প্রশ্ন ফাঁসকাণ্ড
অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত হোক
প্রশ্ন ফাঁস দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত হবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তির বিধান। তা সত্ত্বেও একের পর এক ঘটছে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা। প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, এমনকি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগও আছে। এবার উন্মোচিত হলো সরকারি কর্মকমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা। এ ঘটনায় দেশের প্রতিটি বিবেকমান মানুষ স্তম্ভিত। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো যাচ্ছে না। গত কয়েক বছরে এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেককে গ্রেপ্তারও করা হলেও এই অপরাধী চক্রকে নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না।
বলা সংগত, মেধাবী শিক্ষার্থীদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র আস্থার জায়গা বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষাব্যবস্থা এমন, নিয়মতান্ত্রিক সেখানে প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রশ্ন ফাঁস হওয়া নিয়ে দেশ জুড়ে যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে পিএসসি, তা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসকাণ্ডে গত বুধবার প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত ‘পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানরা বিব্রত’ শীর্ষক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে আগেই চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী। এরপর আবারও চাকরি নিয়েছিলেন ভুয়া তথ্যে। ১৯৯৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চাকরিরত অবস্থায় বেপরোয়া ছিলেন আবেদ আলী। পিএসসির চেয়ারম্যান জিন্নাতুন্নেসা তাহমিনা আকতার, এ টি এম আহমেদুল হক ও ইকরাম আহমেদের গাড়িচালক ছিলেন প্রশ্ন ফাঁসের হোতা আবেদ। তিনি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পিএসসিতে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে গণসংযোগও করেছেন তিনি। পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ও সদস্যরা প্রতিদিনের সংবাদকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। এ ঘটনায় তারা বিব্রত। তাদের একজন বলেছেন, বিশ্বের কোথাও এ ধরনের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে প্রশ্ন ফাঁসের নজির নেই। অন্য একজন সদস্য বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ বিধিমালা রয়েছে, সেই আচরণবিধিটা অনুসৃত হচ্ছে না। আমি আশা করব, প্রজাতন্ত্রের যারাই কর্মকর্তা-কর্মচারী, তারা সবাই আচরণবিধি অনুসরণ করবেন। কর্মচারীর আচরণ তদারকি করার দায়িত্ব যাদের ওপর রয়েছে, তাদেরও সক্রিয় হতে হবে। তাহলেই রাষ্ট্রীয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহি বাড়বে। বলা বাহুল্য, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এরই মধ্যে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তার ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো সাত থেকে আটজনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়। সরকারি কর্মকমিশন আইনে করা মামলার তদন্তও করবে সিআইডি। অন্যদিকে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে তদন্ত করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে সরকারি কর্মকমিশন।
তবে এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই, যে বা যারা প্রশ্ন ফাঁসের মতো জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজের সঙ্গে জড়িত, তারা প্রকৃতপক্ষে দেশ এবং জাতির শত্রু। এদের প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশের গোটা পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। কাজেই তদন্তের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের ছিদ্রগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সেসব বন্ধ করতে হবে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সূত্র। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো কঠোর হতে হবে। এই চক্রের সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে উপযুক্ত শাস্তি।
"