খুলনা ব্যুরো

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২২

রূপসা পাড়ের ২৮ গ্রামে টমেটোর বাম্পার ফলন

খুলনার রূপসা পাড়ের চিত্র বদলে দিয়েছে জনপ্রিয় সবজি টমেটো। এ উপজেলার ২৮টি গ্রামে মাছের ঘেরের পাড়ের প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে এ ফসল। ফলন ভালো হওয়ায় দুই শতাধিক কৃষক পরিবারে বিরাজ করছে খুশির আমেজ।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র বলছে, রূপসা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাছের ঘেরের পাড়ের জমিতে এ বছর ব্যাপক টমেটো চাষ হয়েছে। ঘেরের পাড়ে সারি সারি গাছে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে কাঁচা-পাকা টমেটো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দাম এবং ন্যায্যমূল্যে টমেটো বিক্রি করতে পেরে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।

এই সূত্র জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার দুর্জ্জনীমহল, ডোমরা, চন্দনশ্রী, ভবানীপুর, পেয়ারা, জাবুসা, আমদাবাদ, দেবীপুর, নৈহাটী, সামন্তসেনা, তিলক, খাজাডাঙ্গা, স্বল্পবাহিরদিয়া, আলাইপুর, পুটিমারি, আনন্দনগর, পিঠাভোগ, গোয়ালবাড়িরচর, সিঁন্দুরডাঙ্গা, নারিকেলী চাঁদপুর, ডোবা, বলটি, নতুনদিয়া, ধোপাখোলা, গোয়াড়া, শিয়ালী, চাঁদপুর ও বামনডাঙ্গা গ্রামের মাছের ঘেরের পাড়ে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে এ বছর টমেটো চাষ হয়েছে। তবে ঘাটভোগ ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে।

এদিকে, ঘেরের পাড়ে উৎপাদিত টমেটো কেনাবেচার জন্য গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে টমেটোর মৌসুমি আড়ত। স্থানীয়ভাবে এ আড়তকে ‘গালা’ বলা হয়। তাই টমেটো বিক্রি করতে সাধারণত পরিবহন খরচ লাগে না। কৃষক খেত থেকে টমেটো তুলে এনে আড়তে বিক্রি করেন। টমেটো চাষে নারী ও বেকার যুবকসহ স্কুল-কলেজের ছাত্রদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ট্রাকযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে এখানকার টমেটো।

উপজেলার আনন্দনগর গ্রামে চাষি জুম্মান লস্কর বলেন, এ বছর মৎস্যঘেরের পাড়ে দেড় বিঘা জমিতে মিন্টু সুপার নামক হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ করেছি। এতে বীজ, সার, মাদা তৈরি, শ্রমিক ও কীটনাশক বাবদ প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরই মধ্যে ৫০ মণ টমেটো (প্রতি মণ এক হাজার টাকা দরে) স্থানীয় আড়তে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আরো প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। পুটিমারি গ্রামের কৃষক কাজী রফিকুল ইসলাম জানান, ঘেরের পাড়ে এক বিঘা জমিতে বিপুল প্লাস জাতের টমেটো চাষ করতে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে এবং দামও ভালো পাচ্ছি। ৮০০ টাকা মণ দরে এ পর্যন্ত ২০ মণ টমেটো ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এরকম দাম থাকলে আরো ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।

জুম্মান লস্কর ও রফিকুল ইসলাম ছাড়াও আনন্দনগর গ্রামের নূরু শেখ, চাঁন মিয়া, নাসিম মোল্লা, হামজা মোল্লা, শাহীন শেখ, মুরাদ লস্কর, শানু লস্কর, হামিদুল বিশ্বাস, জিল্লুর লস্কর, তোহা লস্কর, হেলাল, সাগর খান, কালাম শেখ, ইছা শেখ, রসুল শেখ, ছাত্তার মোল্যা, আজহারুল ইসলাম, হাফিজ মোল্যা, আসাদ ও ফারুক মোল্যাসহ দুই শতাধিক কৃষক মাছের ঘেরের পাড়ে হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।

কৃষকরা জানান, টমেটো একটি লাভজনক ও অর্থকরী সবজি। বর্তমানে আমাদের দেশে হাইব্রিড জাতের অনেক টমেটো চাষ হয়ে থাকে। এ জাতের টমেটোর ফলন অনেক বেশি। এটি স্বল্প সময়ের সবজি। জাতভেদে চারা রোপণের ৫০ থেকে ৬০ দিন পর থেকেই ফল তোলা যায়। ধানের তুলনায় টমেটো চাষে ২/৩ গুণ লাভ হয়। অল্প পুঁজিতে লাভ বেশি হওয়ায় মৎস্য ঘেরের পাড়ে টমেটো চাষ বেড়েছে।

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসের আলাইপুর ব্লকের উপণ্ডসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান বলেন, বসতবাড়ি কিংবা মাঠের চেয়ে ঘেরের পাড়ে টমেটো চাষ করে অধিক ফলন পাওয়া যায়। অন্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি লাভ হওয়ায় মৎস্যঘেরের পাড়ে টমেটো চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষক। ঘেরে শুধু মাছ ও ধান চাষ করে একসময় যাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটত, ঘেরের পাড়ে টমেটো ও অন্য শাকসবজি চাষে এখন তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, ঘেরের পাড়ে কম খরচে টমেটো চাষ করে লাভবান হওয়ায় এ উপজেলার প্রতিটি ব্লকের উপণ্ডসহকারী কৃষি কর্মকর্তা চাষিদের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এসব কৃষককে প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে এ বছর কৃষকরা ঘেরের পাড়ে টমেটো চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন। এতে কৃষকের মধ্যে ঘেরের পাড়ে টমেটো চাষে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close