ভাঙন ঠেকাতে শঙ্খ নদে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক
একসময়ের খরস্রোতা শঙ্খ নদ আজ মৃতপ্রায়। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদ নাব্য হারিয়ে এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। শঙ্খের বুকে ও দুই পাশে চর পড়ে খালে রূপ নিয়েছে। এতে নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে শুকনো মৌসুমে। অথচ এককালে এটি ছিল দক্ষিণ চট্টগ্রামের অর্থনীতির প্রাণসঞ্চালক। একসময় নৌপথে যাতায়াত ছাড়াও পণ্য নিয়ে বড় বড় নৌকা ও লঞ্চ চলত শঙ্খ দিয়ে। আশির দশকেও এটি দিয়ে চট্টগ্রাম নগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলত নৌযান।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের শঙ্খ নদের চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙনের কবলে পড়েছে। সহসা সংস্কার করা না গেলে পুরো বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশের শঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত ব্লক বসানো না হলে নদীতে বিলীন হবে গ্রামের হাজারের বেশি বসতঘর। তবে ভাঙনের ১২০০ মিটার অংশে ব্লক বসানোর বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সম্প্রতি ভারী বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে শঙ্খ নদে পানি বেড়ে যায়। এ সময় জোয়ারের তোড়ে উপজেলার জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের সাপমারা খাল থেকে খুরুস্কুল গোদারপাড় পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে অন্তত চার কিলোমিটারে ভাঙন দেখা দেয়। এর মধ্যে বেশ কিছু স্থানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এসব স্থানে পানি আবার বাড়লে বাঁধ পুরোপুরি বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের। বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের মাঝির ঘাট থেকে নাপিত খাল, মাতবর হাট থেকে শান্তির হাট ও গোদারগোড়া এবং রব্বাত মিয়ার বাড়ি থেকে মৌলভীবাজার এলাকায়। ইউনিয়নের ১৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে দুই কিলোমিটার অংশে সিসি ব্লক বসানো রয়েছে। কিছু স্থানে রয়েছে জিও ব্যাগ। অবশিষ্ট অংশে মাটির বাঁধ। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের পাশেই রয়েছে বেশ কিছু বসতঘর। নদে পানি বাড়লে এসব ঘর প্লাবিত হবে। এ ছাড়া পাড় ঘেঁষে নদী ড্রেজিংয়ের ফলে বালু সরে গিয়ে ধস হচ্ছে।
শঙ্খ নদের ভাঙনে গত এক দশকে দুই শতাধিক বসতঘর বিলীন হয়েছে। বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে আরো ১০ হাজার মানুষ। সাম্প্রতিক বন্যায় জুঁইদণ্ডী ইউনিয়ের প্রায় চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রায়পুর ও জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের জন্য ১২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের ১২০০ মিটার এবং রায়পুর ইউনিয়নের ১২০০ মিটার বাঁধ সিসি ব্লক দিয়ে সংস্কারে এসব টাকা ব্যয় করার কথা রয়েছে। অবশিষ্ট অংশের জন্যও মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উপজেলার রায়পুর ও জুঁইদণ্ডী হচ্ছে উপকূলীয় ইউনিয়ন। সাম্প্রতিক বন্যায় জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের প্রায় চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বেড়িবাঁধের কাজে অনিয়ম হওয়ায় পুরো ইউনিয়ন এখন হুমকির মুখে। অতিদ্রুত সিসি ব্লক দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না গেলে ইউনিয়নের বড় অংশ শঙ্খে তলিয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুতই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেবে।
"