চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০৭ আগস্ট, ২০২৪

নিরাপত্তার অভাব

পণ্যবাহী কনটেইনার ট্রেন বন্ধ বিপাকে চট্টগ্রাম বন্দর

বাংলাদেশ রেলওয়ের পণ্যবাহী কনটেইনার ট্রেন গত ১৮ জুলাই থেকে বন্ধ থাকার পর ১ আগস্ট থেকে চলাচল শুরু করে। তবে রবিবার থেকে ফের বন্ধ রয়েছে এসব ট্রেন। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের দুই হাজারের অধিক কনটেইনার আটকা পড়েছে। দ্রুত কনটেইনার ট্রেন চালু করা না হলে ধারণক্ষমতা ও পরিচালন ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের আইসিডি ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ৮৭৬ টিইইউএস। কিন্তু ২ আগস্ট পর্যন্ত বন্দরের চট্টগ্রাম বন্দরের আইসিডি ইয়ার্ডে কনটেইনার সংখ্যা ১ হাজার ৮৪৬ টিইইউএস, যার মধ্যে ২০ ফুটের ওভারওয়েট কনটেইনারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া বহির্নোঙরে আরো ৫০০ টিইইউএস আইসিডি কনটেইনারবাহী জাহাজ বার্থিংয়ের অপেক্ষায় আছে।

ঢাকা আইসিডিগামী আমদানি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় ইয়ার্ডে কনটেইনার সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়েছে। মূলত ওভারওয়েট ওয়াগনস্বল্পতার কারণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা আইসিডিতে কনটেইনার পাঠানো না গেলে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। পাশাপাশি বাজারে কনটেইনারে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ার ঝুঁকি ছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক অপারেশনাল কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে কনটেইনার জট সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সংকট নিরসনে সহযোগিতা চেয়ে সর্বশেষ ২ আগস্ট বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্টকে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাতে বন্দরের আইসিডি ইয়ার্ডে সম্ভাব্য অচলাবস্থা কাটিয়ে কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে রেলওয়ের পক্ষ থেকে কনটেইনার ট্রেনের জন্য ইঞ্জিন বৃদ্ধির অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি ২০ ফুটের ওভারওয়েট কনটেইনার পরিবহনে সক্ষম ওয়াগন সরবরাহকরণসহ দৈনিক ন্যূনতম ২০০ টিইইউএস ওয়াগন সরবরাহ করতে বিশেষ অনুরোধ করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে টার্মিনাল ম্যানেজার (কন্ট্রোল) অতি জরুরি এ চিঠি দেন রেলওয়েকে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের পর দেশব্যাপী সহিংসতায় এ মুহূর্তে ট্রেন চালানো নিয়ে সংশয়ে রয়েছে রেলওয়ে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন দুই জোড়া ট্রেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা আইসিডিতে কনটেইনার পরিবহন করে। দুটি ট্রেনে করে প্রতিদিন বন্দর থেকে পণ্যবাহী কনটেইনার ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঢাকা থেকে দুটি ট্রেনে করে খালি কনটেইনার ও রফতানিমুখী কনটেইনার পরিবহন করা হয়। বন্দর থেকে দুটি ট্রেনে ২০ ফুটের প্রায় ১২০টি কনটেইনার নিয়ে যাওয়া হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্দরের জট কমাতে প্রতিদিন দুই শতাধিক কনটেইনার পরিবহন জরুরি হলেও বন্দরের অনুরোধ রাখতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় কনটেইনারের জট তৈরি হয়েছে। ট্রেন চালানো দ্রুত স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা রেলের রয়েছে। আপাতত নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয় উচ্চ মহল থেকে নির্দেশনা ছাড়া ট্রেন চালানো ও কনটেইনার ট্রেন বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই।’ তবে নিরাপত্তা ছাড়াই ট্রেন চলাচল শুরু হলে রেলওয়ে ইঞ্জিন বৃদ্ধির মাধ্যমে ট্রেন বাড়িয়ে বন্দরের কনটেইনার জট কমাতে সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ১৮ জুলাই থেকে বন্ধ থাকার পর ১ আগস্ট থেকে সীমিত পরিসরে যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি কনটেইনার ট্রেনও চালু করে রেলওয়ে। অর্থনীতি ও দেশের স্বার্থে পুলিশ, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় শুধু কনটেইনার পরিচালনা করে রেলওয়ে। মূলত ইঞ্জিন ও ক্রু সরবরাহ বাড়ানো হলেও নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে একটি পরিচালনা কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। বর্তমানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্টেশন এলাকায় ট্রেন, কোচ, ইঞ্জিন ও রেলের সম্পদের ওপর আঘাত আসছে। এমতাবস্থায় রেল ও পণ্যের নিরাপত্তার স্বার্থে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল চালু করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন রেলের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা।

তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ মনে করছে, দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে অর্থনীতি সংকটের মধ্যে পড়েছে। এর মধ্যে বন্দরে আমদানি হওয়া কনটেইনার আইসিডিতে নিয়ে যেতে বিলম্ব হলে সংকট আরো তীব্র হবে। এমতাবস্থায় রেলপথের বাড়তি নিরাপত্তা দিয়ে হলেও অন্তত কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচল বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close