ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
মতামত
রাষ্ট্র এবং সরকারে ভারসাম্য চাই
রাষ্ট্র এবং সরকার সম্পূর্ণ আলাদা সত্তা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার নতুন স্বাদ লাভের যে সম্ভাবনা সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, সেই মুহূর্তে দেশের আর্থসামাজিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রের সালতামামি ও সুরতহাল পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনায় এ বিষয়টি সর্বাগ্রে উঠে আসে যে, যখন এবং যতক্ষণ রাষ্ট্র এবং সরকার সচেতনতা, যত্ন ও যৌক্তিকতায় নিজ নিজ অবস্থানে অধিষ্ঠান সম্ভব হয়েছিল, তখন সার্বিক উন্নয়ন (মানবাধিকার, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা ও সামাজিক সংহতি, সার্বভৌমত্ব এমনকি আঞ্চলিক অখণ্ডতা) টেকসই হওয়ার পথে ছিল। প্রকারান্তরে যখনই সরকার সীমালঙ্ঘন করে রাষ্ট্রকে টপকাতে, অধিগ্রহণ বা বশ্যতা স্বীকার করাতে সক্ষম বা বাধ্য করেছে, তখনই দেশ জাতি সমাজ ও অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। যার বাস্তব উদাহরণ আজ সবার সামনে দণ্ডায়মান।
সংবিধানের অধীনে বিশেষ ব্যবস্থায় ৪টি বিশেষ উপকরণ নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয়। এই উপাদানগুলো হচ্ছে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সার্বভৌমত্ব, নির্দিষ্ট জনসংখ্যা এবং জনগণের দ্বারা গঠিত সরকার। এর মধ্যে সরকার হচ্ছে, সবচেয়ে স্পর্শকাতর নিয়ামক এবং একমাত্র পরিবর্তনশীল উপকরণ। বাকি তিনটি রাষ্ট্রের এখতিয়ার এবং স্থায়ী উপাদান। সরকার হচ্ছে, একটি দেশের জনগণ এবং সম্পদের পাহারাদার, রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যবস্থাপক মাত্র। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব ছাড়া সরকারের নিজস্ব কোনো সম্পদ, শক্তি অর্জন বা সৃষ্টি অথবা দায়িত্ব থাকে না। সাধারণভাবে যাকে সবাই সরকারি সম্পদ বলে মনে করে, তা আসলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ, যার জিম্মাদার হচ্ছে সরকার। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয় সরকারের ওপর। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় (প্রিএম্বল) প্রথমেই উল্লিখিত ‘আমরা বংলাদেশের জনগণ’, সেই জনগণ যদি কোনো সরকারকে উপযুক্ত মনে না করে তাহলে সেই সরকার পরিবর্তিত হতে পারে। তবে রাষ্ট্র থাকে অপরিবর্তনীয়। রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন নেই। কথায় আছে হাকিম নড়বে কিন্তু হুকুম নড়বে না।
সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় নিয়ন্ত্রণাধীনে রাষ্ট্র পরিচালনা করে থাকে। সব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ামক শিরোমণি এমন কিছু মহাপ্রতিষ্ঠান থাকে, যা দায়মুক্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। যেমন : প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী বা সুশীল সেবক (পাবলিক সার্ভেন্ট) নিয়োগ সুপারিশের জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, রাষ্ট্রের সমুদয় হিসাব সংরক্ষণ ও নিরীক্ষা বিধায়ক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, নির্বাচন অনুষ্ঠান আধিকারিক নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগের প্রধান বিচারপতি ইত্যাদি এগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীন। কর্মচারী নিয়োগে, রাষ্ট্রের সম্পদের ব্যবহারের হিসাব সংরক্ষণ ও নিরীক্ষণে, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার নির্বাচনে এবং সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রয়োগে