খন্দকার আপন হোসাইন
আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ
হানিয়া হত্যাকাণ্ড ও ইরানের নিরাপত্তাব্যবস্থা
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার নাম মোসাদ। এই গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ইসরায়েল অতি গোপনে অনেক নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। মোসাদের একটি পুরোনো অভ্যাস হচ্ছে যেকোনো হত্যাকাণ্ড বা অন্যান্য দেশে হামলার বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা। হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ড নিয়েও নিশ্চুপ রয়েছে মোসাদ। বোঝাই যাচ্ছে, পরিকল্পনা করেই বিদেশের মাটিতে ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। কেননা গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে আজ পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট সাফল্য পায়নি ইসরায়েল।
ইসমাইল আবদেল সালাম হানিয়া ১৯৬৩ সালে গাজার আল-শাতি শরণার্থীশিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনা করেছেন গাজা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির মুসলিম ব্রাদারহুডের ছাত্র শাখার সদস্য ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। ১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠালগ্নে সংগঠনটিতে যোগ দেন তিনি। ইরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইসমাইল হানিয়া ছিলেন মূলত হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান। দায়িত্ব পালন করেছেন ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির ঊষালগ্ন থেকেই এর সদস্য ছিলেন হানিয়া। ২০১৭ সালে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন হানিয়া। তিনি খালিদ মিশালের স্থলাভিষিক্ত হন। ২০০৬ সালে ইসমাইল হানিয়াকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন ইসমাইল হানিয়া। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই মাহমুদ আব্বাসের দল ফাত্তাহর সঙ্গে হামাসের দূরত্ব বাড়তে থাকে। দুপক্ষের মধ্যে বাড়াবাড়ি রকমের বিরোধ শুরু হয়। রক্তক্ষয়ী সংঘাত ছড়িয়ে যায়। একপর্যায়ে গাজায় ফাত্তাহর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয় হানিয়াকে। পরে ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অনুগতদের সরিয়ে গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস।
ইসমাইল হানিয়া ইরানের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তেহরানে গিয়েছিলেন। সেখানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে তেহরানে তার জন্য নির্ধারিত বাড়িতে অবস্থান নেন হানিয়া। সেখানেই সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। দিনটি ছিল ৩১ জুলাই ২০২৪, বুধবার। ইরানের বার্তা সংস্থা ফারসের তথ্যানুসারে, আকাশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ হত্যাকাণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তেহরানে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ড ইরানের অভ্যন্তরে ইসরায়েলের তৎপরতা চালানোর সক্ষমতা প্রমাণ করল এই হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থার বড় একটি ব্যর্থতা। ইরানের প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের নিরাপত্তা কতটুকু জোরদার করতে পেরেছে ইরান প্রশাসন? প্রশ্ন থেকেই যায়। প্যারিসভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ ফর দ্য মেডিটেরানিয়ান অ্যান্ড মিডল ইস্টের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট অ্যাগনেস লেভালোইস বলেন, হানিয়ার হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে না পারা ইরানের জন্য খুবই বিব্রতকর।
