reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ আগস্ট, ২০২৪

থানা-পুলিশ নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সবার

পুলিশের কাজ জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়া। অথচ তাদেরই এখন ভুগতে হচ্ছে নিরাপত্তাহীনতায়। নিরাপত্তার সব দায়িত্ব ছেড়ে নিজেদের জীবন নিয়েই সংকটে পড়েছে পুলিশ। থানায় শুধু হামলা নয়, করা হয়েছে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে চার শতাধিক থানায় হামলা হয়েছে। এসব থানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়ে গেছে। এসব হামলায় পুলিশের কয়েক শ যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হামলার সময় জীবন বাঁচাতে থানায় অবস্থানরত পুলিশরা যখন অসহায়, তখন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের খোঁজ মেলেনি। কোনো ধরনের নির্দেশনা পাননি তারা। তখন থানা ছেড়ে পালিয়ে যান অধিকাংশ পুলিশ সদস্য। জীবন রক্ষার জন্যই তাদের পালিয়ে যেতে হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে সহিংসতার রেশ এখনো কাটেনি। বিভিন্ন জায়গায় হামলা হচ্ছে। রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে মঙ্গলবারও পড়ে ছিল লাশ। এ অবস্থায় পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দরকার পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতা। কিন্তু মানুষের জানমালের নিরাপত্তার প্রধান দায়িত্ব যাদের, সেই পুলিশ-প্রশাসন যেন কোথাও নেই। বরং নিজেদের নিরাপত্তাসহ ৯ দফার দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন নন-ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তারা। ক্যাডার কর্মকর্তারাও কোথাও নেই। আর প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরাও মঙ্গলবার অফিস করেননি। ফলে পুলিশ-প্রশাসনের অনুপস্থিতিতে দেশ জুড়ে নিরাপত্তাহীনতায় মানুষ।

সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে, রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে চারটি বাদে সব থানাই কমবেশি আক্রান্ত হয়েছে। হামলা ঠেকাতে ও নিজেরা জীবন বাঁচাতে থানায় অবস্থান করা পুলিশ সদস্যরা ছুড়েছেন নির্বিচারে গুলি। এতে হতাহতও বেড়েছে। এসব হামলায় পুলিশেরও প্রায় শত সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন ও যাত্রাবাড়ী থানায় ১৭ জন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ সদর দপ্তরও এখন নিশ্চিত করতে পারেনি এই সংঘাতে কতজন পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। ব্যাপক লুটপাট চলেছে ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে। পুলিশ সদর দপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ও অবস্থান নেওয়া সদস্যদের অনেকে দেয়াল টপকে, কেউ পোশাক পরিবর্তন করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। আগুন দেওয়া হয় অনেক গাড়িতে। এ ছাড়া রাত ১টার পর মতিঝিল, বংশাল, পল্টন, খিলগাঁও থানায় আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। রাজধানীর আদাবর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, চানখাঁরপুল, সাভার থানা পুলিশের অন্তত অর্ধশত পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন দুর্বৃত্তদের হামলায়।

থানাগুলোয় যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তাতে আগের অবস্থায় ফিরে আসতে সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যরা যেখানে নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তারা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেবেন কীভাবে? এই পরিস্থিতি কত দিন চলবে, তাও অনুমান করতে পারছেন না কেউ। একাত্তরের পরে এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরে হামলা হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হেলিকপটারে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। অনেকেই প্রাচীর ডিঙিয়ে নিরাপদে সদর দপ্তর থেকে বের হয়ে যান। রাতে রাজারবাগেও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। দেশে সৃষ্ট এই অস্থিতিশীল পরিবেশ থেকে উত্তোরণ প্রয়োজন। সর্বত্র শান্তি-শৃঙ্খল বজায় থাকুক সেটা সবারই প্রত্যাশা। পুলিশ জনগণের নিরাপত্তায় কাজ করে। কিন্তু এখন তাদের নিজের জীবনই নিরাপত্তাহীন। এ অবস্থায় সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, দেশে শান্তি-শৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা সবাই যেন সচেষ্ট থাকি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close