বিচার ব্যবস্থাপনায় প্রজাতন্ত্র বা রাষ্ট্রের একমাত্র এখতিয়ারে কোনোভাবেই সরকার হস্তক্ষেপ, প্রভাব খাটানো, অনুরাগ বা রাগের বশবর্তী হয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারবে না। এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর কোনো সরকার কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে পারে না বরং সরকারের ওপর এসব প্রতিষ্ঠানের প্রভাব প্রাধান্য থাকাই সাংবিধানিক বিধান। যদি সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে তারা দায়িত্ব পালনে প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং এভাবে দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে তাতে রাষ্ট্রের চেয়ে সরকারেরই ক্ষতি বেশি। এ চার প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আরো কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোর ওপর সরকারের প্রভাব বিস্তারের কোনো অবকাশ নেই। যেমন : দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, জনসেবাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী। সমাজে সুশাসন এবং দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় এসব সংস্থাকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আবশ্যিকতা অনস্বীকার্য। এসব নিয়ন্ত্রক সংস্থা রাষ্ট্রের পক্ষে সঠিক ভূমিকা পালনের পরিবর্তে তারা তাদের, এসব সংস্থা যদি সরকারের আজ্ঞাবাহক হয়ে পড়ে, তখন তাদের পক্ষে ‘রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে’ দায়িত্ব পালন সম্ভব হয় না, ফলে সমাজে নীতিনৈতিকতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয় না এবং এর জন্য আলটিমেটলি সরকারই আত্মঘাতী ইমেজ সংকটে পড়ে।
এটা মানতেই হবে শোষণ, বঞ্চনা আর বণ্টনবৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার বাঙালির ঐতিহাসিক মুক্তিসংগ্রামের প্রকৃত অর্জন বা বিজয় বিবেচনার জন্য বিগত পাঁচ দশকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিবেশ পরিস্থিতিতে ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ’-এর অধিকার রক্ষার প্রত্যয় ও প্রতীতি জাগ্রত রাখার ও থাকার কোনো বিকল্প ছিল না। সবার ওপর মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই। মানুষই বড় কথা। এই মানুষের দায়িত্ব বোধের দ্বারা কর্তব্যকর্ম সুচারুরূপে সম্পাদনের মাধ্যমে সমাজ সমৃদ্ধি লাভ করে। আবার এই মানুষের দায়িত্বহীনতার কারণেই সমাজের সমূহ ক্ষতি হয়। মানব ‘স¤পদ’ না হয়ে ‘সমস্যা’য় পরিণত হলে সমাজের অগ্রগতি তো দূরের কথা, সমাজ মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি সভ্যতার বিবর্তনে সহায়ক হতে হয়। মানুষের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ কিংবা মারণাস্ত্রে মানুষের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে ওঠে। মানবতার জয়গান মানুষই রচনা করে আবার মানবভাগ্যে যত দুর্গতি তার স্রষ্টাও সে। মানুষের সৃজনশীলতা, সৌন্দর্যজ্ঞান, পরস্পরকে সম্মান ও সমীহ করার আদর্শ অবলম্বন করে সমাজ এগিয়ে চলে। পরমতসহিষ্ণুতা আর অন্যের অধিকার ও দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মাধ্যমে সমাজে বসবাস করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সুতরাং সবার সহযোগিতা ও সমন্বিত উদ্যোগে সমাজ নিরাপদ বসবাসযোগ্য হয়ে ওঠে। সমাজবিজ্ঞানীরা তাই মানুষের সার্বিক উন্নয়নকে দেশ জাতি রাষ্ট্রের সব উন্নয়নের পূর্বশর্ত সাব্যস্ত করে থাকেন। সমাজের উন্নতি, অগ্রগতি ও কল্যাণ সৃষ্টিতে মানুষের সার্বিক উন্নতি অপরিহার্য