সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

  ১৬ মে, ২০২২

ইউরোপের পথে সাতক্ষীরার আম

অষ্টমবারের মতো ইউরোপের কয়েকটি দেশে যাবে সাতক্ষীরার আম। গোবিন্দভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি রয়েছে রপ্তানির ওই তালিকায়। এজন্য বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম চাষে জেলার ৫০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১৪টি কোম্পানি এসব আম রপ্তানি করবে।

জানা গেছে, আবহাওয়া এবং পরিবেশগত কারণে দেশের অন্যসব জেলার আম পাকার আগেই সাতক্ষীরায় পাকতে শুরু করে। এজন্য দেশের বাজারে সবার আগে এখানকার আম বিক্রি শুরু হয়। বিগত কয়েক বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার আমচাষিরা। এবারও আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় আমের ফলন কম হয়েছে। দাবদাহ ও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় আকার কিছুটা ছোট হয়েছে। তবে এ বছর জেলায় ঝড় না হওয়ায় গাছের ফল গাছে রয়েছে। এতেই খুশি চাষিরা।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ৪ হাজার ১৫২ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত ৫ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার আমচাষি রয়েছেন। চলতি মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০ হাজার টন। আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মোড় এলাকার আম ব্যবসায়ী বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ১২টি বাগান কিনেছিলাম। বাগানের অধিকাংশ গাছে আম আসেনি। প্রয়োজন অনুযায়ী বৃষ্টি হয়নি। সে কারণে অনেক আম ঝরে গেছে। আম আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে। দামও খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। গোপালভোগ ২০০০ থেকে ২২০০ টাকায় মণ বিক্রি করছি।’

পৌরসভার রাজার বাগান এলাকার আমচাষি আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ খুবই বিপদে আছি। প্রতি বছর কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের ওপর হানা দিচ্ছেই। বিগত দুই-তিন বছর আম পাড়ার আগ মুহূর্তে ঝড়ের কারণে সিংহভাগ নষ্ট হয়েছে।’

জেলার আমচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক বছর মহামারি করোনা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জেলার আমচাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আবহাওয়া খারাপ থাকায় চলতি মৌসুমে ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তারপরও চাষির ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, ‘এ বছর আবারও কয়েকটি কোম্পানি বিদেশে আম রপ্তানির জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা তাদের মান অনুযায়ী আম সরবরাহ করতে পারব। বেশ কয়েকটি বাগানে তাদের নিয়ম অনুযায়ী আমের পরিচর্যা করা হয়েছে।’

সুলতানপুর বড় বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনায় ৫ মে থেকে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগসহ সাতক্ষীরার স্থানীয় জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। সাতক্ষীরা বড়বাজারের প্রতিটি আমের আড়তে শুধুমাত্র আগাম জাতের আম বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২৮০০ টাকায়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১৬ তারিখের পর থেকে হিমসাগর বাজারে উঠবে।’

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টন। বাজে আবহাওয়ার কারণে জেলার অধিকাংশ গাছে মুকুল আসেনি। সে কারণে এবার ফলন অনেক খারাপ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘চলতি মৌসুমে বিদেশে রপ্তানির জন্য ৫০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বেশকিছু বাগানে বিষমুক্ত, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধবভাবে আম উৎপাদন করা হয়েছে। এবার ১৪টি কোম্পানি বিদেশে আম রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে। ইতালি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, জার্মানি ও ইংল্যান্ডের চেইন শপগুলোতে সাতক্ষীরার আম যাবে। এরই মধ্যে কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে জেলা কৃষি বিভাগের বৈঠক হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ১০০ টন আম রপ্তানি করা হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close