reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ আগস্ট, ২০২৪

ছাত্র-জনতার জয়

ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি

শেষ পর্যন্ত জয় হলো ছাত্র-জনতার। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবি থেকে পর্যায়ক্রমে সৃষ্ট গণ-আন্দোলনে পতন ঘটল শেখ হাসিনা সরকারের। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংসদ ভেঙে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার (৫ আগস্ট) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আসুন আমরা দেশকে বাঁচাতে একসঙ্গে কাজ করি। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে ও প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে দেশকে এগিয়ে নিতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য আমি বিনয়ের সঙ্গে আপনাদের প্রতি অনুরোধ করছি। একটি সুন্দর ও সোনালি ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় আমরা এগিয়ে যাব।

গেল জুনে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাপদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। তাদের বিক্ষোভ দমনে শক্তি প্রয়োগ করতে গিয়ে যে রক্তপাত ঘটেছে, তা দেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে। গত রবিবারও সারা দেশে সহিংসতায় পুলিশসহ ৯৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সোমবারও পরিস্থিতি মোড় নিচ্ছিল সহিংসতার দিকেই। তবে সেনাপ্রধানসহ বিশিষ্টজনদের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি সেদিকে আর এগোয়নি। দুপুরে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, সে পর্যন্ত জনসাধারণকে সহিংসতা পরিহার করে ধৈর্য ধারণের আহ্বানও জানানো হয়েছিল। সার্বিক পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, দেশ ও দশের স্বার্থে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবার উদ্যোগী হওয়ার বিকল্প নেই। দেশবাসীর যে এক দফা ছিল, তা বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন দেশে সুযোগসন্ধানীরা যেন অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে সবার সতর্ক থাকা উচিত। জনসাধারণের প্রতি আমাদের অনুরোধ, এ রোষ যেন দেশের শান্তিশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটায়। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আমরাই যেন অন্যায়ের পথ না ধরি। ভুলে গেলে চলবে না, গত কদিনে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বন্দুকের নলের মুখে বুক চিতিয়ে প্রাণ দিয়েছেন আবু সাঈদ, মুগ্ধ, শাহজাহান, সবুজ আলীর মতো অকুতোভয় বীর যোদ্ধারা। তাদের আত্মত্যাগের মহিমা রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই। জনরোষে আর যেন প্রাণ ও সম্পদহানি না ঘটে, সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সবাইকেই উদ্যোগী হতে হবে। সেনাপ্রধান আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা সবাইকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অর্থসম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। লোকজন মারা যাচ্ছে। সংঘাতের পথে যাবেন না। শান্তিশৃঙ্খলার পথে ফিরে আসেন।’ সেনাবাহিনী শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ চালিয়ে যাবে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সবার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা। পরিস্থিতি শান্ত হলে কারফিউ বা জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই। আমি আদেশ দিয়েছি, কোনো গোলাগুলি হবে না। সেনাবাহিনী, পুলিশ কোনো গুলি চালাবে না। আশা করছি, এই বক্তব্যের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

এই বাস্তবতায় কোনো ঘাত-প্রতিঘাত আমরা চাই না। যত দ্রুত সম্ভব শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দেশের পরিস্থিতি স্থির করা হোক। এটাই সময়ের সবচেয়ে বড় আবেদন। আমরা আশা করি, এমন একটি যোগ্য ও নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে, যে সরকার দ্রুততম সময়ে স্বাধীন ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, যাতে ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় কোনো ছেদ না পড়ে, বিলম্ভিত না হয়, ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠায় জরুরি- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close