিরুদ্ধে ফ্লোর ক্রসিং করায় সংসদীয় পদক্ষেপ হিসেবে সংসদ সদস্য পদ হারানো, রাষ্ট্রের আদর্শিক ভিত্তি সংস্কার ও পুনর্মূল্যায়ন করা, যা নির্বাচিত সরকার ছাড়া সম্ভব নয়, যা বুর্জোয়া লুটেরা দলগুলো দ্বারা সম্ভব নয় বলেও মানুষ মনে করি।
এটা দিবালোকের মতো সত্য, পতিত সরকার অনেক দোষ করেছিল, অপরাধ করেছিল। যেমন- ঋণখেলাফিরা অনেকগুলো Captive Company খোলে দু-একটি চালু ব্যবসার নামে লোন না নিয়ে ২০-৩০টি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের নামে লোন নিয়ে দেউলিয়া ঘোষণা করে ব্যাংকের টাকা লোপাট করেছিলেন বিগত সরকারে আষীর্বাদপুষ্ট ব্যবসায়ীরা। অলাভজনক কোম্পানি খুলে ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন কিন্তু যে দু-একটা লাভজনক কোম্পানি আছে সেগুলোতে কোনো ঋণ নেননি তারা। দুই ধরনের অ্যাকাউন্ট লেজার ম্যান্টেইন করে। একটি এনবিআরের জন্য, যেখানে লাভ না দেখানো আর একটি ব্যাংককে প্রদর্শন করার জন্য যেখানে শুধু লাভ আর লাভ। এটাকে (Grand Father Account) বলে। তারা নিজেদের লোকদের দিয়ে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট তৈরি করে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপটিভ ট্যাক্সের নামে জনগণের ট্যাক্স-খাজনার টাকা মেরে খেয়েছে। ব্যাংকগুলোয় ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠা করে অর্থ লোপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। শেয়ারবাজার, বন্ড, বিমাশিল্পে ব্যক্তিগত মালিকানা কোম্পানির মতো যাচ্ছেতাই নয়-ছয় করেছে। বিমা কোম্পানির টাকা অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে অথবা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ব্যাংকে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ঋণ নিয়েছে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাফি হয়েছে, রাষ্ট্রের মাধ্যমে অবলেপন করেছে।
মধ্যস্বত্বভোগীরা ও নিজেদের সিন্ডিকেট করপোরেট কোম্পানি দিয়ে ‘বাজার কারসাজি’ করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করেছে। চাঁদাবাজি ও দখলদারি সিন্ডিকেট, ঘুষ, কমিশন সিন্ডিকেটে জনগণের পকেট কেটেছে, মেগা প্রকল্পে হরিলুট ও কমিশন সিন্ডিকেট তৈরি করে জনগণের টাকা লুট করা হয়েছে। এভাবে বিগত পতিত সরকার একটি লুটপাটের স্বর্গরাজ্য তৈরি করেছিল। পাঁচটি একচেটিয়া শিল্পগোষ্ঠীকে দিয়ে দেশের টাকা লুটপাট করিয়ে তাদের সেরা অলিগার্ক শ্রেণিতে তৈরি করে তাদের ক্ষমতার অংশীদার করার মাধ্যমে দেশ শাসন করেছিল। তাদের হাতে ব্যাংক, বিমা, শেয়ারবাজারসহ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়েছিল। বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন, এস আলম গ্রুপের এই সিন্ডিকেটকে ‘আওয়ামী পঞ্চ রত্নভাণ্ডার’ বলা যায়। তাদের পালের গোদাকে যে হালে গরুর রশি দিয়ে বেঁধে ফেলতে পেরেছে, তাতেই সরকার খুশ মেজাজে থাকলে সরকার ভুল করবে, কারণ এখন বাঘের লেজুরে পা রেখে বাঘের মাথাকে এক করে ফেলেছে। বিচার যাই হোক, এই বাঘগুলো খাঁচায় ভরে আইনের আওতায় আনতে না পারলে সরকার নিরাপদ নয়। কারণ তারা অবৈধ সম্পদ আর কালোটাকা ব্যবহার করে চক্রান্ত সহজেই বাস্তবায়ন করতে পারে। যেকোনো মুহূর্তে গণেশ উল্টে দিতে পারে। এ জন্যই তাদের তৈরি করা হয়েছে, আপৎকালীন সময়ের অন্ধের যষ্টি হিসেবে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হবে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নব্য গজে ওঠা আমলা ও স্তাবকশ্রেণি। যাদের কয়েক স্তরে স্তরবিন্যস্ত করা হয়েছিল। দেশ-বিদেশে লবিস্টরা সক্রিয় হতে পারে এই লুটেরাদের পক্ষে। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের নামে লুটপাট হয়েছে, ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি করা হয়েছে।
