ইমাদ আহমেদ

  ০৮ জুলাই, ২০২৪

মুক্তমত

বাংলাদেশের ব্যবসায়িক দৃশ্যপট পাল্টে দিচ্ছেন প্রবাসীরা

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে তুলতে অবদান রাখছেন প্রবাসীরা। দেশে রেমিট্যান্স প্রদান ছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্জিত দক্ষতা এবং জ্ঞান দেশের ব্যবসা ও শিল্পের বিকাশকে ত্বরান্বিত করছে। ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ছে।

বাংলাদেশি প্রবাসী বৈশ্বিক অর্থনীতির ইঞ্জিন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং উপসাগরীয় দেশগুলোয় বসবাস করছে বাংলাদেশের বহু প্রবাসী। যেখানে তারা গড়ে তুলেছে নিজস্ব সম্প্রদায় বা কমিউনিটি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি বিদেশে বসবাস করেন। রেমিট্যান্স প্রেরণ করার পাশাপাশি এই প্রবাসীরা তাদের পরিবার আর সমাজের কাছে তুলে ধরে তাদের সব অভিজ্ঞতা। যার মধ্যে রয়েছে উদ্যোক্তা শ্রেণির প্রবাসীরাও। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যাদের দক্ষতা হয়ে ওঠে দিকনির্দেশনাস্বরূপ।

প্রবাসীদের ব্যবসায়িক উদ্যোগ : বাংলাদেশি প্রবাসীরা উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে বিশেষভাবে। বাংলাদেশে এসে অনেক অভিবাসীরা প্রবাসের ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী ধারণাগুলো প্রয়োগ করে। হোটেল-রেস্তোরাঁর ব্যবসার ক্ষেত্রে এমন পরিবর্তন বেশি দেখা যায়। দেশে ফিরে এসে তারা তাদের ব্যবসা শুরু করেন নতুন ধরনের রেস্তোরাঁর ধারণা এবং বিদেশি রন্ধনশিল্পের অভিজ্ঞতা নিয়ে। প্রবাসীদের প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের রেস্তোরাঁশিল্পে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। বিদেশে বিভিন্ন ধরনের রন্ধনশৈলী ও খাবারের সংস্কৃতি সম্পর্কে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠায় অভিবাসীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খাবার বা রান্নার ধরন দেশের রেস্তোরাঁয় ব্যবহার করছে। এতে খাবারে যেমন বৈচিত্র্য আসছে, তেমনি খাবারের মানও উন্নত হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে নতুন ধরনের ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে জাপানি, ইতালীয় এবং মেক্সিকানদের খাবার এবং বিচিত্র সব ক্যুজিন নিয়ে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁগুলো ফিরে আসা প্রবাসীদের উদ্যোগের একটি উদাহরণ। গুণগতমান এবং পরিষেবার নতুন মানদ- স্থাপন করতেও এই প্রতিষ্ঠানগুলো সক্ষম হয়েছে। এতে স্থানীয় ব্যবসাগুলোও তাদের সেবার মান উন্নত করতে উৎসাহিত হচ্ছে।

প্রবাসীদের জ্ঞান স্থানান্তর- দক্ষতা ও উদ্ভাবন : প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী ধারণা দেশে এসে বাস্তবায়ন করছে। প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনীতির মতো বিভিন্ন খাতে কর্মরত অভিবাসীরা নতুন তথ্য, আবিষ্কার এবং কৌশল প্রয়োগ করে থাকে, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সম্ভব। জ্ঞানের এই পরিধি বৃদ্ধির কারণে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক মানের মধ্যে ব্যবধান কমে যায়। তাই দেশের উন্নয়নের জন্য জ্ঞানের এই বিকাশ আবশ্যক।

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন : প্রযুক্তির খাতে, ফিরে আসা অভিবাসীরা তাদের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে স্টার্টআপ স্থাপন করছে। এই স্টার্টআপগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফিনটেক, ই-কমার্স এবং ডিজিটাল সার্ভিসকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অর্থনীতির আধুনিকীকরণের যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো ‘ট্যাপট্যাপ সেন্ড’-এর মতো ফিনটেক কোম্পানির প্রতিষ্ঠা, যারা বাংলাদেশের বাজারে উদ্ভাবনী আর্থিক পরিষেবা প্রদান করছে। প্রবাসীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বা পরিচালিত এমন প্রতিষ্ঠান আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে অবদান রাখছে এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য আধুনিক ব্যাংকিং সমাধান দিচ্ছে।

বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি : বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রভাব স্পষ্ট। প্রবাসী সদস্যরা বিনিয়োগকারী হয়েও কাজ করে। যেখানে তারা তাদের সম্পদকেও কাজে লাগান। এমন বিনিয়োগ মূলধনের জোগানের সঙ্গে সঙ্গে নতুন দক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। যেটি ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, প্রবাসীদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পৌঁছেছে যেটি বর্তমান সময়ের বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য সহায়ক। ২০২২ সালে, শুধু প্রযুক্তি খাতে প্রবাসীদের থেকে আসা বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে চলমান রাখতে প্রবাসীদের এমন অবদান উল্লেখযোগ্য।

স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সহায়তা : বিশ্ববাজারে প্রবাসীরা প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পাশাপাশি, পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সাহায্য করে। অনেক সফল প্রবাসী এমন নেটওয়ার্ক অথবা প্ল্যাটফরম স্থাপন করছে, যার মাধ্যমে দেশের ব্যবসায়গুলো আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে। এতে তারা বাণিজ্যিক সুবিধাসহ অন্যান্য সহযোগিতাও পাচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রভাবের কারণে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং পর্যটনের ক্ষেত্রও প্রসারিত হয়, যা অতঃপর অবদান রাখে অর্থনৈতিক উন্নয়নে। এই অভিবাসীরা বিদেশে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরছে, যার মধ্য দিয়ে পর্যটকরা আকৃষ্ট হচ্ছে এবং দেশের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠছে।

লেখক : প্রবাসীদের জন্য রেমিট্যান্স পাঠানোর অ্যাপ ‘ট্যাপট্যাপ সেন্ড’-এ কাজ করছেন

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close