ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি
ডেঙ্গুর প্রকোপ এ বছর বেড়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কা করা যাচ্ছে। কারণ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা ছাড়াও দেশ জুড়ে কয়েক দিন ধরে কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির জমে থাকা পানি এবং বন্যায় আটকে থাকা পানি পরিণত হয়েছে এডিস মশার উর্বর প্রজননক্ষেত্রে। এবার তাই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বর। চলতি মাসে এটি আরো ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বড় আকারে দেখা দেয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন আক্রান্ত হয়, মৃত্যু হয় ৯৩ জনের। কিন্তু তার চেয়েও ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার দেখা দেয় ২০১৯ সালে। সরকারি হিসাবে ওই বছর ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত হয়। মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। ইতিহাসে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ওই বছর। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রভাব বেড়ে যায়। আমরা লক্ষ করেছি, এ বছর শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির পরিমাণ কম হয়েছে। এ কারণে ডেঙ্গুর প্রভাব তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু ভাদ্রের শুরু থেকে বৃষ্টিপাত বেড়ে গেছে। ফলে জমে থাকা পানির পরিমাণও অনেক বেড়েছে। এতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা ছড়িয়ে পড়াও সহজ হয়েছে। এডিস মশা বেড়ে যাওয়া মানে হচ্ছে, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়া। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, মশা প্রজননের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হচ্ছে ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা যদি ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে হয়, তখন যেকোনো মশার প্রজনন কমে যায়। তাপপ্রবাহে মশার প্রজনন কমলেও বৃষ্টিপাত হলেই মশার প্রজনন বাড়তে শুরু করে। দেশে সাধারণত জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর- এই তিন মাস ডেঙ্গুর জন্য উচ্চঝুঁকি থাকে। এ সময়টায় বৃষ্টি হয়, মশার প্রজননের জন্যও তাপমাত্রা উপযুক্ত থাকে।
দেশের একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বন্যা হয়েছে। পাশাপাশি জমে থাকা পানি আরো অনেক দিন থাকবে। ফলে ডেঙ্গুর প্রভাব আরো লম্বা সময় থাকার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের তথ্য, বর্ষার মূল মৌসুমের পর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার নজির এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছর যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে- এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। জুলাই মাসে দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মশা নিধন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এদিকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাতও হয়েছে। বংশ বিস্তারে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে এখন দাপট দেখাচ্ছে এডিস মশা। চলতি বছরে সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে। রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। মৃত্যুও বাড়ছে। তাই ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় এখন থেকেই শুরু করতে হবে জোর তৎপরতা। ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী এডিস মশার আচরণে পরিবর্তন এসেছে। এ মশা শুধু পরিষ্কার পানিতেই নয়, দূষিত পানি, এমনকি লোনা পানিতেও বেঁচে থাকতে সক্ষম। রাতের বেলায়ও মারাত্মক সংক্রমণ ঘটায় এরা। কাজেই মানুষ সচেতন ও দায়িত্বশীল না হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা থেকেই যায়। পাশাপাশি প্রয়োজন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মহলের কার্যকর পদক্ষেপ। মশা নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদের। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এই অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মশা নিয়ন্ত্রণে উপযোগী করা ও এখানে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করা প্রয়োজন। সবাই সমন্বিতভাবে ডেঙ্গু মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ নেবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"