এই লুটেরা চক্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার মতো চেতনাসম্পন্ন শক্তিশালী দল এ দেশে নেই। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে অর্থনৈতিক কারণে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, সামগ্রিক বকেয়া ২০০ কোটি ডলার। যার মধ্যে আছে এয়ারলাইনসের বকেয়া, যা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে। এদিকে, ৩১ জুলাই পর্যন্ত দেশের মোট রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে প্রায় তিন মাসের আমদানিব্যয় মেটানো সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকার এই অর্থনৈতিক অসুবিধাগুলো কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিশ্রুত ৪৭০ কোটি ডলারের বাইরেও আরো ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
আমরা আশা করি, সরকার খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ের জন্য অর্ডিন্যান্স পাস করে এসব টাকা উদ্ধার করবে। আমার মতে, আগের সরকারের সংবিধানের পথে না হেঁটে শ্রমিক-কৃষকদের প্রতিনিধি নিয়ে একটি বিপ্লবী সরকার গঠন করা যেত এবং একটি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা হিসেবে সুপ্রিম কমান্ড কাউন্সিল গঠন করে এ সরকারের অধীনে সংবিধান প্রণয়নের ব্যবস্থা করা যেত, যেহেতু প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই প্রথম দিন থেকে বলে আসছেন এটা দ্বিতীয় স্বাধীনতা, তাহলে সংবিধান নতুন করে প্রণয়ন করতে বাধা কোথায়?
দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতি জেলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের বিচার করা দরকার। এখন যে সরকার তাতে শ্রমজীবী, কৃষক, মজুর ও শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব নেই। নেই বলেই সরকার দুর্বলতার পরিচয় দিচ্ছে, কারণ ৯০ ভাগ মানুষের সরকারের মতো ১০ ভাগ মানুষের সরকারের ক্ষমতা হয় না। যাই হোক, আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান বলে এ সরকারকে আরো শক্ত হতে হবে। ছাত্ররা যে প্রক্রিয়ায় সচিবালয়ের মতো জায়গায় রীতিমতো ভীতিকর অবস্থা তৈরি করে দাবি আদায় করল, তা ভালো দৃষ্টান্ত নয়। যে প্রক্রিয়ায় চরম অপমানজনকভাবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সম্মানিত শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে, তা অরাজকতাকেও হার মানায়। এখন এটাকে অনুসরণ করে অন্য সেক্টরগুলোও দাবি নিয়ে মাঠে সরব হচ্ছে, যা বর্তমান শাসনকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। যাই হোক, আমাদের শিল্প-কারখানা স্থবির হচ্ছে ডলারের সংকটে। ডলারের ঘাটতি কমাতে এখন ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার ডলারে কিনতে হবে। অলিগার্কদের ঐক্য ভাঙতে হবে।
হুন্ডি করে বিদেশে টাকা পাঠানো মানে বাইরে ডলার পাঠানো, যা কঠোর নজরদারিতে আনতে হবে। সন্দেহভাজনদের দেশ-বিদেশে সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে হবে। সুইস ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশের লুটেরাদের টাকা ফেরত আনতে হবে। আমলাদের ঘুষের টাকায় কেনা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। প্রফেসর ইউনূসের পক্ষেই তা সম্ভব হবে। আমাদের দেশে তেল-গ্যাস তেমন নেই কিন্তু আছে ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান, যা ভূরাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। তাই ভারতের সেভেন সিস্টার্সের জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এ দেশে যত গোপন চুক্তি হয়েছে তার ও শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। ঋণখেলাফিদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। ব্যাংক লুট, টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। গোপন চুক্তি বাতিল করতে হবে। কুইক রেন্টালের নামে ক্যাপাসিটি ট্যাক্স দেওয়ার চুক্তি বাতিল করতে হবে। নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ আরো সহজ করতে হবে। নির্বাচন-সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের ভেতরে আনতে হবে।
