reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ জুন, ২০২১

জীবন ও জীবিকার সমন্বয়ের বাজেট

সুফল বাস্তবায়নের ওপর নির্ভরশীল

প্রফেসর ড. মো. সেলিম উদ্দিন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, ড. মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মহামারি কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বিগত বছর থেকে আমাদের জীবন তথা স্বাস্থ্য এবং জীবিকা তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেরপ্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এক অস্বাভাবিক, অসাধারণ, অস্থির, অনিশ্চিত, বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যেটি এখনো অনেকটা চলমান। বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটটি জীবনকে সুরক্ষা অর্থাৎ স্বাস্থ্যঝুঁকিকে ন্যূনতম রাখার কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে জীবিকা তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দিয়ে প্রণয়ন ও ঘোষিত হয়েছে।’

সার্বিক পর্যালোচনায় বলা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটটিতে জীবন ও জীবিকার মধ্যে অত্যন্ত চমৎকার সমন্বয়ের বিভিন্ন দিক প্রতিফলিত হয়েছে। যেমন : স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনয়ন, নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ইত্যাদির জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, কর অবকাশসহ নানা ধরনের কর ছাড় ও কর মওকুফের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পেয়েছে। কিন্তু বিগত বছরগুলোর বাজেট বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করলে এ ধারণা স্পষ্টত, বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না এবং প্রস্তাবিত ব্যয় বরাদ্দ অব্যয়িত থেকে যাচ্ছে, যার কারণে প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, অবকাঠামোসহ অন্যান্য বরাদ্দের আওতায় পরিকল্পিত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হচ্ছে না। যার ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দকৃত মোট ৬,০৩,৬৮১ কোটি টাকা ব্যয়ের ফলে যে পরিমাণ সামাজিক কল্যাণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, অর্থনৈতিকসমৃদ্ধি, অবকাঠামোগত ব্যয়ের ধনাত্মক ফলাফল যেমন : মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব ও অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন পাওয়ার বা হওয়ার অঙ্গীকার থাকে তা অর্জিত হয় না। তাই প্রস্তাবিত বাজেটের সুফল এবং সফলতা বাস্তবায়নের ওপর নির্ভরশীল। ব্যয় পরিকল্পনা মাসিকভিত্তিক বা ত্রৈমাসিকভিত্তিক আনুপাতিক হওয়া বাঞ্ছনীয় নতুবা গুণগত মান এবং কাজের প্রাপ্ত ফলাফল পেতে অনিশ্চয়তা থাকে।

উদাহরণস্বরূপ, চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে সংশোধিত এডিপিতে প্রায় ১৩,৮৬৫ কোটি টাকার বরাদ্দের অনুকূলে জুলাই ২০২০ থেকে এপ্রিল ২০২১ দশ মাসে ব্যয় হয়েছে ৪,০০০ কোটি টাকার মত যেটি বরাদ্দের ২৯ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে করোনাকালীন এই দ্বিতীয় বাজেটটিতে স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার, নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ, নতুন উদ্যোক্তা শ্রেণি সৃষ্টিতে ঘোষিত বরাদ্দ, রাজস্ব প্রণোদনা, নতুন নতুন পলিসিসমূহসহ অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগের সব ব্যবস্থা নিশ্চিতপূর্বক রাজস্ব আদায় এবং ঘাটতি অর্থসংস্থানে গতিশীল নেতৃত্বের সমাবেশ ঘটাতে পারলে ঘোষিত বাজেটের ফলাফল ফলপ্রসূ এবং ইতিবাচক হবে।

চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) এবং প্রস্তাবিত বাজেট ২০২১-২২ দুটি করোনাকালীন বাজেটে করোনা মোকাবিলা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ঘোষিত বিভিন্ন নীতি, কৌশল, প্রণোদনাগুলো কার্যকর বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন সময়ে গৃহীত সরকারের মৌলিক অঙ্গীকারগুলো যেমন : প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত ২৩টি প্যাকেজের প্রায় ১,২৮,৪৪১ কোটি টাকা প্রণোদনার সময় বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ে কর্মসৃজনকে প্রাধান্য, বিলাসী ব্যয় হ্রাস ও নিরুৎসাহিত করা, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারিশিল্পের জন্য স্বল্পসুদে ঋণ প্রবর্তনের সুবিধা চালু রাখা, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতাধীন এবং বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি যাবতীয় কার্যক্রম চালু রাখাসহ সুষ্ঠু বাস্তবায়নে অধিক কঠোরতা প্রত্যাশা করছি। উদাহরণস্বরূপ ২৩টি প্যাকেজের বিশাল প্রণোদনা এখনো কুটির, অতিক্ষুদ্র, অতি ছোট, মাঝারি, অনানুষ্ঠানিক সেক্টরে নিয়োজিত ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক এবং রপ্তানিমুখী শিল্পগুলো বিভিন্ন কারণে প্রত্যাশিত প্রণোদনার অর্থছাড় হয়নি। যথাযথ পদ্ধতি প্রবর্তনপূর্বক সিএমএসএমই খাতে প্রণোদনার অর্থছাড়করণসহ অধিক সহায়তা দিলে কর্মসংস্থান, গ্রামীণ অর্থনীতি তেজীকরণ এবং চাহিদা বৃদ্ধি ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

ড. সেলিম বলেন, এই বাজেটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সামাজিক সুরক্ষা খাতে মোট ১,০৭,৬১৪ কোটি টাকার বরাদ্দ, যেটি বাজেটের ১৭.৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.১১ শতাংশ। এ সরকার ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১৩,৮৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল যেটি চলতি বাজেট ২০২০-২১-এ প্রায় ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৫,৫৭৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বয়স্ক-ভাতার সংখ্যা বৃদ্ধি, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধীদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন, নগদ সহায়তাসহ প্রায় ১৩০টির ওপর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।

কুটির, অতিক্ষুদ্র, অতি ছোট, মাঝারির (সিএমএসএমই) সহায়তা, স্বাস্থ্য খাতে নানা কর্মসূচি, কৃষিতে গুরুত্ব এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাজেটে অতিদরিদ্রের হার ১২.৩ শতাংশ থেকে ২০২৩-২৪-এর মধ্যে ৪-৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এই চিন্তা-চেতনা বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য দিক বলে আমি মনে করি। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা করার জন্য এবং গ্রাম থেকে শহরের মাইগ্রেশন থামানোর লক্ষ্যে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ গ্রামীণ রাস্তাঘাট উন্নয়ন ও সংস্কার, যোগাযোগহীন গ্রামের মধ্যে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, একটি বাড়ি একটি খামার ইত্যাদিসহ নানা প্রকার কর্মসূচি সম্পাদনে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৪১,০১০ কোটি টাকা বরাদ্দ ঈপ্সিত অতিদরিদ্রের হার কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে দেশি শিল্পকে সুরক্ষা, করোনাজনিত কারণে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য নতুন শিল্প স্থাপনে ও বর্তমান শিল্প সম্প্রসারণে এবং সর্বোপরি শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে অনেক ধরনের করছাড়, রাজস্ব সংস্কার ও রাজস্ব সহজীকরণ করা হয়েছে। করছাড়, কর অব্যাহতি, কর অবকাশ এবং কর কৌশলগুলোর মধ্যে অন্যতম-টার্নওভার কর ০.৫% থেকে ০.২৫%, পাবলিক ও প্রাইভেট কোম্পানির জন্য ২.৫% করছাড়, একক ব্যক্তি কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩২.৫% থেকে ২৫% করহার, আয়শূন্য সম্পদের ওপর সারচার্জ বাতিল, ন্যূনতম সারচার্জ বিলুপ্ত, আমদানি পর্যায়ে শিল্পের কাঁচামালের ওপর অগ্রিম কর ৪% থেকে ৩%, সিমেন্ট ও লৌহজাতীয় শিল্পের ক্ষেত্রে আমদানীকৃত কাঁচামালের ওপর ৩% থেকে ২% এ হ্রাস, ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় মেগাশিল্পে ২০ বছর কর অবকাশ, হোম অ্যাপলায়েন্স ও আইটি সংযোজনশিল্পের জন্য ১০ বছরের করছাড়, মানবসম্পদ উন্নয়নে পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ১০ বছরের কর মওকুফ, পেরি-আরবান এলাকায় (ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ ছাড়া) হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ১০ বছরের কর অব্যাহতি, অটোমোবাইল, থ্রি-হুইলার, ফোর-হুইলার ও হালকা প্রকৌশলশিল্পের জন্য করছাড়, এসএমইও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৭০ লাখ টার্নওভার করমুক্ত রাখাসহ নানা ধরনের কর প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কৃষি খাতে সার, বীজ ও কীটনাশক ইত্যাদি আমদানিতে শূন্য শুল্ক অব্যাহত এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতির জন্য রেয়াতি শুল্কহার সম্প্রসারণ এবং আমদানি করা বিভিন্ন ফল, শাকসবজির ওপর শুল্ক আরোপ দেশীয় কৃষি খাতকে সমৃদ্ধ করবে। ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন ব্যবহার নিরুৎসাহের জন্য মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল সংযোজনশিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার ছাড় দেওয়ার কারণে শিল্পগুলোকে টিকে থাকা এবং সম্প্রসারণে নতুন উদ্দীপনা পাবে।