ইসরায়েল হানিয়া হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার না করলেও ইসরায়েলকেই দোষারোপ করা হচ্ছে এবং ইরানের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইরান পাল্টা জবাব দিলে ইরান ও ইসরায়েল সরাসরি সংঘর্ষ আবারও সামনে চলে আসবে। ইরানের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, প্রতিশোধ নেওয়া আমাদের কর্তব্য। ইসরায়েল আমাদের বাড়িতে প্রিয় অতিথিকে হত্যা করে নিজের জন্য কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করেছে। তিক্ত আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও ইসরায়েল এ বছরেই উভয় দেশে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ করেছে। এপ্রিল মাসে ইসরায়েল দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে আঘাত করেছিল। ইরানও কঠোর প্রতিশোধ নিয়েছিল।
হানিয়া ২০১৯ সালে গাজা স্ট্রিপ ছেড়ে কাতারে নির্বাসিত জীবনযাপন শুরু করেছিলেন। যুদ্ধের সময় ইসরায়েল লেবানন এবং সিরিয়ায় হামাসের পরিসংখ্যানকে মূলত লক্ষ্যবস্তু করেছে। তবে ইরানে হানিয়াকে অনুসরণ করা অনেক বেশি সংবেদনশীল ছিল। ইসরায়েল অতীতে অতি গোপনে ইরানে কাজ করেছে। তাই ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের ওপর সহজেই নজরদারি করেছে ইসরায়েল। সুতরাং বছরের পর বছর ধরে ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যা অভিযান চালানোর জন্য ইসরায়েলকে সন্দেহ করা অযৌক্তিক নয়। ইরানি শীর্ষ সামরিক পরমাণুবিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে ২০২০ সালে হত্যা করা হয়। ধারণা করা হয়, ইসরায়েলের একটি বিশেষ টিম বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে একটি রিমোট-নিয়ন্ত্রিত মেশিনগান দ্বারা হত্যা করে। এবার ইরানের রাষ্ট্রীয় অতিথি ইসমাইল হানিয়াকে ইরানের মাটিতেই হত্যা করল ইসরায়েল গুপ্ত ঘাতক দল। ইরানের শক্তিশালী রেভল্যুশনারি গার্ড সতর্ক করেছে ইসরায়েলকে ইরান ও তার মিত্রদের কাছ থেকে এই অঞ্চলের কঠোর ও বেদনাদায়ক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি-সংক্রান্ত একটি প্রভাবশালী ইরানি সংসদীয় কমিটি ইসরায়েলে সরাসরি আক্রমণের বিষয়ে একটি জরুরি বৈঠক করেছে।
ইসরায়েলের ওপর সরাসরি প্রতিশোধ নেওয়ার পাশাপাশি ইরান তার মিত্রদের মাধ্যমে আক্রমণ বাড়াতে কাজ করতে পারে। হিজবুল্লাহ, হামাস, ইরাক ও সিরিয়ার শিয়া মিলিশিয়া এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ইরান-সমর্থিত জোট প্রতিরোধ অক্ষের নেতৃত্বে ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ করবে। হামাসের প্রতি সমর্থন প্রদর্শন হিসেবে হিজবুল্লাহ ইসরায়েল-লেবানিজ সীমান্ত জুড়ে ইসরায়েলের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই রকেট হামলা করছে। এই আক্রমণ এখন আরো বাড়বে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার জন্য ইসমাইল হানিয়াসহ অন্যান্য হামাস নেতাদের হত্যা করার অঙ্গীকার করেছিল ইসরায়েল। গত প্রায় দশ মাস একবারের জন্যও হামাস ইসরায়েলকে ছাড় দেয়নি। ইসরায়েল গাজায় নৃশংস স্থল আক্রমণ চালিয়েছে ঠিকই। এতে গাজার সাধারণ মানুষ মারা গেলেও হামাস সদস্যদের কিছুই করতে পারেনি ইসরায়েল। ইসরায়েলের গাজা আক্রমণের বিপরীতে হামাস দেখিয়েছে যে তাদের যোদ্ধারা নির্বিঘ্নে গাজায় কাজ করতে পারে এবং ইসরায়েলে রকেটের ভলি ফায়ার করতে পারে। তবে হানিয়ার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাদের হামলা বাড়ানোর ক্ষমতা আছে কি না তা স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েল লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইরানের মিত্র হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে টার্গেট করে হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এ ঘটনার পরপরই ইসমাইল হানিয়ার ওপর আক্রমণ স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণ করে দেয় যে ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ইসরায়েল। ইসমাইল হানিয়া মৃত্যুর আগ মুহূর্তে নতুন রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাসিমুখে হাততালি দিয়েছেন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ফটোতে দেখা গেছে, তাকে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ জঙ্গিগোষ্ঠী এবং হিজবুল্লাহর নেতাদের পাশাপাশি বসে আছেন। ইরানি মিডিয়ায় হানিয়া এবং পেজেশকিয়ানকে আলিঙ্গন করতে দেখা যায়। হামাসের অন্যতম একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হচ্ছে খলিল আল-হাইয়ান। যিনি ছিলেন হানিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। ইরানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘যে কেউ হানিয়ার স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। তবে যুদ্ধ সমাপ্তি কিংবা যুদ্ধবিরতি বিষয়ে একই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করা হবে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ একই নীতিতে চলবে’।
দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন মধ্যস্থতাকারীরা হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি নিয়ে সম্ভাবনার কথা বলে আসছে। যুদ্ধবিরতিবিষয়ক অগ্রগতির কথাও বলেছে। কিন্তু তেহরানে ইসমাইল হানিয়ার আকস্মিক হত্যাকাণ্ড হামাসকে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির আলোচনা থেকে সরে যেতে প্ররোচিত করতে পারে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের জন্য উত্তেজক পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে- এমন কোনো লক্ষণ নেই। সুতরাং গাজায় এখনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব।’ ইসমাইল হানিয়া হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা আগে থেকে অবগত ছিলাম না’।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ৩১ জুলাই, ২০২৪ রাতেই তেহরানে হামলার বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি জরুরি বৈঠক করেছে। কিন্তু জাতিসংঘের সবচেয়ে শক্তিশালী সংস্থাটি বৈঠকের পর কোনো সম্মিলিত বার্তা দেয়নি। কাউন্সিলের ১৫ জন সদস্য বিভিন্নভাবে সতর্ক করেছেন, মধ্যপ্রাচ্য অনিশ্চিত পর্যায়ে রয়েছে। ক্রমবর্ধমান সম্ভাব্য সম্পর্কে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন। সর্বোচ্চ সংযম ও কূটনীতির আহ্বান জানিয়েছে দীর্ঘস্থায়ী ফল্ট লাইন বরাবর আঙুল তুলেছে জাতিসংঘ। পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলছেন, বৈরুত এবং তেহরানে হামলা গাজা যুদ্ধবিরতির আশাকে নিরাশায় পরিণত করেছে। ইসরায়েলের এই অনর্থক শক্তি প্রদর্শন মধ্যপ্রাচ্যকে বিধ্বংসী আঞ্চলিক যুদ্ধে ঠেলে দিল।
হামাসের সামরিক শাখা একটি বিবৃতিতে বলেছে, ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ড ‘হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে এবং পুরো অঞ্চলে এর বড় প্রভাব পড়বে।’ অন্যদিকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল গাজায় তাদের ধ্বংসাত্মক অভিযান চালিয়ে যাবে।’ ৩১ জুলাই, ২০২৪ তিনি আরো জোর দিয়ে বলেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ইসরায়েল ‘সবকিছু’ অর্জন করেছে, কারণ তারা যুদ্ধ শেষ করার জন্য দেশে এবং বিদেশে চাপ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। মার্কিন মৌন সমর্থনের বিকৃত রূপই হচ্ছে নেতানিয়াহুর এই উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ। গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ এবং আক্রমণে ইতিমধ্যে ৩৯৩০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯০৯০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
ইরানের সামরিক কমান্ডাররা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র যোগে তেলআবিব ও হাইফার সামরিক লক্ষ্যস্থলগুলোয় হামলা চালানোর কথা বিবেচনা করছেন। ইরানের মাটিতে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আগেই দিয়েছিলেন ইরানি কর্মকর্তারা। এবার সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে পরিণত করতে চিরশত্রু ইসরায়েলে সরাসরি হামলার নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। শুধু ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে ইরানের প্রতি বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আস্থা হারিয়ে ফেলবে। সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ দিয়ে ইসরায়েলে আক্রমণ করে উপযুক্ত জবাব দেওয়াই হবে ইরানের জন্য সম্মানজনক। পক্ষান্তরে ইসরায়েলের আক্রমণ এড়িয়ে চলতে পারলে ইরানে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে কেউ অবান্তর মন্তব্য করতে পারবে না।
লেখক : গবেষক ও কলাম লেখক
"