এ সরকারের মেয়াদ দীর্ঘদিন হলেও দেশের মানুষ আপত্তি করবে না, যদি সরকার উপরোক্ত লক্ষ্য স্থির করে একটি সমন্বিত ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করে অগ্রসর হয়। তবে সরকারকে সুচিন্তিত পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে। বিগত সরকারের আমলে সুবিধাভোগীরা এই সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করবে নানাভাবে। অতএব এই অন্তর্বর্তী সরকারকে চোখণ্ডকান খোলা রাখতে হবে। এ সরকার দেশের গুণিজনদের নিয়ে গঠিত রাজনীতির মারপ্যাঁচ বোঝা তাদের পক্ষে বেশ কঠিন হবে। আবার ক্ষমতামুখী বিএনপি এবং জামায়াত ইতিমধ্যেই প্রশাসন, বণিক-প্রতিষ্ঠান ও পরিবহনে দখলদারিত্ব ও সিন্ডিকেটের বলয় তৈরি করে ফেলেছে। এদের সম্পর্কে সরকারকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ এ সরকারের দীর্ঘ শাসন তাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে পারে।
অরগানাইসড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং সূত্র মতে, দুবাইয়ে গোপনে সম্পদ গড়েছেন অন্তত ৩৯৪ জন বাংলাদেশি। শহরটিতে এই বাংলাদেশিদের মালিকানায় রয়েছে ৬৪১টি সম্পত্তি। বাংলাদেশিদের মালিকানায় থাকা এসব সম্পত্তির মূল্য ২২ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের বেশি। এই টাকা কারা দুবাই নিয়ে গেল তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
অন্যদিকে সমাজ বিন্যাসেও রূপান্তর আনতে হবে। সরকারের সামাজিক শক্তি বাড়াতে হবে। নমনীয় সিদ্ধান্ত, জুজুর ভয়, দুর্বল সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্তহীনতা এই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার সাফল্য ম্লান করে দিতে পারে। বিশেষ করে নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বিদ্বেষমূলক দূরত্ব সৃষ্টি হলে ইসলামি চরমপন্থিরা হালে পানি পাবে ও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো বিশেষ করে সেভেন সিস্টার্স হিসেবে পরিচিত আসাম, মণিপুর, অরুণাচলসহ সাত রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বৃদ্ধির আশঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে। ভারত আগে থেকেই পাকিস্তান ও চীন সীমান্তে সহিংসতা নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। এই অঞ্চলে এমন পরিস্থিতি হলে বাংলাদেশ লাগোয়া সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হলে তা মোকাবিলা করা সহজ হবে না। বরং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে।
হঠাৎ বন্যা আমাদের হতবিহ্বল করে তুলছে। এই সুযোগে অনেকে ভারতের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭২ সালের যৌথ নদী কমিশনকে নতুন করে সংশোধন না করলে এ রকম ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকবেই। কারণ ভারত তার নিজের প্রয়োজনেই বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে।
অজ্ঞাতনামা আসামি করার যে রেওয়াজ আগেও দেখেছি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও দেখছি। যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এটা একটা ভীতিকর অবস্থা। যেকোনো সময় যে কাউকে গ্রেপ্তার করে অজ্ঞাতনামা খোলা অভিযোগপত্রে ঢুকিয়ে আদালতে হাজির করতে পারে পুলিশ। এ রকম পুলিশি তৎপরতা কাম্য নয়। কেন না, কাউকে সন্দেহ হলেই পুলিশ যাকে ইচ্ছা তাকে গ্রেপ্তার করলে তা মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়। এ কাজটি দলীয় সরকারের আমলে হয়েছে, এ সরকারের আমলেও হচ্ছে। তাতে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। রাষ্ট্রের কর্মচারী আমলাদের যেভাবে ঢালাওভাবে বদলি ও অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে, তাতে দলীয় সরকারের ধরনেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। আমলারা এ যাবৎ সব সরকারের সময়ই বলির পাঁঠা হয়েছে। সব সরকারই নিজের দলের কর্মীকে পর্যন্ত কর্মচারী বানিয়েছে, নিজেরা হয়েছে করপোরেট কর্মকর্তা আর দল হয়েছে করপোরেট বিজনেস কোম্পানি। পুরোনো এসব রাষ্ট্রকাণ্ড আর চলা উচিত নয় বলে মনে করি।
লেখক : ৯০-এর ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে সর্বদলীয়
দলীয় ছাত্রঐক্যের ছাত্রনেতা
"