নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ মে, ২০২২

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে ইপিবির উদ্যোগ

বাংলাদেশকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় থাকা ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছিল চীন। কিন্তু এ সুবিধা সত্ত্বেও আগের তুলনায় কমছে বাংলাদেশের রপ্তানি। অন্যদিকে অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশের পণ্য আমদানির ২৫ শতাংশই হয় চীন থেকে। ফলে দুদেশের বাণিজ্য ঘাটতির আকারও অনেক বড়। এ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে সরকার। রপ্তানি হ্রাসের কারণ ও করণীয় নির্ধারণে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।

বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানি হ্রাসের কারণ ও করণীয় নির্ধারণে এরই মধ্যে সভার আয়োজন করেছে ইপিবি। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন রপ্তানি পণ্যের খাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সহ ঢাকা চেম্বার, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ চায়না চেম্বারের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।

সভা আয়োজনে ইপিবির চিঠিতে বলা হয়, গত পাঁচ অর্থবছরের রপ্তানি আয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, চীনে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাচ্ছে এবং বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীন সরকার কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য প্রদত্ত ৯৭ শতাংশ পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা বাংলাদেশ ভোগ করলেও চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি আশানুরূপ নয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্সের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র আল মামুন মৃধা বলেন, চীনের বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি করাসহ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চীনে রপ্তানি করতে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় এমন বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে এসেছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বিশাল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিশ্ববাজার থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। এর মধ্যে চীন থেকে এসেছে ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বিপরীতে একই সময়ে চীন সারা বিশ্ব থেকে ২ হাজার ৪০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। যেখানে বাংলাদেশ পাঠাতে পেরেছে মাত্র ৬০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ২০ শতাংশ পণ্য চীন থেকে আমদানি করলেও দেশটিতে রপ্তানি করে ১ শতাংশেরও কম। দুদেশের মধ্যে এমন বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যে চীন ২০২০ সালের জুলাই থেকে ট্যারিফ লাইনের আওতায় ৯৭ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চালু করে। সম্প্রতি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে সেটি বাড়িয়ে ৯৮ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে দেশটির সরকার। এ সুবিধা পাওয়ার পরও প্রচলিত পণ্য দিয়ে চীনের বাজার দখল নেওয়া খুব কঠিন হবে বলে মনে করছে বেইজিংয়ে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল উইং। এ বিষয়ে সম্প্রতি উইংয়ের পক্ষ থেকে গত মার্চে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেওয়া হয়।

চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল উইংয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চীনের বাজার বিশাল হলেও প্রতিযোগিতামূলক। স্থানীয় উৎপাদন-সরবরাহকারীদের সঙ্গে ভালো মানের বিদেশি কোম্পানিই এখানে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। তবে ভোক্তাদের আচরণগত ধরন অনুসারে বলা যায়, উচ্চহারে মূল্য সংযোজিত পণ্যের চাহিদা দেশটিতে ক্রমেই বাড়তে থাকবে। বর্তমানে চীনের বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য মানসম্মত পণ্য ও অনলাইনে এসব পণ্যের ব্যাপক হারে প্রচারণা থাকতে হবে। দেশটির প্রধান ২০ আমদানি পণ্যের একটিও রপ্তানি করে না বাংলাদেশ। তাই প্রচলিত পণ্য দিয়ে চীনের বাজার কোনোভাবেই দখল করা সম্ভব নয়। গত কয়েক বছর বাংলাদেশ থেকে চীনের বাজারে রপ্তানি করা প্রধান ১০টি পণ্যের পর্যালোচনামূলক তথ্য তুলে ধরেছে দূতাবাসের কমার্শিয়াল উইং। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পাঁচটি প্রচলিত পণ্যের তিনটিরই রপ্তানি কমেছে। অন্যদিকে পাঁচটি অপ্রচলিত পণ্যের সবগুলোরই রপ্তানি বেড়েছে। প্রচলিত ওভেন পোশাক, নিটওয়্যার, মৎস্য এবং ক্রাস্টেসিয়ান ও মোলাস জাতীয় পণ্য ক্রমান্বয়ে কমছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীনে ওভেন পোশাক রপ্তানি হয় ২৮ কোটি ২৫ লাখ ডলারের, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে। আর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৫২ লাখ ডলারের। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিটওয়্যার রপ্তানি হয় ২২ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরে রপ্তানি কমে দাঁড়ায় ১২ কোটি ৫৭ লাখ ডলারে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪ কোটি ৫১ লাখ ডলারের। মৎস্য, ক্রাস্টেসিয়ান ও মোলাস জাতীয় পণ্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীনে রপ্তানি হয় ৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি কমে দাঁড়ায় ১ কোটি ৪২ লাখ ডলারে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি হয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ ডলারের।

কমার্শিয়াল উইং বলছে, ২০২১ সালে চীনের আমদানির ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশই এসেছে চীন নিয়ন্ত্রিত তাইওয়ান থেকে। এ ছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, চিলি, ইতালি, কানাডা, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পণ্য আমদানি করে চীন। তবে বর্তমানে চীনের প্রধান ২০ আমদানি পণ্যের একটিও বাংলাদেশ রপ্তানি করে না। তাই চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা খুব বেশি নয়। তবে চীন একটি বড় বাজার হওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি করা পণ্যের চাহিদা রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close