চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

২০২১-২২ অর্থবছর

২৯ প্রতিষ্ঠানের হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি

দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৮০ শতাংশেরও বেশি সম্পন্ন হয় সমুদ্রপথে। ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা এ বাণিজ্যে নির্ভর করেন মূলত চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর। প্রধান এ সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত অর্থবছর সক্রিয় ছিল ১৯ হাজার সরকারি-বেসরকারি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। তবে এককভাবে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি আমদানি করেছে, বেসরকারি খাতে এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ২৯টি। এর মধ্যে রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানিও।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে (বাণিজ্যিক খাতে) ৯ কোটি ২৩ লাখ টন পণ্য খালাস হয়েছে, যার মোট আমদানি মূল্য ৪ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৫৯ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। তবে ৫ বছর আগে (২০১৬-১৭ অর্থবছর) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে শুল্কায়ন করে খালাস নেওয়া হয়েছিল ৬ কোটি ১ লাখ টন। ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের এ পণ্য আমদানিতে তখন সরকার রাজস্ব পেয়েছিল ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। আমদানি মূল্য বিবেচনায় আনলে পাঁচ বছরের ব্যবধানে শুল্কযুক্ত পণ্যে আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

বেসরকারি খাতে হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেছে আবুল খায়ের গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, বিএসআরএম, টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, কেএসআরএম, আকিজ গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, পিএইচপি গ্রুপ, জিপিএইচ গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, ট্রান্সকম, প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেড, এসএস পাওয়ার লিমিটেড, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওয়ালটন, কনফিডেন্স গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, এএ ইয়ার্ন মিলস, ইউনাইটেড ময়মনসিংহ পাওয়ার ও বিইওএলের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোই মূলত এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তালিকাটিতে বিদেশি কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ইউনিলিভার, রেনাটা লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, আরপিসিএল-নরিনকো ও রিলায়েন্স বাংলাদেশ এলএনজি অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের আমদানি করেছে বেসরকারি খাতের এমন শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঁচটিই আবুল খায়ের গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং লিমিটেড ৬ হাজার ১২০ কোটি টাকা, আবুল খায়ের স্ট্রিপ প্রসেসিং লিমিটেড ২ হাজার ৭১০ কোটি, শাহ সিমেন্ট লিমিটেড ২ হাজার ৪৭০ কোটি, আবুল খায়ের মিল্ক প্রডাক্টস লিমিটেড ১ হাজার ৪৫৮ কোটি ও আবুল খায়ের লিমিটেড ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে।

গত অর্থবছরে আবুল খায়ের গ্রুপ মোট আমদানি করেছে ৮৭ লাখ টন পণ্য, যার শুল্কায়িত মূল্য ১৫ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। আমদানির বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ৩ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। গত পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে আবুল খায়ের গ্রুপের আমদানি দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।

আবুল খায়ের গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মো. খুরশেদ আলম ফারুক বলেন, আমদানিপর্যায়ে রাজস্ব প্রদানে অন্যবারের মতো এবারো আমরা সবচেয়ে বেশি রাজস্ব প্রদান করেছি। দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিলে ১০ হাজার ৮৬০ কোটি টাকার ২১ লাখ ৮৩ হাজার টন কাঁচামাল আমদানি করেছে ইস্পাত খাতের নেতৃত্বে থাকা বিএসআরএম।

বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলী হুসাইন বলেন, বিশ্ববাজারে মেল্টিং স্ক্র্যাপের দুষ্প্রাপ্য সত্ত্বেও আমদানি অব্যাহত রেখেছি, যাতে কোনো সংকট তৈরি না হয়।

চট্টগ্রামের টিকে গ্রুপের দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠান শবনম ভেজিটেবল ও সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড মিলে ৫ হাজার ১৯২ কোটি টাকা মূল্যের ৫ লাখ ৩৬ হাজার টন খাদ্যপণ্য আমদানি করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জিপিএইচ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড ৩ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকার ৭ লাখ ৪৮ হাজার টন ইস্পাত কাঁচামাল ও ক্রাউন সিমেন্ট পিএলসি ১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকার ২৬ লাখ ৬৮ হাজার টন সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি করেছে। গত অর্থবছরে কেএসআরএম স্টিল প্লান্ট লিমিটেড ৩ লাখ ৭৩ হাজার ১১৭ টন কাঁচামাল আমদানি করেছে, যার মূল্য ১ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। পিএইচপি গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পিএইচপি নফ কনটিনিউয়াস গ্যালভানাইজিং মিলস লিমিটেড ১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার দেড় লাখ টন শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১ হাজার ২৮ কোটি টাকার ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টন কাঁচামাল আমদানি করেছে প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেড।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close