আনন্দ-উৎসবে চট্টগ্রাম সমিতির ঐতিহ্যবাহী মেজবান ও মিলনমেলা
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠে শনিবার (২৬ নভেম্বর) দিনব্যাপী চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকার উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী ‘মেজবান ও মিলনমেলা-২০২২’ আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন পেশা, শ্রেণি ও নানা বয়সি প্রায় ৩০ হাজার লোকের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে কলেজের আঙিনা। শুধু চট্টগ্রামের বাসিন্দা নয়, বিভিন্ন জেলার লোকও অতিথি হিসেবে মেজবানে অংশগ্রহণ করেন। অষ্টাদশ শতক থেকে পুরোপুরি চট্টগ্রামে চালু হয় এ মেজবানির আয়োজন। শত বছরের অধিক পুরোনো চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকা চট্টগ্রামবাসীর এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতি দুই বছর পর পর মেজবানের আয়োজন করে থাকে। হাজার হাজার লোকের পদচারণায় এ মেজবান অনুষ্ঠান উৎসবের আমেজে পরিণত হয়; চেনা-জানা পরিচিতি অনেকের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, নিজেদের আঞ্চলিক ভাষায় মন খুলে কথা বলে পরস্পরের সঙ্গে; এ যেন হয়ে ওঠে ঢাকার বুকে একখণ্ড চট্টগ্রাম।
সারা দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বারের বলিখেলার আদলে বলিখেলার অয়োজন। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের আটজন বলী এ খেলায় অংশ নেন। ২০২২ সালে জব্বারের বলী খেলার চ্যাম্পিয়ন টেকনাফের জীবন বলী এখানেও অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বলীখেলার উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। উদ্বোধনী ভাষণে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মেজবান ও বলীখেলা চট্টগ্রামের ঐতিহ্য হিসেবে সুদীর্ঘকাল থেকে পরিচিতি। ঢাকায় অবস্থানরত চট্টগ্রামবাসী এ ঐতিহ্যকে ধারণ করে প্রতিবারের মতো আজকের এ মেজবান ও মিলনমেলা আয়োজন করেছে, তবে এবারের মেজবানে বলী খেলার আয়োজন করে ঢাকায় অবস্থানরত চট্টলাবাসীকে আলাদা আনন্দ ও পরিচিতি দিয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং ভাষাগত স্বাতন্ত্র্য, চট্টগ্রামবাসী এ সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে সবসময় লালন ও ধারণ করে থাকে। এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনে সমিতির জীবন সদস্যরাসহ আয়োজক কমিটির সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন জামালের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন হিরোর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক মুখ্যসচিব ড. মো. আবদুল করিম। এছাড়া সরকারের সচিব, আইজিপি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী, প্রকৌশলী, বিচারপতি, আইনজীবী, চিকিৎসক, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাসহ নানা পেশাজীবী অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা ‘চট্টলশিখা’র মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং প্রতিবারের মতো এবারও সমাজের নানাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য পাঁচজন বিশিষ্টজনকে ‘চট্টগ্রাম সমিতি পদক’ প্রদান করা হয়েছে। পদকপ্রাপ্তরা হলেন শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী (মরণোত্তর); শিল্প, বাণিজ্য ও সমাজকল্যাণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু (মরণোত্তর); চট্টগ্রাম সমিতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আবু আলম চৌধুরী; ‘সাহিত্যে’ অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আহমদ মমতাজ (মরণোত্তর) এবং কৃষি সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শাইখ সিরাজকে সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে আবু আলম চৌধুরী অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন। এরপর ঐতিহ্যবাহী মেজবানি খাবার দিয়ে সব অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশীয় এবং চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান পরিবেশন করা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
"