অটুট থাকুক বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্ক
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন নরেন্দ্র মোদি। এবারের লোকসভা নির্বাচনে মোদির দল বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও এনডিএ জোটগতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। আর এর মধ্য দিয়ে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পর তৃতীয়বার ক্ষমতায় বসলেন নরেন্দ্র মোদি।
নরেন্দ্র মোদিকে এবার জোটবদ্ধ হয়েই সরকার গঠন করতে হয়েছে। গত রবিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে হয় মোদি সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনাকেও। এ ছাড়া ভারতের প্রতিবেশী এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। শপথ অনুষ্ঠানের পর দুই প্রধানমন্ত্রী- শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি একান্ত বৈঠকে বসেন। অত্যন্ত ‘উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে’ রাষ্ট্রপতি ভবনে দুই সরকারপ্রধানের বৈঠক হয়। এ সময় নরেন্দ্র মোদি এবং এনডিএ জোটকে নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আবারও অভিনন্দন জানানো ছাড়াও মোদিকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। ভারত বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী। দুই দেশের মধ্যে স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কও অনেক পুরোনো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক, বহুমাত্রিক এবং একে অপরের অকৃত্রিম বন্ধু। বৈঠককালে এই সম্পর্ক আরো গভীরে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। তাদের আশা, বহুমাত্রিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো বিস্তৃত ও সংহত হবে।
ভারত সফরকালে শেখ হাসিনা কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, তার ছেলে ও লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী এবং ইনডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। শেখ হাসিনা ও গান্ধী পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাস তাদের পূর্বপুরুষদের হাত ধরে তৈরি। শেখ হাসিনার বাবা বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছিল ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর খুবই আন্তরিক সম্পর্ক। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার বাংলাদেশের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধাবোধের দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তি তৈরি করে দেয়।
বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দলটিকে তার জোটসঙ্গীদের নিয়ে সরকার গঠন করে ক্ষমতায় বসতে হয়েছে। জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। সংগত কারণেই জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতে শক্তিশালী মোদি সরকারের একক ক্ষমতা নাও থাকতে পারে। সব কাজেই নরেন্দ্র মোদিকে জোটের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে- এমনটাই ধারণা করা যাচ্ছে। তবে সাবেক কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা এখনই তারা দেখতে পান না। সব মিলিয়ে মোদির দল সংখ্যায় দুর্বল হলেও নীতিতে দুর্বল না হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না- এমনটাই আশা করা যাচ্ছে। কারণ দুই দেশ দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু। নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ায় দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়াটা অনেক ভালো।
গত দশ বছরে নরেন্দ্র মোদির প্রজ্ঞাবান রাজনীতিতে ভারতীয় জনতা পার্টিও এখন আওয়ামী লীগের বন্ধু হয়ে উঠেছে। মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় সরকার তাই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ হাসিনা সরকারের অকৃত্রিম বন্ধু। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, বন্ধুপ্রতিম দেশ দুটি আগামীতে আরো নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক।
"