বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
৬ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৫০৯ কোটি টাকা
বেনাপোল কাস্টম হাউসে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০৯ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা, সেখানে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। তবে ২০১৯-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের চেয়ে ১০১ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। ওই সময় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে পণ্য আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪ টন। আর রপ্তানি হয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩ টন। গত বছরের চেয়ে আমদানি কিছুটা কমলেও রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি হয়েছিল ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৩২ টন এবং রপ্তানি হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৬ টন।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর আমদানি পণ্য থেকে ৬ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। বছরটিতে রাজস্ব আয়ের গ্রোথ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি হলেও ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা।
এ ছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি ১১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮-তে ঘাটতি ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। তবে চলতি বছরে এত বড় অঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা আদায় নিয়ে সংশয় রয়েছে সব মহলে। তারা বলছেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে কাস্টমস ও বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া এত বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় সম্ভব না। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় ব্যবসায়ীরা চাহিদা মতো পণ্য আমদানি করতে পারেন না। এতেই বারবার রাজস্ব আয়ে ধস নামছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, চলতি অর্থবছরে এত বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। একদিকে করোনা ও অন্যদিকে উন্নত অবকাঠামোর অনুপস্থিতি। এ ছাড়া ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে পার্কিংয়ের নামে রয়েছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হয়রানি। যে কারণে অনেক ব্যবসায়ী এই বন্দর ছেড়ে চলে গেছেন। এ রকম পরিস্থিতি না থাকলে এ বন্দর থেকে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ রাজস্ব আয় কাস্টমসের পক্ষে সম্ভব।
আমদানিকারক রেজোয়ান আহমদ মুরাদ বলেন, ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে পার্কিংয়ের নামে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে। একটি ট্রাক দেশে প্রবেশ করতে এক মাস সময় লেগে যাচ্ছে। আবার ওপারে প্রতিদিন ট্রাক প্রতি ২ হাজার রুপি দিতে হয়। এতে বেনাপোল দিয়ে আমদানি কমিয়ে অন্য বন্দরে যেতে বাধ্য হচ্ছি।
এদিকে বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা সন্তোষজনক না। আমদানিকারকদের নিজ দায়িত্বে বন্দরে পণ্য পাহারা দিতে হয়। সেখানে প্রায়ই পণ্য চুরি ও রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসব কারণে পরপর ৮ থেকে ৯ বছর ধরে রাজস্ব আহরণ সম্ভব হচ্ছে না।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় অনিশ্চিত। বেনাপোল কাস্টমসে আমদানি পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষণে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেই। এতে খুলনা ও ঢাকা থেকে পরীক্ষা করাতে মাসের অধিক সময় লেগে যায়। ফলে দীর্ঘ সময় পণ্য চালান আটকা পড়ে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বেনাপোল কাস্টম হাউসে বিএসটিআই ও বিএসআইআরের শাখা স্থাপনের দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়েছেন।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘বন্দরের ধারণক্ষমতা ৫০ হাজার টন। কিন্তু এখানে সব সময় পণ্য থাকে কমপক্ষে দেড় লাখ টন। জায়গার অভাবে ভারতীয় ট্রাক বন্দরে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকছে। রোদণ্ডবৃষ্টিতে মূল্যবান পণ্যসামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বৈধ সুবিধা পেলে এ বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে মনে করেন তিনি।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে এরই মধ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ, নতুন পণ্যগার নির্মাণ ও বন্দর এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নয়নকাজ করা হয়েছে। পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এসব উন্নয়নকাজ সমাপ্ত হলে এ বন্দরে বাণিজ্য আরো গতি বাড়বে বলেও জানান তিনি। বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, কালিতলায় আমদানিবাহী গাড়ি আটকে টাকা আদায়, বেনাপোল বন্দরে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে না। কয়েক বছর ধরে রাজস্বর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
"