চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২৪ নভেম্বর, ২০২১

জ্বালানি পরিবহন-বিপণন

ট্যাংক-লরির ভাড়া ও কমিশন বাড়ানোর চাপে বিপিসি

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। মালিকদের ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন ভাড়াও বাড়ানো হয়। আর এটিকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে এবার জ্বালানি তেল পরিবহনে ট্যাংক, লরি, বিপণন পাম্প মালিকরা ভাড়া ও কমিশন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। এসব দাবিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে চিঠি দিয়েছেন তারা। নভেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুশিয়ারিও দিয়েছে সংগঠনটি।

সারা দেশের প্রায় চার হাজার পেট্রোল পাম্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউশন এজেন্ট ৪ নভেম্বর বিপিসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়। ১৫ দফা দাবি-সংবলিত ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ নভেম্বর এ বিষয়ে বিপিসির ঢাকা লিয়াজোঁ অফিসে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিপিসির তিন বিপণনকারী কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে পাম্প মালিক ও ট্যাংক-লরি মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে কমিশন ও ভাড়া না বাড়ানোসহ একাধিক সমস্যার বিষয় তুলে ধরেন। বৈঠকের পর এক সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত সংগঠনগুলোর দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবির বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিপিসি। কিন্তু ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সরকার যানবাহন ও পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত যানবাহনের ভাড়াও বাড়িয়েছে। কিন্তু জ্বালানি পরিবহনে নিয়োজিত যানবাহনের ভাড়া বাড়ায়নি। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পাম্প মালিকরা ন্যূনতম একটি কমিশনে জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে। বর্তমান বাজারমূল্যের তুলনায় কমিশনের পরিমাণ খুবই নগণ্য হওয়ায় অনেক পাম্প মালিক লোকসানে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ অবস্থায় ঘোষিত সময়ের মধ্যে জ্বালানি বিপণনের কমিশন ও জ্বালানি পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো না হলে কর্মসূচিতে যাবে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নাজমুল হক এ বিষয়ে বলেন, ২০১৩ সালে বিপিসি জ্বালানি তেল বিপণনের ক্ষেত্রে কমিশন মূল্য বাড়িয়েছে। তাও আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কমিশন নির্ধারণ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের বাড়তি কমিশন ছাড়াই পেট্রোল পাম্প মালিকরা জ্বালানি সরবরাহ করে আসছেন। এতে অনেকেই পুঁজি হারানো ছাড়াও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছেন না। সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে ট্যাংক-লরিগুলো লোকসান দিয়ে জ্বালানি তেল পরিবহন করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাড়া বৃদ্ধি করা না হলে জ্বালানি পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম ও যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধির পর ট্যাংক-লরির ভাড়া ও জ্বালানি বিপণনে কমিশন বাড়ানোর প্রস্তাব দেন পাম্প মালিকরা। ১৪ নভেম্বর বিপিসির সঙ্গে জ্বালানি তেল বিপণনে কমিশন ও ট্যাংক লরির মাধ্যমে জ্বালানি পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে মালিক সমিতি সব ধরনের জ্বালানি বিপণনের ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ (ফ্ল্যাট কমিশন) করার প্রস্তাব করে। বর্তমানে অকটেন ও পেট্রোল বিক্রির ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ ও ডিজেল বিক্রির ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ কমিশন পান পেট্রোল পাম্প মালিকরা। ২০১৩ সাল থেকে এ হারে কমিশন পাচ্ছেন তারা। এর আগে পেট্রোল ও অকটেনের ক্ষেত্রে লিটারপ্রতি ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ডিজেল কেরোসিনের ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমিশন পেতেন পেট্রোল পাম্প মালিকরা। এছাড়া বৈঠকে সারা দেশে জ্বালানি তেল পরিবহনে ট্যাংক-লরি ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। বর্তমানে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৯ হাজার লিটার জ্বালানি পরিবহনে ভাড়া দেওয়া হয় লিটারপ্রতি ৫০ পয়সা। ২০১৬ সালে সংগঠনটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিপিসি নতুন ভাড়ার এ রেট কার্যকর করেছিল। কিন্তু বর্তমানে সরকার ডিজেলের লিটারপ্রতি দাম ১৫ টাকা বাড়ানোর ফলে জ্বালানি পরিবহনের ট্যাংক-লরি মালিকদের বিপুল পরিমাণ লোকসান হলেও বিপিসি এখন পর্যন্ত কোনো ভাড়া বাড়ায়নি। নতুন প্রস্তাবে ট্যাংক-লরির ভাড়া ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত লিটারপ্রতি ৭৫ পয়সা এবং পরবর্তী দূরত্বের জন্য আনুপাতিক হারে ভাড়া কার্যকর করার দাবি জানানো হয়।

বৈঠকে উপস্থিত বিপিসির জ্বালানি বিপণনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলেও জ্বালানি পরিবহনে নিয়োজিত ট্যাংক-লরির ভাড়া বাড়ানো হয়নি। তাছাড়া প্রায় এক দশক আগে জ্বালানি বিপণনের সঙ্গে যুক্ত পাম্প মালিকদের কমিশন বাড়ানো হয়েছিল। জ্বালানির দাম বাড়ানোর কারণে পাম্প মালিকদের বিনিয়োগও বেড়েছে। কিন্তু ২০১৩ সালের কমিশন দিয়ে বর্তমানে বৃহৎ বিনিয়োগের একটি পাম্প পরিচালনা করা কঠিন। বিষয়টি নিয়ে বিপিসিও ঐকমত্য পোষণ করেছে। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা ছাড়া ভাড়া ও কমিশন বাড়ানো সম্ভব নয়। যার কারণে সংগঠনগুলো ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিলেও তাদের দাবি মানতে সময় লাগবে।

জানতে চাইলে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বণ্টন ও বিপণন) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি তেল বিপণনকারী পাম্প ও ট্যাংক লরিসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কমিশন ও ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। ভাড়া ও কমিশন বৃদ্ধির বিষয়টি চলমান ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমরা সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছি। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে তাদের দাবি পাঠানো হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close