নিজস্ব প্রতিবেদক
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে প্রযুক্তিনির্ভর সেবা প্রদানের নির্দেশ
মহামারি করোনাকালীন রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে লোকসান কমিয়ে আনাসহ কতিপয় নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নির্বাহীদের কাছে লেখা চিঠিতে একই জায়গায় রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের একাধিক শাখা খোলার অনুমোদন দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কোনো রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের শাখা থাকলে অন্য কোনো সরকারি ব্যাংকের কোনো শাখা সেখানে খোলার অনুমতি দেওয়া হবে না। করোনাকালে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের নতুন কোনো শাখাও খোলা যাবে না। শাখা খোলার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হওয়ারও নির্দেশ নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আমাদের অনুশাসন দিয়েছেন, একই অঞ্চলে সরকারি ব্যাংকের একাধিক শাখার অনুমতি দেওয়া যাবে না। এমনকি এই করোনাকালে নতুন করে শাখার খোলারও প্রয়োজন নেই বলে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবকে বলেছেন, কোনো অবস্থায় সরকারি ব্যাংকগুলো একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার প্রয়োজন নেই। আর ব্যাংকের শাখার সংখ্যা না বাড়িয়ে প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল ব্যাংকিং করার এখন সময়ের প্রয়োজন। অর্থমন্ত্রী এই অনুশাসনের বিষয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে সব রাষ্ট্রীয় ব্যাংককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বর্তমানে দেশে সোনালী ব্যাংকের মোট শাখার সংখ্যা হচ্ছে ১২২৬টি। ব্যাংকটির বিদেশে শাখার সংখ্যা দুটি। এসব শাখার মধ্যে পল্লী অঞ্চলে ৭৫৬টি ও শহরাঞ্চলে ৪৬৭টি শাখা রয়েছে। এ ছাড়া ১৬টি আঞ্চলিক শাখা, ৪৬টি প্রিন্সিপাল শাখা ও ১১টি জিএম কার্যালয় রয়েছে। জনতা ব্যাংকের মোট শাখার সংখ্যা ৯১৭টি। এরমধ্যে শহরে ৪৩০ ও গ্রামে ৪৮৩টি, বিদেশে চারটি শাখা রয়েছে। একইভাবে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা ৯৬০টি, রূপালী ব্যাংকের ৫৮৩টি, বেসিক ব্যাংকের ৬০টি এবং বিডিবিএলের শাখা সংখ্যা ৩২টি।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের লোকসানি শাখা এখন ২২৬টি। এক বছরের লোকসানি শাখার পরিমাণ কমলেও এখনো এ ধরনের শাখার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট লোকসানি শাখা কমেছে। গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর মোট লোকসানি শাখার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২২৬টি। এর আগের অর্থবছর ২০১৯-২০ শেষে ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখার স্থিতি ছিল ২৮৯টি। এক বছরে ব্যাংকগুলোর মোট লোকসানি শাখা কমেছে ৬৩টি।
সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে দুটি ব্যাংকের লোকসানি শাখা বেড়েছে এবং কমেছে চারটির। এরমধ্যে রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা বেড়েছে ২১টি এবং বেসিক ব্যাংকের একটি লোকসানি শাখা বেড়েছে। বর্তমানে এ দুটি ব্যাংকের লোকসানি শাখার স্থিতি দাঁড়িয়েছে রূপালী ব্যাংকের ৩৬টি এবং বেসিক ব্যাংকের ৩১টি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ব্যাংক দুটির লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৫ ও ৩০টি।
অন্যদিকে, গত অর্থবছরে অগ্রণী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ১৪টি এবং জনতা ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ৩১টি কমেছে। কিন্তু লোকসানি শাখা কমলেও বর্তমানে ব্যাংক দুটিতে লোকসানি শাখার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গত জুন শেষে অগ্রণী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬টি এবং জনতা ব্যাংকের ৫৫টি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে জনতা ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল ৮৬টি এবং অগ্রণী ব্যাংকের ৭০টি। অবশিষ্ট দুই ব্যাংকের মধ্যে গত অর্থবছরে সোনালি ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা কমেছে ২২টি এবং বিডিবিএলের কমেছে ১৮টি।
"