দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসন আমাদের কাম্য
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ দেশ। মাসখানেক আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলন এখন বহু প্রাণক্ষয় ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাসব্যাপী চলা শিক্ষার্থীদের নানা কর্মসূচির কারণে দেশে একটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলেও সেই আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ এখন আর তাদের হাতে নেই। শিক্ষার্থীদের কাঁধে ভর করে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্যই এখন দেশে একটা অস্থিতিশীল সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিন গত রবিবার সকালটা শুরুই হয় শঙ্কা, ভয় আর উদ্বেগ নিয়ে। এরপর দিনব্যাপী রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক সংঘর্ষ ও হানাহানির ঘটনা ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে শতাধিক মানুষের। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে। সেখানে একটি থানায় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে পুলিশের ১৩ সদস্যকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্যও হামলায় নিহত হয়েছেন। এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতে পুলিশের চার সদস্য ও একজন আনসার সদস্য নিহত হন। প্রশ্ন হলো, যে পুলিশ রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত; জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন, তাদের কেন হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়? তাদের কেন প্রাণক্ষয় হয়? সহিংসতাণ্ডসংঘাতে শুধু পুলিশই নয়, মারা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ, ছাত্র ও শ্রমিকও। মানুষের মৃত্যু ছাড়াও রবিবার অসংখ্য স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে- যার মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল, থানা, সরকারি স্থাপনা, তৈরি পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন কারখানা, দলীয় অফিস ও রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন। অধিকার আদায়ের অহিংস একটি আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার প্রচেষ্টায় বিরোধীরা যে সফল হয়েছে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ সংকট সরকার এখন কীভাবে মোকাবিলা করবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে সেই সংকট মোকাবিলা করতে গিয়ে কোনো জানমালের ক্ষতি হোক সেটা কাম্য নয়। মনে রাখতে হবে, চলমান পরিস্থিতির দিকে যেমন দেশের মানুষ উদ্বেগের সঙ্গে তাকিয়ে রয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক মহলও পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
দেশে এমন সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে সেটা কারোরই কাম্য ছিল না। এত প্রাণক্ষয়, এত সম্পদ নষ্ট- এটা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর। সবাইকেই মনে রাখা দরকার, এই দেশ আমার আপনার সবার। সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দেশের যে ক্ষতি হয়, সে ক্ষতি আমাদেরই হয়। এ বিষয়টি মনে রাখলে কাউকেই কোনো রকম সহিংসতায় জড়ানোর কথা নয়। দেশে এখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, দ্রুতই তা সমাধানে সব দল ও মতের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা পথ খুঁজে বের করতে হবে। এ অবস্থা আর কত দিন চলতে দেওয়া যাবে? সংঘাতময় পরিস্থিতি যত দীর্ঘায়িত হবে, তত প্রাণক্ষয় হবে, তত দেশের সম্পদ নষ্ট হবে, তত অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হবে। রক্তপাত আরো বৃদ্ধি পায় এমন সিদ্ধান্তের দিকে ধাবিত না হয়ে বরং পরিস্থিতি শান্ত করার দিকে সরকারের বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
"