উল্লিখিত বিষয়গুলোকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামের প্রস্তাবিত ২০২১-২২ বাজেটটি ৩ জুন, ২০২১ মহান জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। এ সরকারের প্রতিটি বাজেটই রেকর্ড ভেঙেছে। এবার তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বাজেট ও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বাজেট ২০২১-২২-এ মোট ব্যয় প্রাক্কলন হয়েছে ৬,০৩,৬৮১ কোটি টাকা। যেটি সংশোধিত ২০২০-২১ থেকে ৬৪,৬৯৮ কোটি টাকা বা ১২ শতাংশ বেশি। একইভাবে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩,৮৯,০০০ কোটি টাকা, যেটি সংশোধিত ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ৩৭,৪৬৮ কোটি টাকা বা ১১ শতাংশ বেশি। মোট ব্যয় এবং রাজস্ব প্রাক্কলনের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণে বলা যায় যে, মোট ব্যয় ও রাজস্ব প্রবৃদ্ধি প্রায় সমান এবং মোট বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২,১৪,৬৮১ কোটি টাকা, যেটি জিডিপির ৬.২০ শতাংশ। ২০২০-২১ সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াবে ১,৮৭,৪৫১ কোটি টাকা, যেটি জিডিপির ৬.১ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে বহিঃউৎস থেকে ১,০১,২২৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১,১৩,৪৫৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যাংকঋণ ৭৬,৪৫২ কোটি টাকা ঘাটতি অর্থায়নের প্রাক্কলন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২০-২১ সংশোধিত বাজেট বহিঃউৎস থেকে ৭২,৩৯৯ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১,১৫,০৫২ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যাংকঋণ ৭৯,৭৪৯ কোটি টাকার অর্থায়ন পুনঃপ্রাক্কলন করা হয়েছে। ঘাটতি অর্থায়ন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে, বহিঃউৎস থেকে অর্থায়ন টার্গেট অনুযায়ী না হওয়ায় এবং রাজস্ব আদায় ঘাটতির কারণে ব্যাংকিংব্যবস্থা থেকে বাজেটের টার্গেট অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে ঘাটতি অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হয়। তাই বাজেট ২০২১-২২-এ ঘাটতি অর্থায়ন ২,১৪,৬৮১ কোটি টাকা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জিং। কেননা অভ্যন্তরীণ উৎস বিশেষ করে ব্যাংকিংব্যবস্থা থেকে বাজেট অতিরিক্ত ঋণ নিলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাপ্রাপ্তসহ তারল্য সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