শর্ত। আগে সমাজ না আগে মানুষ, এ বিতর্ক সর্বজনীন। মানুষ ছাড়া মনুষ্য সমাজের প্রত্যাশা বাতুলতা মাত্র। সুতরাং একজন মানুষের উন্নতি মানে সবার উন্নতি, সমাজের উন্নতি। একেক মানুষের দায়িত্ববোধ, তার কাণ্ডজ্ঞান তার বৈধ-অবৈধতার উপলব্ধি এবং ভালোমন্দ সীমা মেনে চলার চেষ্টা-প্রচেষ্টার মধ্যে পরিশীলিত পরিবেশ গড়ে ওঠা নির্ভর করে। রাষ্ট্রে সব নাগরিকের সমান অধিকার এবং দায়িত্ব নির্ধারিত আছে। কিন্তু দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা অধিকার আদায়ের সম্ভাবনা ও সুযোগকে নাকচ করে দেয়। পণ্য ও সেবা সৃষ্টি না হলে চাহিদা অনুযায়ী ভোগের জন্য সম্পদ সরবরাহে ঘাটতি পড়ে, মূল্যস্ফীতির ফলে সম্পদপ্রাপ্তিতে প্রতিযোগিতা বাড়ে। পণ্য ও সেবা সৃষ্টি করে যে মানুষ, সেই মানুষই ভোক্তার চাহিদা সৃষ্টি করে। উৎপাদনে আত্মনিয়োগের খবর নেই, চাহিদার ক্ষেত্রে ষোলোআনা টানাপড়েন তো সৃষ্টি হবেই। অবস্থা ও সাধ্য অনুযায়ী উৎপাদনে একেকজনের দায়িত্ব ও চাহিদার সীমারেখা বেঁধে দেওয়া আছে কিন্তু এ সীমা অতিক্রম করলে টানাপড়েন সৃষ্টি হবেই। ওভারটেক করার যে পরিণাম দ্রুতগামী বাহনের ক্ষেত্রে, সমাজে স¤পদ অর্জন ও ভোগের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রমণের ফলে একই পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সমাজে অস্থিরতা ও নাশকতার যতগুলো কারণ বিগত পাঁচ দশকে পরিলক্ষিত হয়েছে, তার মধ্যে স¤পদের অবৈধ অর্জন, অধিকার বর্জন এবং আত্মত্যাগ স্বীকারে অস্বীকৃতিই মুখ্য। এবারের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তারই তীব্র প্রতিবাদ প্রতিফলিত হয়েছে।
সুশাসনের অবর্তমানে জবাবদিহিবিহীন পরিবেশে, আয়-ব্যয় ব্যবস্থাপনায় অস্বচ্ছতার অবয়বের (পধঁংব) অন্যতম প্রতিফল (বভভবপঃ) হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি শুধু ব্যক্তিবিশেষ অর্থাৎ যে দুর্নীতি করে তাকে ন্যায়নীতিহীনতার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করে তা নয়, এর ফলে সমাজকে নেতৃত্বদান বা যেকোনো ক্ষেত্রে দৃঢ়চিত্ত অবস্থান গ্রহণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। সর্বত্র তাকে দুর্বল করে দেয়। দুর্নীতিবাজ নেতৃত্বের কারণে সমাজে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়। নেতৃত্বের এই অধোগতির প্রেক্ষাপটই প্রত্যক্ষভাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবজনিত পরিবেশ নির্মাণ করে। নেতৃত্বের কার্যকলাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকলে সমাজ সংসারে সে নেতৃত্বের অধীনে আস্থার সংকট তৈরি হয়। এটি পরস্পর প্রযুক্ত সমস্যা। স্বচ্ছতাণ্ডজবাবদিহির অনুপস্থিতির অবসরে আত্মঘাতী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যেমন যেকোনো সেবা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ। যেমন স্বেচ্ছাচারিতায়, নানা অনিয়ম ও অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে শিক্ষায়তনে শিক্ষক, সুশীল সেবক, হাসপাতালে চিকিৎসক কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মীবাহিনী নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি, তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার সবই প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়ায়। অর্থ বিনিময় ও নানা অনিয়মের কারণে যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে ভালো ও যোগ্য সুশীলসেবক, চিকিৎসক, শিক্ষক, আইন রক্ষক নিয়োজিত হতে পারে না। সুশীলসেবক, চিকিৎসক অ-মেধাবী ও অযোগ্য শিক্ষক ও আইন রক্ষকের কাছ থেকে গুণগতমান সম্পন্ন প্রশাসনিক