নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ এপ্রিল, ২০২১

লকডাউনে পোশাক ও বস্ত্র খাত খোলা রাখার দাবি

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতসহ বস্ত্র খাতের অন্যান্য সহযোগী শিল্পগুলো লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন এ খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা। গতকাল রবিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায় তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমইএ) ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)।

বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও ইএবির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শিদী, বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম উসমান, প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ, সহসভাপতি এম এ রহিম ফিরোজসহ তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা।

বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, ২০১৮-২০ অর্থবছরে আমরা প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হারিয়েছি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি হারিয়েছি ৯.৫ শতাংশ। বিশেষ করে ওভেন খাতে রপ্তানি সংকট চরমে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ সময়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। শুধুমাত্র মার্চ মাসে তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ২৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।

তিনি আরো বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিলের শেষ নাগাদ আমাদের ১১৫০টি সদস্য প্রতিষ্ঠান ৩.১৮ বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ বাতিলের শিকার হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে গৃহীত লকডাউন পদক্ষেপের কারণে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পোশাকের খুচরা বিক্রিতে ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাসে ইউরোপের খুচরা বাজারে বিক্রি কমেছে ২৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে ১৬ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে আমাদের পোশাকের ৪.৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে দরপতন অব্যাহত আছে। এমন সংকটে থেকেও আমাদের শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে যেতে হয়েছে এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে হয়েছে।

নবনির্বাচিত বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, জীবন-জীবিকার স্বার্থে, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে, শিল্প-কলকারখানাগুলো লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানাই। শ্রমিকরা কারখানার মধ্যে থাকলে সংক্রমণ হার কমবে। ইউরোপ, আমেরিকা, প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বে অনেক উন্নত রাষ্ট্রে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও সেখানে শিল্প-কলকারখানা চালু রয়েছে। তাই দেশেও চালু রাখতে হবে। আর শ্রমিকরা কারখানা সংলগ্ন স্থানেই থাকেন। সেক্ষেত্রে কারখানা চালু রাখা যেতে পারে। এটা না হলে রফতানিতে পিছিয়ে পড়তে হবে। আবার বিশ্ববাজারও হারাতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সালাম মুর্শেদী বলেন, আমাদের জাতীয় শিল্প পোশাক খাত হলেও আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়। লকডাউনে আমাদের কারখানা বন্ধ থাকলে রফতানি হবে না, এতে বাজার হারাতে হবে। কারণ প্রতিযোগী ভারত-ভিয়েতনামের কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত আছে। জীবন থাকলে অনেক কিছুই হবে, আবার জীবিকারও প্রয়োজন আছে। সামনে তিন মাসের মধ্যে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এখানে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে হবে। কারখানা বন্ধ থাকলে আমাদের বেতন-বোনাস ভাতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে। তাই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে চাই।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করোনা নিয়ন্ত্রণে ইউরোপ, আমেরিকা, ব্রাজিলের মতো রাষ্ট্রগুলো হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে আমাদের সমন্বয়ের অভাব নেই। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রেখেছি। সেন্টার ফর বাংলাদেশ, ইউকে বার্কলি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ মতে, ৯৪ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন তারা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গাইডলাইন বিষয়ে সচেতন। ৯১.৪২ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন, কারখানা থেকে তাদের কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close