নিজস্ব প্রতিবেদক
ছয় পণ্যের দাম বেঁধে দিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর
তেল, চিনিসহ ছয়টি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বাকি পণ্যগুলো হলো ছোলা, পেঁয়াজ, মসুর ডাল ও খেজুর। গতকাল সোমবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। আসন্ন পবিত্র রমজানে বাজারে চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিত স্বাভাবিক থাকবে এবং অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর কোনো আশঙ্কা নেই বলে প্রতিবেদনে প্রত্যাশা করা হয়েছে।
বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী খুচরা বাজারে ছোলা কেজিপ্রতি ৬৩ থেকে ৬৭ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ টাকা, ভোজ্য তেলের এক লিটারের বোতল ১৩৯ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৬৬০ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ৬৭ থেকে ৬৯ টাকা ও সরুদানার ডাল ৯৭ থেকে ১০৩ টাকায় বিক্রি হবে এবং চিনির খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ৬৭ থেকে ৬৮ টাকায় কিনতে পারবেন ক্রেতারা। সাধারণ মানের খেজুর কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ ও মধ্যম মানের খেজুর ২০০ থেকে ২৫০ টাকার বেশি হতে পারবে না।
প্রতিবদনে বলা হয়েছে, সাধারণত বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজান মাসে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীকে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতি মুনাফার চেষ্টা করতে দেখা যায়।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসন্ন রমজানে বাজারে চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিত স্বাভাবিক থাকবে এবং অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা নেই। এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং টিম বাজার তদারকি অব্যাহত রেখেছে। এরপরেও কোনো ব্যবসায়ী অসদুপায় বা অন্য কোনো অজুহাতে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বছর আসন্ন রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ব্যক্তিরা এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রমজানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দ্রব্যের বার্ষিক চাহিদা, রমজানের চাহিদা, আমদানির পরিমাণ, অমিদানি মূল্য, উৎপাদনের পরিমাণ, পাইকারি ও যৌক্তিক খুচরা মুল্যের ভিত্তিতে বর্তমান পরিস্থিতির ওপর একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।
ছোলা : বার্ষিক সম্ভব্য চাহিদা রয়েছ ২ দশমিক ১০ লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসের চাহিদা শূণ্য দশমিক ৮০ লাখ টন। এ বছর জুলাই থেকে মার্চে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ১ দশমিক ০১ লাখ টন। আমদানি মূল্য প্রতি কেজি ৫৫ টাকা। দেশে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে (২০২০-২১) শূন্য দশমিক ০৫ লাখ টন। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৮ থেকে ৬২ টাকায়, খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬৩ থেকে ৬৭ টাকায়।
পেঁয়াজ : বার্ষিক সম্ভব্য চাহিদা রয়েছে ২৬ লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসের চাহিদা ৩ লাখ টন। এ বছর জুলাই থেকে মার্চে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৪ দশমিক ০৭ লাখ টন। আমদানি মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে (২০২০-২১) ২৯ দশমিক ৫৫ লাখ টন। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকায়। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায় প্রতি কেজি।
ভোজ্যতেল (সয়াবিন) : বার্ষিক সম্ভাব্য চাহিদা ২০ লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসের চাহিদা ২ লাখ টন। এ বছর জুলাই থেকে মার্চে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ১৬ দশমমিক ২৩ লাখ টন। আমদানি মূল্য প্রতি লিটার ১০৮ টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে (২০২০-২১) ২ লাখ টন। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি ৫ লিটার ক্যান ৬৪০ টাকা, এক লিটার ক্যান ১৩১ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫ লিটারের ক্যান ৬৬০ টাকায় এবং ১ লিটারের ক্যান ১৩৯ টাকায়।
মসুর ডাল : বার্ষিক সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে ৫ লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসের চাহিদা শূন্য দশমিক ৮০ লাখ টন। এ বছর জুলাই থেকে মার্চে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ১ দশমিক ৮৩ লাখ টন। আমদানি মূল্য প্রতি কেজি ভালোমানের ৭১ টাকা, মোটা বা মধ্যম মানের ৪১ টাকা কেজি। এ বছর অভ্যন্তরীণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে (২০২০-২১) ২ দশমিক ৬৬ লাখ টন। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মসুর ডাল (মোটা) বিক্রি হচ্ছে ৬১ থেকে ৬৫ টাকায়। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬৭ থেকে ৬৯ টাকায় প্রতি কেজি।
চিনি : বার্ষিক সম্ভাব্য চাহিদা ১৮ লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসের চাহিদা ১ দশমিক ৩৬ লাখ টন। এ বছর জুলাই থেকে মার্চে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ১৩ দশমিক ২৩ লাখ টন। আমদানি মূল্য প্রতি কেজি (অপরিশোধিত) ৩০ টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে (২০২০-২১) শূন্য দশমিক ৮২ লাখ টন। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৬৩ টাকা আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৬৭ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খেজুর : বার্ষিক সম্ভাব্য চাহিদা ৬০ থেকে ৭২ হাজার টন। এর মধ্যে রমজান মাসের চাহিদা ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন। এ বছর জুলাই থেকে মার্চে পণ্যটি আমদানি হয়েছে শূন্য দশমিক ৬২ লাখ টন। আমদানি মূল্য প্রতি কেজি (মধ্যমমানের) ১২০ টাকা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় এবং খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
"