সেবা, চিকিৎসা, শিক্ষা বা অনুসরণীয় আদর্শ লাভ সম্ভব হয় না। অবৈধ লেনদেনে নিয়োগপ্রাপ্ত অযোগ্য সেবক, চিকিৎসক কিংবা শিক্ষকের কাছে কার্যকর সেবা, চিকিৎসা ও শিক্ষা পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। যেসব নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচুর অর্থ আদান-প্রদানের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য চলে, সেখানে মেধাবী ও উপযুক্ত প্রার্থীরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। তাদের বিপরীতে নিয়োগ পায় অদক্ষ-অযোগ্য লোক। এটা একটি দিক। আরেকটি দিক, কেউ বিশেষ গোষ্ঠীর সমর্থক হয়ে এবং অবৈধভাবে অর্থ দিয়ে নিয়োগ পেলে, সে প্রথমে চাইবে গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা করে সেবা চিকিৎসা ও শিক্ষার পরিবেশকে বিপন্ন করে ওই অর্থ তুলতে। সে ক্ষেত্রে সে প্রয়োজন হলে, যেকোনোভাবে (কর্তব্য দায়িত্বহীন হয়ে, প্রশ্নপত্র ফাঁস করা থেকে শুরু করে নানা ফাঁকি ও পক্ষপাতিত্ব অবলম্বন করে) নীতিনৈতিকতা ভুলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ উঠিয়ে নেবে। তখন সে তার চাকরি বা দায়িত্বশীলতার দিকে নজর দেবে না। কোনো পদপ্রার্থী কর্তৃক কোনো সংস্থা ও সংগঠনে স্রেফ প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সময় কিংবা কোনো সংস্থায় নিয়োগ পাওয়ার সময় যে অর্থ ব্যয় করে তা নিঃসন্দেহে একটি মারাত্মক মন্দ বিনিয়োগ। এতে সমাজ দুদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমত, একজন ভালো যোগ্য প্রার্থীর জায়গায় একজন দুর্নীতিবাজ অদক্ষ লোকের অবস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং দ্বিতীয়ত, সে চিকিৎসা কিংবা লেখাপড়ার পরিবেশ বা প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে কলুষিত করতে পারে। ফলে যুগ যুগ ধরে দুষ্ট ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
এই মুহূর্তে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রাক্কালে সর্ববিধ বিবেচনায় ‘আয়না ঘরের’ নির্যাতন, নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, রাজপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিরোধ এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বেপরোয়া আচরণ, বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের মতো অর্থনীতির সমূহ সর্বনাশ সাধন, সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির প্রতিকার না পাওয়ার মতো বিষয়গুলো দিন দিনই সাধারণ মানুষকে যাতে আরো উদ্বিগ্ন করে না তোলে, কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কার্যকলাপ জবাবদিহির বাইরে চলে যাওয়ার মতো ঘটনার প্রতিকার পেতে একজন সাংবিধানিক ন্যায়পালের আবশ্যকতা উঠে আসবে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করছেন, ন্যায়পাল সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে, সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আনবে জবাবদিহির মধ্যে, একজন ন্যায়পাল থাকলে সরকারকে মুখোমুখি হতে হবে না অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিরও। চাণক্য পণ্ডিতের মতো অনেকে এটাও বলছেন, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রশাসনকে করতে পারে শক্তিশালী। কেননা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে সরকারের প্রতি আস্থা হারাতে পারে সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি এই আস্থাহীনতাই জন্ম দেয়, সামাজিক অনাচার ও রাজনৈতিক সহিংসতার।
লেখক : সাবেক সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান
"