যশোর প্রতিনিধি

  ২৬ জুন, ২০২২

পদ্মা সেতু : বেনাপোল-নওয়াপাড়ায় ঘটবে বাণিজ্য সম্প্রসারণ

পদ্মা সেতুকে ঘিরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনীতির চাকা গতিশীল হবে। এ উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সুফল ভোগ করবে যশোর জেলাও। জেলায় দুটি বন্দর রয়েছে। একটি হলো সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল, অন্যটি নওয়াপাড়া নৌবন্দর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে সম্প্রসারিত হবে বন্দর দুটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম। তবে এক্ষেত্রে পূর্ণ বাণিজ্যিক সুবিধা পেতে বন্দর দুটির সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে অভিমত ব্যবসায়ীদের।

বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বন্দরটি দিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২০ লাখ ১১ হাজার ৬ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬০৬ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। আমদানি ও রপ্তানি থেকে বন্দর ও কাস্টমস রাজস্ব আয় করেছে কমপক্ষে আট হাজার কোটি টাকা। পদ্মা সেতু চালুর পর আমদানি-রপ্তানির গতি আরো বাড়বে। উল্লম্ফন দেখা দেবে রাজস্ব আয়ে।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর যাতায়াত সহজ হবে। কম সময়ের মধ্যে আমদানিকৃত পণ্য ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। এ কারণে বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানির গতি আরো বাড়বে। তবে বন্দরের সক্ষমতা না বাড়লে প্রত্যাশামাফিক সুফল মেলবে না।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে ২০ লাখ টনের বেশি পণ্য আমদানি হয়। কিন্তু বন্দরে রাখার সক্ষমতা রয়েছে ৪৭ হাজার টন। ফলে ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আনতে পারছেন না। বন্দরের পরিধি বাড়লে পদ্মা সেতুর সুফল দৃশ্যমান হয়ে উঠবে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মহসিন মিলন বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল সহজ হবে। এতে আমদানিকারকরা আগ্রহী হবেন। আশা করছি বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্য কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। তবে সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্য সম্পাদনে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে ব্যবসায়ীদের।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর জানান, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার কাজ চলমান। প্রয়োজনে আরো ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এসব উন্নয়নকাজ শেষ হলে এ বন্দরের বাণিজ্যে আরো প্রসার ঘটবে। বেনাপোলের মতো নওয়াপাড়া নৌবন্দরেও পদ্মা সেতুর সুফল মিলবে বলে মনে করছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা। নওয়াপাড়া নৌবন্দরের উপপরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের ৩৭ কিলোমিটারে ৩০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরো কাজ করা হচ্ছে। কেননা পদ্মা সেতু চালুর পর এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্য সুবিধা দ্বিগুণ হবে। সেতুকে ঘিরে যশোর ও মোংলায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান হবে। তখন মোংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি বাড়বে। আর মোংলায় জাহাজ বাড়লে নওয়াপাড়া নৌবন্দর ব্যবহার বাড়বে।

বন্দরটিতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৬৮টি জাহাজে ৭ লাখ ৮৪ হাজার টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ হাজার ৫টি জাহাজে ১০ লাখ ৩৩ হাজার ৭০০ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৩০০ জাহাজে ১১ লাখ ৫০ হাজার ৩০০ টন পণ্য এসেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য এসেছে ১৫ লাখ টন। এ বন্দর দিয়ে মূলত সার, সিমেন্ট, কয়লা, গমসহ বিভিন্ন পণ্য আসে। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক হুমায়ুন কবীর কবু বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে অর্থনৈতিক ব্যাপক উন্নয়ন হবে। সড়কপথে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছাতে কম সময় লাগবে। এতে বেনাপোল ও নওয়াপাড়া নৌবন্দরে বাণিজ্য সুবিধা বেশি পাওয়া যাবে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে যশোর রেলপথ নির্মাণ ও গ্যাস লাইন স্থাপন করার দাবি জানাচ্ছি। এটি বাস্তবায়ন হলে জেলার অর্থনীতি পূর্ণতা পাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close