নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০১ জুন, ২০২৩

ব্যাংকঋণ পরিশোধের সুযোগ চায় বিটিএমএ

ব্যাংকঋণের কিস্তি ও সুদ অন্তর্বর্তীকালীন হিসেবে আগামী জুন ২০২৪ পর্যন্ত ব্লক অ্যাকাউন্টে রাখার সুযোগ দেয়াসহ পরবর্তী সময়ে সহজ কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ চেয়েছে সুতা ও কাপড় উৎপাদনকারী শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংগঠনের কার্যালয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এটিসহ মোট পাঁচটি দাবি জানিয়েছে।

টেক্সটাইল খাতের বিদ্যমান সমস্যা সম্পর্কিত বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিটিএমএ। এ সময় সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদ ও অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘আমাদের মিলগুলোর উৎপাদন ও পরিচালনার অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা সৃষ্টির পেছনে আমরা যে বিষয়গুলোকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি তা হলো শুল্কমুক্তভাবে আমদানীকৃত টেক্সটাইল পণ্যের স্থানীয় বাজারে অবাধ বিক্রয়, গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ সংকটসহ অস্বাভাবিক হারে গ্যাস ট্যারিফ ধার্যে সৃষ্ট সমস্যা এবং রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) অনিয়মিত বরাদ্দ, ইডিএফ ঋণের পরিমাণ হ্রাসসহ প্রয়োজনীয় ডলারের অভাবে কাঁচা তুলা আমদানির জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক এলসি ওপেন না করায় সৃষ্ট সমস্যা।’ব্যাংকঋণ ব্লক অ্যাকাউন্টে রাখা প্রসঙ্গে বিটিএমএ পরিচালক সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় মাস আগে আমরা যে এলসিগুলো করেছিলাম সেটি ইডিএফ বা ইউপাস হোক সবগুলোর কনভার্সন রেট ছিল ৮৫ টাকা। আর ছয় মাস পর আমরা পেমেন্ট করেছি ১০৭ টাকা। ধরেন, আমার কাছে ১০০ টাকা ক্যাপিটাল ছিল। সেখান থেকে ৩০ শতাংশ চলে গেছে ডলার কনভার্সন রেটে, আমার কাছে আছে এখন ৭০ টাকা। এ ৭০ টাকা দিয়ে আমি যখন আমদানি করতে যাই আমার লাগবে ১০৭ টাকা। আমার ৭০ টাকা থেকে চলে গিয়ে পকেটে আছে ৩০ টাকা। গত ছয় বা আট মাসে ডলার কনভার্সন রেটের কারণে আমাদের একেক জনের ক্যাপিটাল লস করেছি শত কোটি টাকা। এ টাকা আমরা ব্যাংকে দেব কীভাবে? ১০০ টাকা ক্যাপিটাল নিয়ে বা এ টাকা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে যে লোকটা শুরু করেছিল তার কাছ থেকে ৩০ টাকা চলে গেছে ডলার কনভার্সন রেটের কারণে। ব্যাংকের হিসাবে আমাদের দেনা ১০০ টাকা কিন্তু আমার কাছে প্রকৃতপক্ষে ৭০ টাকা। এ ৭০ টাকা দিয়ে আমি যখন আবার কাঁচামাল প্রকিউরমেন্ট করতে যাই, আমাদের তখন দিতে হয় ১১০ টাকা। ৩০ টাকা লস করছি, আবার ৩০ টাকা বেশি লাগছে। আমার পকেটে এখন সত্যিকার অর্থে ক্যাপিটাল আছে ৪০ টাকা। ৪০ টাকা দিয়ে আমি শিল্প চালাব নাকি ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করব। এ কারণেই আমরা বলছি এ দুঃসময়ে ব্যাংক আমাদের কাছ থেকে পয়সা কামিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘?আমরা যারা এখানে বসে আছি গত পাঁচ বছরে হিসাব করলে ব্যাংককে আমরা কত টাকা প্রফিট দিয়েছি ইন্টারেস্টের নামে। হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়েছি ইন্টারেস্টের নামে। আজ আমি বিপদগ্রস্ত, অসহায় বিনিয়োগকারী। আমার পাশে ব্যাংক থাকবে। আমরা ব্যবসা করছি ৩০:৭০ ইকুইটি রেশিওতে। অর্থাৎ ব্যাংকের বিনিয়োগ ৭০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ আমার। ব্যাংক লোকসানের হিসাব নেবেন না, ওনারা লাভের হিসাব নেবেন। আমাকে লাভ-লোকসান দুটিই হিসাব করতে হয়। আমি যখন লাভ করেছিলাম তখন ব্যাংকের প্রিন্সিপাল ও ইন্টারেস্ট। আমি যখন লস করছি তখনো ব্যাংকে প্রিন্সিপাল ও ইন্টারেস্ট দিতে হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আমরা যে প্রস্তাবটি দিয়েছি সেটা যুক্তিসংগত প্রস্তাব।’