সুতরাং, রাজস্ব আহরণ এবং বৈদেশিক উৎস থেকে প্রাক্কলিত অর্থ যথাসময়ে সংগৃহীত না হলে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে। এজন্য রাজস্ব আহরণে এবং ঘাটতি অর্থায়নে বিশেষ করে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নে সাফল্য দেখাতে না পারলে প্রস্তাবিত বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন কঠিন হবে। তাই প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কলাকৌশলসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা অতীতের যেকোনো সময় থেকে বেশি নিতে হবে। মোট বাজেট ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১,৭০,৫১০ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ২৮.২৫ শতাংশ, ভৌত অবকাঠামো খাতে ১,৭৯,৬৮১ কোটি টাকা (মোট ব্যয়ের ২৯.৭৬ শতাংশ), সাধারণ সেবা খাতে ১,৪৫,১৫০ কোটি টাকা (মোট ব্যয়ের ২৪.০৪ শতাংশ), সুদ পরিশোধ ৬৮,৫৮৯ কোটি টাকা বা ১১.৩৬ শতাংশ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি), আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি এবং বিনিয়োগসহ মোট ৩৪,৬৪৮ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৫.৭৪ শতাংশ এবং ওই বরাদ্দগুলো যথাক্রমে সংশোধিত বাজেট ২০২০-২১ চলতি অর্থবছরের যথাক্রমে ১,৪৭,৬৪৮ কোটি টাকা (২৭.৩৯ শতাংশ), ১,৬৪,০২৮ কোটি (৩০.৪৩ শতাংশ), ১,১৯,৮৭৫ কোটি (২২.২৪ শতাংশ), ৬৩,৮২৩ কোটি (১১.৮৪ শতাংশ) এবং ৩৬,৩৩৯ কোটি টাকা (৬.৭৪ শতাংশ) পুনঃপ্রাক্কলন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ ও শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু ভৌত অবকাঠামোতে বরাদ্দ বাড়লেও মোট বরাদ্দের শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ সেবায় বরাদ্দ এবং শতাংশে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পিপিপি ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানে অর্থ সহায়তা ও সাবিসিডিতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতার স্বাক্ষর বহন করছে।

ড. সেলিম বলেন, বিগত তিন বছরে ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত যথাক্রমে ৭.২৮,৭.৮৬ এবং ৮.১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার আলোকে ২০১৯-২০ বছরে প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আগ্রাসী আক্রান্তে ৫.২ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বাজেট ২০২০-২১-এ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.২ শতাংশ এবং সংশোধিত হার ৬.২ শতাংশ। বাজেট ২০২১-২২-এ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ ধরা হয়েছে। বাজার চাহিদাসহ অর্থনৈতিক কর্মকা- কোভিড-১৯-পূর্ববর্তী অবস্থায় পুনর্বাসন হলে হয়তো এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা আমাদের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা। মুদ্রাস্ফীতি ৫.৩ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখার আসার প্রত্যয় বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন খাতগুলোর বরাদ্দ বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, প্রস্তাবিত বাজেট জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বিধানমূলক কর্মসূচি এবং কর সহনীয়করণসহ প্রবৃদ্ধি সঞ্চারী মেগা প্রকল্পসমূহ এবং স্থবির বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির নানা কলাকৌশল অগ্রাধিকার পেয়েছে। গতানুগতিক বড় আকারের বাজেট নিয়ে ড. সেলিম উল্লেখ করেন, বাংলাদেশর অপার উন্নয়ন সম্ভাবনা, জনগণের প্রত্যাশা, ভোগ ও চাহিদার ক্রমোন্নতি, বর্তমান অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বলা যায়, আকার রক্ষণশীল না হওয়াই ভালো। বড় আকারের বাজেটে অনেকে মনে করেন, অর্থের অপচয় ও অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমি বলব অর্থ বরাদ্দে উদারতা থাকা ভালো এবং অনেক সময় সফলতা আসে তবে অর্থ ব্যবহারে যথেষ্ট সতর্ক থাকা এবং অর্থ অপব্যবহার বা অপচয় রোধকল্পে সচেতনতাসহ কঠোরতা অবলম্বন করলে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিশেষ করে সেপ্টেম্বর ২০২১ যদি বিশ্ব মহামারি কোভিড-১৯ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলে বিশাল এই বাজেট অধিকাংশই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সমষ্টিকে অর্থনীতির সূচকগুলো যথা : মুদ্রাস্ফীতি ৫.৩ শতাংশ রাখা, মধ্যমেয়াদি নীতি কৌশল কঠোরভাবে পরিপালনসহ কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, রপ্তানি খাত, আবাসন খাত, প্রবাসী আয় ও সেবা খাতকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নেওয়ার অঙ্গীকার, দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট এবং আয়বৈষম্য নিয়ন্ত্রণে স্ববিশেষ সূচক ও চলকগুলোকে বাজেট বাস্তবায়নে কঠোরভাবে পরিপালনসহ নজরদারিতে রাখতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, কোনো ধরনের তাৎপর্যপূর্ণ নতুন করারোপ ছাড়াই এই বিশাল বৃহৎ এবং উচ্চবিলাসী বাজেট যদি প্রত্যেক মাসে আনুপাতিক হারে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সঠিক অর্থে ও মানসম্মতভাবে বাস্তবায়িত হলে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি, অবকাঠামো ঘাটতি হ্রাস এবং দারিদ্র্যবান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বিধানমূলক ব্যয় ইত্যাদির মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেট সার্বিক জনকল্যাণে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। মোদ্দাকথা, প্রস্তাবিত বাজেটের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে সারা বছরের আর্থিক কর্মকা-গুলো মাসিক কিংবা ত্রৈমাসিকের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে গুণগত ও পরিমাণগত বৈশিষ্ট্যের আলোকে মানসম্মত বাজেট বাস্তবায়নের ওপর। কেননা বিগত বছরসমূহে বাজেট অবাস্তবায়নের হার প্রায় ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২১ শতাংশে পৌঁছেছে।

