এম সাইফুর রহমান, নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম)

  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

নাগেশ্বরীর চরাঞ্চলে বেড়েছে ভুট্টা চাষ

ন্যায্যমূল্যের দাবি কৃষকদের

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী ধূসর চরাঞ্চল এখন সবুজে সবুজ। সেখানে বেড়েছে ভুট্টার আবাদ। এবার ভুট্টার আবাদ ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে ভুট্টার সবুজ গাছে ছেয়ে গেছে চারদিক। ভালো ফলনের আশায় কৃষকের চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক।

ভুট্টাখেতের চোখ জুরানো সবুজ দৃশ্য চোখে পড়ে উপজেলার নাগেশ্বরী পৌরসভা, কালীগঞ্জ, কচাকাটা, নুনখাওয়া, নারায়ণপুর, কচাকাটাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বালুময় চরাঞ্চলগুলোতে।

স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রতিবারই এসব জমিতে ধান, গম, সরিষা, তিষি, পাট, আখ ইত্যাদি ফসল চাষ করলেও বিকল্প হিসেবে ভুট্টা চষে করছেন তারা। বন্যা-পরবর্তী সময়ে উপজেলার বিভিন্ন নদণ্ডনদীর জেগে ওঠা পলিযুক্ত চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষে মাঠে নেমেছেন। কম খরচ ও অল্প পরিচর্যায় অধিক লাভ হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

চরাঞ্চলীয় এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভুট্টাখেতের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে যেন সবুজ চাদর বেছানো। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ঠিকমতো সেচ, কীটনাশক ও সার প্রয়োগসহ সুষ্ঠু পরিচর্যা করে আসছেন নিয়মিত। কম খরচ ও অল্প পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা এ শস্যটি বিঘাপ্রতি ফলন হয় ৩০ মণের ওপরে। মণপ্রতি বিক্রি হয় ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত।

কৃষকরা আরো জানান, ভুট্টার দানায় খই (পপকর্ন), রুটি, গো-খাদ্য এবং মাছ ও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। এর গাছ ও মোচা জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। ফলে এর চাহিদা বেড়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শস্যটি চাষাবাদ করা গেলে বিঘাপ্রতি এর ফলন বেড়ে যাবে।

উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের নারায়ণপুর ইউনিয়নের কালারচরের আইনুল হক জানান, তিনি প্রতি বছরই ভুট্টা চাষ করেন। এ বছরও চাষ করেছেন প্রায় ৮ বিঘা জমিতে। এখন ভুট্টার গাছে গাছে ফুলের কুঁড়ি আসতে শুরু করেছে। ফলন ভালো হওয়ার আশা করছেন তিনি। এ ছাড়া নামারচর এলাকার জাবেদ আলী চাষ করেছেন ৩ বিঘা জমিতে। মাঝের চরের জয়নাল মিয়া চাষ করেছেন ২ একর, পাখি ওড়ার চরের রহমত আলী চাষ করেছেন ১০ বিঘা। এ ছাড়া ভুট্টা চাষের আবাদি জমি সম্প্রসারিত হচ্ছে বেরুবাড়ী ইউনিয়নের চর বেরুবাড়ী, চর কাপনা ও নুনখাওয়া ইউনিয়নের বাহুবল এলাকসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে। এদের কেউ জমি বর্গা নিয়ে আবার কেউ লিজ নিয়ে মিরাকেল, ডন, টাইগার, সুপার শাইন ইত্যাদি জাতের ভুট্টা চাষ শুরু করেছেন। প্রতি একরে বীজ লেগেছে ২ কেজি। বর্তমানে গাছগুলো বেশ হৃষ্ট-পুষ্ঠ ও তরতাজা বলে ফলন ভালো হওয়ার আশা তাদের।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিএডিসি থেকে সরবরাহ করা ভুট্টা উপজেলার ৭৫০ জন কৃষকের প্রত্যেককে ২ কেজি ভুট্টা, ২০ কেজি ডিএপি সার এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার হোসেন জানান, উপজেলার দুধকুমর, ব্রহ্মপুত্র, সঙ্কোশ নদণ্ডনদীর চরাঞ্চলে কৃষকরা বেশ উৎসাহের সঙ্গে ভুট্টা চাষ করছেন। তাই কীভাবে এর ফলন ভালো হয় সেদিকটা লক্ষ রেখে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close