বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

অটোমেশনে বেনাপোল বন্দর

কাস্টমসের পর এবার অটোমেশন সেবার আওতায় এলো যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর। প্রায় দেড় বছর পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের পর এবার পূর্ণাঙ্গরূপে অটোমেশন সেবার আওতায় এসেছে দেশের সবচেয়ে বড় বন্দরটি। ফলে আমদানি পণ্যের সব তথ্য এখন কম্পিউটার ডেটাবেইজে এন্ট্রি হচ্ছে।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, দেশের স্থলপথে সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্ব দাতা বেনাপোল স্থলবন্দর। ১৯৭২ সাল থেকে এ বন্দরের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক যাত্রা। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিরাপদ বাণিজ্য নিশ্চিত করতে অনেক আগেই অটোমেশন পদ্ধতি চালু করেছে বেনাপোল কাস্টমস। তবে বন্দরে অটোমেশন না থাকায় কাজের সমন্বয়ে ব্যবসায়ীদের বেশ বেগ পেতে হতো।

বাণিজ্যিক গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বেনাপোল বন্দরে পরীক্ষামূলক অটোমেশন কার্যক্রম চালু হয়। চলতি মাসে এসে পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়ায় এ অটোমেশন সেবা পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বন্দরের প্রশাসনিক ভবন, রাজস্ব দপ্তর, এন্টি শাখা, ওয়্যারহাউস সব জায়গায় অটোমেশন পদ্ধতিতে কার্যসম্পাদন হচ্ছে।

আমদানি পণ্য বন্দরে প্রবেশ থেকে শুরু করে রাজস্ব পরিশোধ পর্যন্ত সব তথ্য থাকছে কর্মকর্তাদের নজরে। মোবাইলের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরাও ঘরে বসেই তাদের পণ্যের অবস্থান জানতে পারছেন। ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক বন্দর এলাকায় প্রবেশের পর মালামালের সঠিকতা নিরূপণ, স্কেলে ওজন, শেড বা ইয়ার্ডে পোস্টিং, পণ্য বন্দরে আনলোড করে ভারতীয় গাড়ি ফিরে যাওয়ার যাবতীয় তথ্য অটোমেশনের কারণে সহজেই নির্ণয় করা যাচ্ছে। ফলে সুফল পেতে শুরু করেছেন বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, প্রতি বছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় ৫ হাজার কোটি টাকা। তবে এই বন্দরটি এত দিন আধুনিকায়নে পিছিয়ে ছিল। আগে শুল্ক ফাঁকি থেকে শুরু করে একজনের পণ্য অন্যজন নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন সে সুযোগ আর নেই। বন্দর অটোমেশন আওতায় আসায় ব্যবসায়ীরা ঘরে বসেই মোবাইলে সার্বক্ষণিক জানতে পারছেন আমদানি পণ্যের তথ্য। এতে বাণিজ্যিক নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা বেড়েছে।

বেনাপোল স্থলবন্দর ওয়্যারহাউস সুপার ধুননঞ্জয় বার্মা বলেন, আমদানি পণ্যের তথ্য আগে খাতা কলমে এন্ট্রি করে তথ্য সংগ্রহ করা হতো। এখন সম্পূর্ণ কম্পিউটারে ডেটাবেইজ এন্ট্রিতে অটোমেশন সুবিধার মাধ্যমে দ্রুত তথ্য দেওয়া যায়। বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এসব তথ্য চোখের পলকে দেখতে পারছেন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, কাস্টমসের পাশাপাশি বন্দর অটোমেশন হওয়ায় বাণিজ্যে গতি ও স্বচ্ছতা বেড়েছে। আমদানিকারকরা তথ্য চাইলে দ্রুত সরবরাহ করতে পারি। তারা ইচ্ছা করলে নিজেরাও আমদানির তথ্য মোবাইলে দেখতে পারবেন। তবে বন্দরের সঙ্গে কাস্টমসের অটোমেশন সংযোগ হলে আরো বেশি সুফল পাওয়া যাবে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, চট্টগ্রামের পর প্রথম বেনাপোল বন্দর অটোমেশনে যুক্ত হলো। ২০১৯ সালের শেষে দিকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে পরীক্ষামূলক বেনাপোল বন্দরে অটোমেশন কার্যক্রম শুরু করা হয়। গুগলক্রমে ঢুকে আমদানিকৃত পণ্যের মেনিফেস্ট নম্বর এন্ট্রি করে ওয়েভ অ্যাড্রেসে সার্চ দিয়ে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক তার পণ্যের অবস্থান নিশ্চিত হতে পারবেন। তিনি বলেন, চলতি বছরে এসে এখন সব সেবা চালু হওয়ায় সুফল পেতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। পণ্য আমদানি থেকে শুরু করে রাজস্ব পরিশোধ পর্যন্ত সব তথ্য নজরদারিতে থাকে। এটি বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ডেটাসফ্ট নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গত ২০ আগস্ট বেনাপোল বন্দরে অটোমেশন কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close