নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ জানুয়ারি, ২০২২

নগদ সহায়তার আওতায় আসছে ডিটারজেন্ট ও মেলামাইন পণ্য

রপ্তানি বাড়াতে উৎসাহ প্রদানে ভর্তুকি খাতে নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে সরকার। এরই অংশ হিসেবে এবার ডিটারজেন্ট রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশপত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা প্রাপ্তিতে যে জটিলতা বিদ্যমান, তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির মতো মেলামাইন পণ্য রপ্তানির বিপরীতেও ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি শাখার অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জীবাণুনাশক, কীটনাশক, ডিটারজেন্ট ও পরিচ্ছন্নতা পণ্যসামগ্রী রপ্তানির বিপরীতে ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। তবে এক্ষেত্রে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন পর্যালোচনা করে দেখেছে, জীবাণুনাশক, কীটনাশক ও পরিচ্ছন্নতা পণ্য সামগ্রীর স্থানীয় উৎপাদন ব্যয় ও রপ্তানি মূল্য বিবেচনা করলে এসব পণ্যে প্রণোদনা দেওয়ার দরকার নেই। তবে ডিটারজেন্ট রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে মত দেয় বাণিজ্যবিষয়ক গবেষণাধর্মী রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি। এরপর বৈঠকে ডিটারজেন্ট রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া একই বৈঠকে প্লাস্টিক পণ্য এবং পেট বোতল ফ্লেক্সের যে রপ্তানিকারকরা নগদ সহায়তা পেতে চান, তারা শুধু বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সনদ দেখালে প্রণোদনা পাবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মতামত এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করেছে, রপ্তানি আয় বাড়াতে ডিটারজেন্ট রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া যুক্তিযুক্ত। তাই এক্ষেত্রে নগদ সহায়তা প্রদানের বিষয়টি কার্যকর করতে সম্প্রতি তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে সুপারিশ আকারে পাঠিয়েছেন। এখন সার্বিক বিষয়টি বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে অর্থ বিভাগ। তিনি আরো বলেন, প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা প্রাপ্তিতে কিছু সমস্যার কথাও বলেছেন সংশ্লিষ্টরা, সেগুলো নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।

সাধারণত বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে থাকে। তবে এদের মধ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিক পণ্যের পাশাপশি পেট বোতল ফ্লেক্সও উৎপাদন ও রপ্তানি করে। প্লাস্টিক পণ্য এবং পেট বোতল ফ্লেক্স রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেয় সরকার। কিন্তু সহায়তা প্রদান-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা পেট বোতল ফ্লেক্স রপ্তানি করলে তাদের বাংলাদেশ পেট বোতল ফ্লেক্স ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদ গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছে। তাই নগদ সহায়তা প্রাপ্তিতে পদ্ধতিগত জটিলতায় পড়েছেন পেট বোতল ফ্লেক্স রপ্তানিকারী প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের যেসব সদস্য প্লাস্টিক পণ্য এবং পেট বোতল ফ্লেক্স রপ্তানি করবে, তারা অ্যাসোসিয়েশনের একটি সনদ ইস্যু করলেই নগদ সহায়তা ওঠাতে পারবে। এ সংক্রান্ত সুপারিশ অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আরো আলোচনা হয়, প্লাস্টিক পণ্যের এইচএস কোডেই মেলামাইন পণ্য রপ্তানি হলেও এ পণ্য রপ্তানির বিপরীতে কোনো নগদ সহায়তা পান না রপ্তানিকারকরা। তাই মেলামাইন পণ্য রপ্তানিতেও ১০ শতাংশ নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়টিও সুপারিশ আকারে অর্থ বিভাগে পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা প্রাপ্তিতে নতুন করে আরো চারটি খাত যুক্ত করেছে সরকার। খাত চারটি হলো দেশে উৎপাদিত চা, বাইসাইকেল ও বাইসাইকেলের যন্ত্রাংশ, এমএস স্টিল পণ্য ও সিমেন্ট শিট। প্রতিটি পণ্য রপ্তানির বিপরীতে ৪ শতাংশ সহায়তা দেওয়া হবে। নতুন এ চার পণ্য যুক্ত হওয়ার ফলে এখন নগদ সহায়তাপ্রাপ্ত রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা ৪২। এসব পণ্য রপ্তানিকারকদের ন্যূনতম ২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিভিন্ন হারে নগদ আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে সরকার। গত অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বাড়িয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছর রপ্তানি ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close