নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ারবাজারে দাম বেড়েছে

সার্বিক শেয়ারবাজারে মন্দা চললেও কারখানা বন্ধ, উৎপাদন নেই, ব্যবসায় লোকসান, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারছে না- এমন বেশকিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েই চলেছে। লোকসানে নিমজ্জিত কোম্পানির শেয়ারের দাম টানা কয়েক সপ্তাহ বাড়ার ঘটনাও ঘটেছে। স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বিনিয়োগকারীদের বারবার সতর্ক কারার পরও এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার প্রবণতা থামছে না।
স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি থাকে ‘এন’ গ্রুপে। তালিকাভুক্তির পর এক আর্থিক বছর পর হলে কোম্পানিগুলো ‘এ’, ‘বি’ ও ‘জেড’ গ্রুপে বিভক্ত হয়। এর মধ্যে ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানির স্থান হয় ‘এ’ গ্রুপে। ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানি থাকে ‘বি’ গ্রুপে। আর লভ্যাংশ না দিতে পারা কোম্পানির স্থান হয় ‘জেড’ গ্রুপে। জেড গ্রুপের কোম্পানিকে শেয়ারবাজারের পচা কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টিই ‘জেড’ গ্রুপের। বাকি চারটি প্রতিষ্ঠান ‘বি’ গ্রুপের। অর্থাৎ ভালো কোম্পানিগুলোর একটিও দাম বাড়ার শীর্ষ দশে স্থান পায়নি। এমনকি দাম বাড়ার শীর্ষ চারটি স্থানও দখল করেছে ‘জেড’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। ‘জেড’ গ্রুপের যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার শীর্ষে রয়েছে, এর মধ্যে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ারের দাম কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাড়ছে। গত সপ্তাহেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বড় অঙ্কে বেড়েছে। কারখানা ও উৎপাদন বন্ধ থাকা লোকসানে নিমজ্জিত এ কোম্পানিটি কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না।
অন্যভাবে বলা যায়, তিন সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৩ টাকা ১০ পয়সা বা ৯৮.৫০ শতাংশ। এছাড়া সম্মিলিতভাবে শেয়ারের দাম বেড়েছে ৯৫ কোটি ৬৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা। অবশ্য এক মাসের হিসাব করলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ার হার অনেক বেশি।
গত ২৩ ডিসেম্বর কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৭ টাকা ২০ পয়সা। এখান থেকেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়া শুরু হয়। ৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে এখন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২৬ টাকা ৪০ পয়সায় উঠেছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৯ টাকা ২০ পয়সা। শেয়ারের এ দাম বৃদ্ধির হার ২৬৬.৬৭ শতাংশ। শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে ১ শতাংশ নগদ এবং ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।
২০২০ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে না পারায় শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির স্থান হয়েছে পচা ‘জেড’ গ্রুপে। এমনকি কোম্পানিটি নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করে না। সর্বশেষ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান করে ১১ পয়সা।
খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ারের দাম বড় অঙ্কে বাড়লেও গত সপ্তাহে দাম বাড়ার েেত্র সব থেকে বড় দাপট দেখিয়েছে আর এক পচা কোম্পানি ডেল্টা স্পিনিং। পাঁচ কার্যদিবসে ৩৯.১৩ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে ডিএসইতে দাম বাড়ার শীর্ষস্থান দখল করেছে ২০১৭ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে না পারা এ কোম্পানিটি। আর খুলনা প্রিন্টিং রয়েছে দাম বাড়র শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে। গত সপ্তাহে ডেল্টা স্পিনিংয়ের প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে এক টাকা ৮০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৯ কোটি ৯৬ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৫ টাকা।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানাটি ২০১৭ ও ২০১৬ সালে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০১৫ সালে ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। বছরের পর বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারায় কোম্পানিটির স্থান হয়েছে ‘জেড’ গ্রুপে।
"