মোহাম্মদ আলী খোকন জানান, তীব্র ডলার সংকট সত্ত্বেও এ ঈদুল ফিতরসহ সব সময়ে বন্ডেড ওয়্যারহাউজের মাধ্যমে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক আমদানীকৃত বিদেশী সুতা, কাপড় বিশেষত পাকিস্তানি ড্রেস-ম্যাটেরিয়ালসের দেশের বড় বড় শহরের শপিংমলগুলোয় অবাধে বিক্রয়ের কারণে স্থানীয় মিলগুলোর অবস্থা আজ অত্যন্ত সংকটপন্ন। শুধু পাকিস্তান থেকেই নয় এর পাশাপাশি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন থেকে আসা সুতা, কাপড়সহ বিভিন্ন ড্রেস-ম্যাটেরিয়ালসও বিভিন্ন নগরী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন মোকামে তথা ঢাকার ইসলামপুরের বিক্রমপুর প্লাজায় (কোতোয়ালি থানার পাশে) নারায়ণগঞ্জ, আড়াইহাজার, গাউসিয়া, মাধবদী, বাবুরহাট, নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যাপকভাবে বিক্রয় হয়েছে এবং হচ্ছে। আমরা জানি না সরকার এর মাধ্যমে কী পরিমাণ রাজস্ব পেয়েছে।

গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ সংকটসহ অস্বাভাবিক হারে গ্যাস ট্যারিফ ধার্যে সৃষ্ট সমস্যা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অস্থিতিশীল মূল্যে তুলা আমদানি, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সৃষ্ট প্রডাকশন লস, গ্যাস ব্যবহার না করে অতিরিক্ত গ্যাস বিলও অতিরিক্ত নিরাপত্তা জামানত দেয়ার কারণে স্পিনিং মিলগুলোর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বলে আমরা মনে করি।’

বিটিএমএর দাবিগুলোর মধ্যে আছে টেক্সটাইল খাতের স্পিনিং ও উইভিং মিল, যারা রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের প্রয়োজনীয় সুতা ও কাপড় দীর্ঘদিন সরবরাহ করে আসছে, বর্তমান সংকট বিবেচনায় নিয়ে ও বিদ্যমান সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বিটিএমএর রফতানিমুখী স্পিনিং মিলে তৈরি সুতার ন্যূনতম একটি অংশ ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির মাধ্যমে সংগ্রহের বিধান করা। বন্ডের মাধ্যমে আমদানীকৃত সুতা, কাপড় ও ড্রেস-ম্যাটেরিয়ালসের অবৈধ বিক্রয় বন্ধের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, মাধবদী, বাবুরহাট, নরসিংদী, বেলকুচি ও সিরাজগঞ্জের মোকামগুলোতে এখন থেকেই ঘন ঘন তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করতে হবে এবং এরূপ অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা।

দাবির মধ্যে আরো আছে ইডিএফ সুবিধা অব্যাহত রাখাসহ কাঁচামাল আমদানির জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এলসি খোলা অব্যাহত রাখা, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত, বর্ধিত গ্যাস ট্যারিফের ওপর অতিরিক্ত নিরাপত্তা জামানত আদায় থেকে বিরত থাকাসহ গ্যাসের মূল্য সমন্বয়। ব্যাংকঋণের কিস্তি ও সুদ, অন্তর্র্বতীকালীন তথা আগামী জুন ২০২৪ পর্যন্ত ব্লক অ্যাকাউন্টে রাখার সুযোগ প্রদানসহ পরবর্তী সময় থেকে সহজ কিস্তিতে প্রদানের সুবিধা প্রদান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close