আলকামা সিকদার
মুক্তমত
মধুমাসের ফলও খেতে হবে সাবধানে
এখন জ্যৈষ্ঠ মাস। চারদিকে নানা ধরনের ফলের সমারোহ। ফলের গন্ধে মৌমাছিরা ভো ভো করে ঘুরছে মধু সংগ্রহে। এ মাসকে মধুমাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বাংলার ঋতুতে। তাই সারা বছরের চেয়ে এ মাসে প্রায় সব ধরনের ফলই পাওয়া যায় বাজারে। আম, লিচু, জামরুল, কাঁঠাল, জাম, আনারসসহ প্রভৃতি রসালো ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হাটবাজারসহ দেশের আনাচে-কানাচে। আর এসব ফল খেতে আমাদের একটু সাবধান হতে হবে।
কেননা বিশেষ শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিমাত্রায় মুনাফার লোভে এসব ফলে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন রাসায়নিক দিয়ে দ্রুত পাকিয়ে বাজারজাত করে। এভাবে গ্রাহকদের ঠকায়। তাই রাসায়নিকে পাকানো অপরিপক্ব বিষাক্ত ফল খেয়ে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও ঘটতে পারে বলে ধারণা অভিজ্ঞজনদের।
আমরা জানি, আম, লিচু, জাম ইত্যাদি ফল পাকলে গাছ থেকে আপনা আপনিই নিচে পড়ে যায়। আবার কোনো পাখি ঠোকর দিলেও ঝরে পড়ে। তখন শিশুরা দৌড়ে গিয়ে পড়া ফল কুড়িয়ে নেয় এবং খেয়ে ফেলে। তখনি ঘটে দারুণ বিপদ। আমাদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা, কয়েক বছর আগে উত্তরের জনপদ দিনাজপুরে লিচু খেয়ে ১১ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছিল। যার জন্য প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, গাছে কীটনাশক দেওয়া পড়া লিচু খেয়েই ওরা মারা যায়। কিন্তু পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধরা পড়ে, শিশুরা কীটনাশক দেওয়া লিচু খেয়ে মারা যায়নি। মৃত্যুর জন্য দায়ী লিচুতে থাকা ‘হাইপোগ্লাইসিন’ নামক এক ঘাতক রাসায়নিক।
শিশুরা যদি সকালে খালি পেটে লিচু খায়, তাহলে হঠাৎ করেই তার শরীরের শর্করা মাত্রা কমে যায়। আর সে সময় ‘হাইপোগ্লাইসিনের প্রভাবে পেটে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে শিশুসহ বড়রাও মারা যেতে পারে। তাই যখনই আমরা এ জাতীয় ফল খাব, অবশ্যই অতিমাত্রায় সাবধান থাকব।
মনে রাখা দরকার, যে বছর আমাদের দেশে লিচু খেয়ে ১১ জন শিশু মারা গিয়েছিল, সেই একই বছর ভারতের বিহার রাজ্যেও লিচু খাওয়ার কারণে ১৯০ জন শিশু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্র্তি হয় এবং তার মধ্যে ১২২ জনই মৃত্যুবরণ করে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধু লিচু খেলেই এমন বিপাকীয় অবস্থা ঘটে না। অন্যান্য ফল খেলেও তা হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, শীতকালে গাছে লাগানো হাঁড়িতে বাদুড়ে খাওয়া খেজুরের রস খেয়ে রিটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে এ দেশে। গ্রামের অনেকে না বুঝে কাকপক্ষী বা বন্যজন্তুতে মুখ লাগানো ফল বাড়িতে এনে সবাই মিলে দিব্যি খেয়ে ফেলেন। এটা যে কত ভয়ানক হতে পারে, কেউ চিন্তাও করেন না। বুঝতে যখন পারেন, তখন অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। এ ছাড়া বাগানে বা গাছতলায় পড়ে থাকা পাকা ফলে মাছি বসে, অনেক রকম পোকামাকড়, সাপ, বিচ্ছুু মুখ দেয়। এসব ফল কুড়িয়ে খেলে নানা অসুখ বা জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে বেশি। তাই কুড়ানো ফলমূল না খাওয়াই ভালো।
টস টসে রসালো ফলের মধুর রসে আমরা কমবেশি সবাই মুখ রঙিন করি। তবে আজকাল প্রায় সব ধরনের ফলে ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশিয়ে এমন সুন্দর ও সুস্বাদু এবং ভিটামিনসমৃদ্ধ ফলকে বিষাক্ত করে ফেলা হচ্ছে। তাই ফল আর উপাদেয় থাকে না। ফল হয় বিষময় এবং জীবনবিনাশী এক উপাদান। আর এমনটা যারা করেন, তারা নিশ্চয়ই সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও কার্যকর ব্যবস্থা প্রায়ই নেওয়া হয় না। তাই ভোক্তা বা গ্রাহকরা যদি সোচ্চার হন, তাহলেই একটা পরিবর্তন সম্ভব বলে মনে করেন অনেকেই। তাই বাজার থেকে কেনার আগেই আমাদের দেখেশুনে-বুঝে ক্রয় এবং ভক্ষণ করতে হবে।
সর্বশেষ কথা হচ্ছে, আমরা এবং আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে যখন ফল খাবে, তখন আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, যাতে শিশুরা খালিপেটে লিচুজাতীয় ফল না খায়। শুধু লিচু নয়, অন্যান্য ফল যখন খাবে, তখন নষ্ট বা পোকামাকড়ে আক্রান্ত ফল খাচ্ছে কি না, তাও নজরে রাখতে হবে। বড়দেরও এ নিয়ম মানতে হবে।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী
"