আহমেদ জামিল, সিলেট

  ০৩ জুলাই, ২০২২

সিলেটে গরুর দাম চড়া

সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর এখনো পানি পুরোপুরি নামেনি, ঠিক হয়নি যোগাযোগব্যবস্থা। এর মধ্যেই এসে গেছে ঈদুল আজহা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে বাইরের জেলা থেকে গরু আসতে পারছে না। এছাড়া গো-খাদ্যের দামও চড়া। ফলে শুরুতেই কোরবানির পশুর হাটে গরুর দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ ঘনিয়ে এলে গরুপ্রতি দাম আরো বাড়বে, গড়ে অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বাড়তে পারে।

এদিকে বন্যায় সিলেট নগরের সবচেয়ে বড় পশুর হাট কাজিরবাজারের একাংশ এখনো পানিতে নিমজ্জিত। নগরের বাইরের সবকটি উপজেলায় অনুমোদিত পশুর হাটগুলোর অবস্থাও একই। এখনো বসেনি জেলা প্রশাসন অনুমোদিত কোরবানির পশুর হাট। ধীরগতিতে পানি নামায় কবে হাট বসবে কেউ তা বলতে পারছেন না। এ অবস্থায় পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেটে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে প্রাণিসম্পদের। কোরবানির পশুসহ গৃহপালিত পশু, মহিষ ও ছাগল-ভেড়া বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। মারা গেছে বেশ কয়েক হাজার পশু। এতে আসন্ন ঈদে কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা পূরণ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে জনমনে। তবে সেই শঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অফিস। তাদের দাবি সিলেট বিভাগে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ৪ লাখ পশু।

সরেজমিনে সিলেটের সবচেয়ে বড় পশুর হাট কাজিরবাজার ঘুরে দেখা গেছে, হাটে পশুর তুলনায় ক্রেতা কম। প্রতি বছর এ সময় পশুর হাট জমজমাট হয়ে যেত। এবার পুরো ব্যতিক্রম। তবে ঈদ ঘনিয়ে আসছে। কোরবানির পশু কম থাকায় চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের আগে দাম আরো বাড়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তারা। দাম বাড়ানোর জন্য গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন বড় খামারিরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরুর খাবারের দাম বেশি। এক বস্তা ভুসির দাম ছিল ১ হাজার টাকা। এখন দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়।

কাজিরবাজারের ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ বলেন, শুধু দাম বৃদ্ধিই নয়, বন্যার কারণে সিলেটের বাইরে থেকে গরু আসছে না। বন্যায় স্থানীয় অনেক খামারির গরু মরে গেছে। কারো গরু ভেসে গেছে। তাই এবার গরুর দাম খুব চড়া। ঈদের আগে আরো বাড়তে পারে। হাটে প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন না। অপরদিকে, ছোট খামারিরা ন্যায্যমূল্যে গরু বিক্রি করতে পারছেন না।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সিলেটের তথ্য মতে, আসন্ন ঈদুল আজহায় সিলেট বিভাগে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ২ লাখ ৪৩ হাজার ৮০৩। এসব পশু কেনাবেচার মাধ্যমে কোরবানি হবে। এছাড়া এবার ঘর থেকে আরো দেড় লক্ষাধিক পশু কোরবানির কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে সিলেটে এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত প্রায় ৪ লাখ পশু। তবে গত বছর ঈদুল আজহায় সিলেট বিভাগে কোরবানি হয়েছিল ৪ লাখ ৮ হাজার ৯৮০ পশু। সেই হিসাবে সিলেট বিভাগে এবার ১৫ হাজার পশুর ঘাটতি রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, সিলেট বিভাগে ১৪ হাজার ৯৭১ জন খামারির কাছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৮০৩টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এর মধ্যে ৯১ হাজার ৩৭৫টি ষাঁড়, ২৭ হাজার ৪৬৬টি বলদ, ২৩ হাজার ৪৯০টি গাভি, ৮ হাজার ৯৩৬টি মহিষ, ৬২ হাজার ৬১৩টি ছাগল ও ২৯ হাজার ৯২৩টি ভেড়া রয়েছে। এ ছাড়া পারিবারিকভাবে আরো ১ লাখ ৫০ হাজার ৪০৩টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

জেলাভিত্তিক হিসেবে সিলেট জেলায় ৭৭ হাজার ৩৯২টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড়, বলদ ও গাভি আছে ৪৩ হাজার ৭৭৪টি, মহিষ ৪ হাজার ৬৫২টি ও ছাগল-ভেড়া ২৮ হাজার ৯৬৬টি। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ জেলায় ৬৯ হাজার ২৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে গরু ৪৬ হাজার ৮২৮টি, ১ হাজার ৭৯৪টি মহিষ, ২০ হাজার ৬৬৭টি ভেড়া-ছাগল রয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলায় ৩৯ হাজার ১৩টি কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে গরু ১৯ হাজার ৪১৭টি, মহিষ ১ হাজার ৭৫৭টি, ছাগল-ভেড়া আছে ১৭ হাজার ৮৩৯টি। হবিগঞ্জ জেলায় ৫৮ হাজার ১০৯টি কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ষাঁড়, বলদ ও গাভি আছে ৩২ হাজার ৩১২টি, মহিষ আছে ৭৩৩টি ও ছাগল-ভেড়া আছে ২৫ হাজার ৬৪টি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও সিলেটে কোরবানির পশুর ঘাটতি হবে না। সিলেটের বাইরে থেকে প্রতিবারই প্রচুর সংখ্যক পশু সিলেটে আসে। তবে বন্যা পরিস্থিতির কারণে এ বছর কোরবানিও কমতে পারে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে এ বছর কোরবানির জন্য সিলেট জেলায় ৫১টি অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে সিলেট নগরে ৬টি ও জেলার ১৩ উপজেলায় ৪৫টি। এছাড়া জেলা ও নগরের স্থায়ী পশুর হাটগুলোতে কোরবানির পশুর হাট বসবে। অনুমোদনের বাইরে কোথাও কোরবানির পশুর হাট বসানো হলে জেলা প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, নগরের আটটি স্থানে পশুর হাট বসাতে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে ছয়টি হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে বন্যার কারণে এবার হাট বসতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close