বাড়ছে বন্যা-পরবর্তী পানিবাহিত রোগ
হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত হোক
স্মরণকালের এক ভয়াবহ বন্যার রূপ দেখল বাংলাদেশ। এত ভয়াবহ বন্যা ৩০ বছরে দেখেনি দেশের মানুষ। উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও প্রবল বর্ষণে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ১১ জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এতে পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ।
বন্যাকবলিত অধিকাংশ এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। কোনো কোনো এলাকায় বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি নামলেও এখনো বাড়িঘর তলিয়ে রয়েছে। ফলে দুর্ভোগ কমেনি বানভাসি মানুষের। বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় এখনো ত্রাণ না পৌঁছানোয় সংকটে আছেন ওইসব জায়গার বাসিন্দারা। পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবাও পাচ্ছেন না অনেকে। বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি। ডায়রিয়া, জ্বর ও সর্দি নিয়ে হাসপাতালে ছুটছে মানুষজন। তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সার্বিকভাবে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরছে। দুর্গত জেলাগুলোয় যোগাযোগব্যবস্থা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। গত শনিবার পর্যন্ত বন্যায় ৫৯ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, বন্যাকবলিত ১১টি জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ৫১৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ২০ হাজার ৬৫০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৩৫ লাখ টাকা শিশুখাদ্যের জন্য ও ৩৫ লাখ টাকা গোখাদ্যের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বন্যা-পরবর্তী ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। খাওয়ার পানি ও খাবার থেকে মূলত এটা হচ্ছে বলে ধারণা চিকিৎসকদের। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোয় শয্যাসংকট তৈরি হয়েছে। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য বন্যাকবলিত জেলাগুলোর হাসপাতালের মেঝেতে পৃথক শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি রয়েছে। জায়গা না পেয়ে অনেক হাসপাতালে রোগীদের কারো ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়, এমনকি সিঁড়িতেও আছে কেউ কেউ। ডায়রিয়া ছাড়াও আমাশয়, পেটব্যথা, জ্বর ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে বানভাসিরা। এ অবস্থায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তারা জানিয়েছেন, ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালে আসা রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। অতিরিক্ত বিছানা বিছিয়ে হলেও ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। তাই একসঙ্গে এত রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। এ ছাড়া নদ-নদীর পানি কমায় কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না বন্যার্তদের। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ময়লা-আবর্জনা। ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। বন্যাকবলিত জেলাগুলোর অনেক পাড়া-মহল্লায় এখনো পানি জমে আছে। এ পানি নর্দমায় মিশে কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে দেখা দিয়েছে চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ।
আশা করা যায়, সবার সম্মিলিত চেষ্টায় এবং সরকারের যথাযথ উদ্যোগে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে মানুষ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে, পরিবেশও পুনরুজ্জীবিত হবে। তবে এই মুহূর্তে জরুরি হলো, বন্যা-পরবর্তী পানিবাহিত রোগ মোকাবিলা করা। বন্যাদুর্গত এলাকার হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা নিতে রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"