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে সামষ্টিক অর্থনীতির দুর্বলতা, অসংগতি, প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জসমূহের প্রতি আলোকপাত করতে গিয়ে ড. সেলিম বলেন, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বর্তমান বিনেয়োগ যথেষ্ট নয়। সক্ষমতার অভাবে এডিপি বাস্তবায়ন পুরোপুরি না হওয়ায় সরকারি বিনিয়োগ কাক্সিক্ষত মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। আবার বছর বছর সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়, এর গুণগতমান বৃদ্ধি এবং অর্থবছর শেষ তিন মাসে বা শেষ প্রান্তিক অত্যধিক ব্যয় প্রবণতার কারণে সরকারি অর্থের অপচয়, কাজে নিম্নমান ও গুণগতমান হ্রাস, স্বচ্ছ ও জবাবদিহি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। অন্যদিকে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কয়েক বছর ধরে ২৩-২৪ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধির জন্য এই হার জিডিপির ২৮-২৯ শতাংশে উন্নতি করা দরকার। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বিশেষ করে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ আগামী অর্থবছরে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ সুবিধা, বিনিময় হার, তারল্য সংকট, খেলাপি ঋণ সংকট, মুদ্রাস্ফীতির হার, বহিঃখাতের অসামঞ্জস্য, বিনিয়োগকারীর আস্থা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সংকটসহ প্রধানতম বিশ্ব মহামারি কোভিড-১৯-এর বিরূপ প্রভাব ইত্যাদি কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে অন্য চ্যালেঞ্জসমূহের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব আহরণ অন্যতম, অবকাঠামোগত ঘাটতি, সরকারি ব্যয়ের অগ্রাধিকার ঠিক করা, ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রতিবন্ধকতাসমূহ, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, রপ্তানির প্রবৃদ্ধির তুলনায় আমদানি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক বৃদ্ধি, কাক্সিক্ষত মাত্রায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সঞ্চয় বিনিয়োগ তারতম্য ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

