ফাতেমা ইয়াসমিন
মুক্তমত
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জরুরি
ডেঙ্গু মহামারির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সরকারকে অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। কারণ ২০২৪ সালে দেশে ডেঙ্গু মহামারি ঝড়ের চেয়েও দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করছে। এ মুহূর্তে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে অবস্থা আরো সংকটাপূর্ণ হয়ে উঠবে।
২০২৪ সালে প্রথম চার মাসে গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু দ্বিগুণ হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী গত বছর রেকর্ড পরিমাণ মানুষ ডেঙ্গু মহামারির মুখোমুখি হয়েছিল, যেখানে ১৭০ জন শিশুসহ ১৭ জনেরও বেশি মৃত্যু এবং ৩০ হাজারেরও বেশি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ফলে এখনই জোরদার পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আগামী মাসগুলোয় অবস্থা আরো ভয়াবহ হতে পারে। আমাদের জানা উচিত, এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র হচ্ছে স্থির পানি বা আবদ্ধ পানি, এই মশাগুলো উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে বেড়ে ওঠে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরো বেশি প্রবল হয়ে উঠেছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রজননের আশ্রয়স্থলে পরিণত করেছে ডেঙ্গু সংক্রমণের বোঝা।
বলা বাহল্য, যে এডিস মশা ডেঙ্গু জ্বর ছড়ায় তাকে ক্ষুদ্র ভিলেন হিসেবে কল্পনা করা হয়, যা তাদের অন্ত্রে ভাইরাস বহন করে। যখন একটি সংক্রামিত মশা একজন ব্যক্তিকে কামড়ায় এবং তারপরে অন্য কাউকে কামড়ায় তখন এটি ভাইরাস সংক্রমণ করে।
ডেঙ্গুর লক্ষণ : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লোকের কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। অনেকটা নীরব ঘাতকের মতো অলক্ষিত থাকে। যারা সাধারণত হঠাৎ উচ্চজ্বর এবং মাথাব্যথা অনুভব করেন, এর পাশাপাশি অন্য সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শরীরের জয়েন্টে ব্যথা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব ও গুরুতর ক্ষেত্রে তীব্র পেটে ব্যথা। এ ছাড়া মাড়ি থেকে রক্তপাতের মতো লক্ষণগুলো প্লাজমা ক্ষত হওয়ার সংকেত দিতে পারে। এটি একটি একটি বিপজ্জনক অবস্থা, যার জন্য অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। যদিও ডেঙ্গুজ্বরের কোনো নিরাময় নাই, তবে এই উপসর্গগুলো চিকিৎসার মাধ্যমে এবং যত্নের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ব্যথা উপশমের ওষুধ, ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধক তরল গ্রহণ এবং প্রচুর বিশ্রাম।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের ডেঙ্গুজ্বর সংক্রমণ প্রতিরোধকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। সে জন্য আমাদের নিজের বাড়ি এবং তার আশপাশের আঙিনাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশা তাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার করতে হবে এবং যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে, সেখানে লম্বা হাতার পোশাক পরতে হবে। যেহেতু এডিস মশা দিনের বেলায় কামড়ায়, তাই মশারি এ ক্ষেত্রে কম কার্যকর ভূমিকা পালন করে। মশার প্রজনন স্থান কমাতে বাড়ির ভেতরে এবং আশপাশে পানি যাতে আবদ্ধ অবস্থায় থাকতে না পারে, সেটাকে এড়িয়ে চলতে হবে।
প্রতিনিয়ত বাড়ি এবং তার আশপাশের ঝোপঝাড় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে : বাড়ি এবং তার আশপাশের ঝোপঝাড় যাতে মশার প্রজনন স্থান হিসেবে গড়ে উঠতে না পারে, সেজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং মশার ওষুধ স্প্রে করতে হবে। প্রয়োজনে মশা প্রতিরোধক কয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে, এ ক্ষেত্রে যা এই ক্ষুদ্র আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তৈরি করবে।
ডেঙ্গু মহামারি মোকাবিলায় আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তা না হলে আগামী মাসগুলোতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এক বড় ধরনরে দুর্যোগ তৈরি হতে পারে। অচিরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ডেঙ্গু মোকাবিলায় ওয়ালবাচিয়া মশামুক্ত সংক্রামক পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। দেশে সরকারও এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে। ওয়ালবাচিয়ার মতো উদ্ভাবনী পদ্ধতি ডেঙ্গুর প্রকোপ হ্রাস এবং ডেঙ্গু মৃত্যু সমাধানে একটি উল্লেখযোগ্য কার্যকর পদ্ধতি, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে আগামী দিনগুলোতে তার দুর্ভোগ পোহাতে হবে এ দেশের সাধারণ মানুষকেই।
লেখক : উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের সিনিয়র হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজার ও সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির সাবেক প্রভাষক
"