উপরোক্ত চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ব্যয়ধিক্য (ঈড়ংঃ ঙাবৎৎঁহ) এবং বাস্তবায়ন সময়োত্তর্ণের (ঞরসব ড়াবৎৎঁহ) সঠিক ঝুঁকি নির্ণয়, মাসিক ভিত্তিতে প্রকল্প, রেজাল্ট ভিত্তিতে মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকা দরকার। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বৈদেশিক সূত্র থেকে ঝামেলামুক্ত ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত, বিনিময় হার, মুদ্রাস্ফীতির হার, আস্থার উন্নতি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ ইত্যাদি চলমান কার্যক্রমগুলোর সুষ্ঠু সমাপ্তসহ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর জোর নজরদারি, তদারকি এবং স্থিতিশিলতা অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। এ ছাড়া বাজেটকে সঠিক বাস্তবায়নে সক্ষমতা, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের স্বচ্ছ রোডম্যাপ, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছ ও জবাবদিহি, প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগত পরিবর্তন ইত্যাদি বিবেচনায় নিলে বাজেট বাস্তবায়নের অনেক চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট, ব্যবসা ব্যয়-হ্রাস, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যে এই বাজেটে সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যয়ের গুণগতমান, বাস্তবায়ন সময়, মোট প্রকল্প ব্যয় ইত্যাদির ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করে সঠিক ব্যয়ে সঠিক সময়ে এবং সঠিক গুণে ও মানে প্রকল্পকার্য সমাপ্তের জন্য সঠিক মানদ- নিশ্চিত করতে হবে। চলমান বৃহৎ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের হার সময় সময় প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জনসম্মুক্ষে প্রচারের ব্যবস্থা থাকা উচিত। যেমন : বাংলাদেশ দৈনিক কতটুকু বা কত কিলোমিটার রাস্তা সম এককে (বয়ঁরাধষবহঃ ঁহরঃ) তৈরি হচ্ছে, দৈনিক কত কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে (সম এককে) ইত্যাদি প্রকাশ করার জন্য সুপারিশ করছি। সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামোর কারণে সুফলগুলো সুস্পষ্ট করা উচিত বলে মনে করি।

প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য রাজস্ব প্রণোদনার বিষয়ে উল্লেখ করতে গিয়ে ড. সেলিম বলেন, নিম্ন আয়ের ব্যক্তি, কুটিরশিল্প, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারিশিল্প ও ব্যবসায়ীদের কোভিড-১৯-এর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য করহার হ্রাস, কৃষি ও কৃষি উপ-খাতে নিয়োজিত কৃষি যন্ত্রপাতিতে শুল্ক হ্রাস, ভ্যাট রেয়াত, কাস্টমসের হয়রানি রোধে বিভিন্ন কর্মকৌশল, রপ্তানিমুখী দেশীয় এবং আমদানি পরিপূরক শিল্প ও ব্যবসায়কে সুরক্ষায় বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনার প্রবর্তন, শুল্ক হ্রাস, করহার হ্রাস, রাজস্ব প্রণোদনাসহ বিভিন্ন নীতি-কৌশলের সহায়তা বাজেটে পরিস্ফুটিত হয়েছে। মোটামুটি বড় ধরনের নতুন কোনো কর আরোপ ছাড়াই এই বাজেট প্রণীত হয়েছে। সব পক্ষকে মোটামুটি স্বস্তি দিয়ে এই বাজেট বাস্তবায়নের যে পরিকল্পনা রচিত হয়েছে সেটি সঠিক অর্থে দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এবং সময়মতো বাস্তবায়নের সব কর্মকৌশল গ্রহণ ছাড়া সফলতা দুরূহ হবে।

ড. সেলিম বলেন, বিশ্ব মহামারি কোভিড-১৯ বিগত কয়েক মাসে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত বিশ্বকে একটি শিক্ষা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, অদূর ভবিষ্যতে বা নিকট ভবিষতে বহু জানা, অস্পষ্ট, স্পষ্ট এবং অজানা চ্যালেঞ্জ এবং বিপদ যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে। যেটি অর্থনীতি পুনর্গঠনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে যা অবশ্যই বৈচিত্র্যময় ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিশ্চিত ঘটনাবলির সঙ্গে দ্রুত তাল মিলিয়ে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের ব্যবস্থা রেখেই অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পূর্ব প্রস্তুতি থাকতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close