খাদেমুল ইসলাম, বাগাতিপাড়া (নাটোর)

  ০৮ মার্চ, ২০২১

নকশিকাঁথার নকশায় ডিজিটালের ছোঁয়া

রঙিন কাপড়ের পরতে পরতে সুনিপুণ হাতের কাজে একেকটি নকশিকাঁথা ফুটে উঠলেও, নাটোরের বাগাতিপাড়ার যোগিপাড়া গ্রামের শাহনাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে মেশিনের সাহায্যে খুব অল্প সময়েই তৈরি করেছেন এসব নকশিকাঁথা। অবসরে সংসার ও পড়াশোনার ফাঁকে এ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে সংসারে এনেছেন সচ্ছলতা। পুঁজির জোগান পেতে প্রতিবেশী ও আত্মীয় থেকে ঋণ সহায়তা নেওয়ায় সীমিত পরিসরে চলছে তার এ কাজ। তাই আত্মনির্ভরশীল এই নারীকে সহজশর্তে ঋণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

জানা যায়, রাজশাহীর আরডিএ মার্কেটের ব্লক বাটিকের দোকানে ডাইস দেখে নকশিকাঁথার তৈরিতে আগ্রহ সৃষ্টি হয় তার। মাত্র ১৭০০ টাকা পুঁজি দিয়ে ২০১৯ সালে পুরোনো কাপড়, সুঁই আর সুতা কিনে নকশিকাঁথা তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে চাহিদা নিয়ে নিজ বাড়ির আঙিনায় প্রতিদিন নকশিকাঁথায় ফুলের ছাপ ও সেলাইয়ে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে শাহনাজের।

কখনো লাল, কখনো সাদা কাঁথার জমিনের ওপর রঙিন সুতোতে ফুটিয়ে তোলা হয় সূক্ষ্ম নকশা। সুঁই-সুতোর এফোঁড়-ওফোঁড়ে এক একটি নকশিকাঁথা যেন ফুটে ওঠে জীবন্ত প্রতিচ্ছবিতে। মজুরির ওপর নির্ভর করে নান্দনিক এসব কাঁথা সেলাই মেশিনে তৈরিতে সময় লাগে সপ্তাহখানেক। সংসারের কাজ ও পড়াশোনার ফাঁকে বাড়তি আয় তাকে করেছে স্বনির্ভর। সেই সঙ্গে হয়েছে ভাগ্যেরও বদল। এখন সে বাড়িতে বসেই এই কাঁথার অর্ডার পান। কাঁথা বিক্রি করেই এখন তার মাসে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা আয় হয়। এক দিন সমাজে মাথা নিচু করে থাকতে হতো, দিন কাটত অনাহারে। নকশিকাঁথার টাকা তাদের উন্নয়নের চাবিকাঠি। এখন সবাই ডেকে কথা বলে, সমাদর করে, প্রশংসা করে। শাহনাজের কাজের অবসরে এই কাঁথা তৈরিতে গ্রামের অন্য নারীরা ধীরে ধীরে কাজ শিখতে ছুটে আসছেন। শাহনাজ দাবি করেন, মফস্বল এলাকা হওয়ায় পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি ও কাজের অর্ডার অনেক কম। এর আগে প্রচার না হওয়ায় আমার এ কাজের তেমন প্রসার ঘটেনি। ফলে কাজ করে যে টাকা পাই সেটা খুব বেশি না। সরকারি সহযোগিতা নিয়ে আরো বড় পরিসরে কাজ করতে পারলে নিজের কাজের পরিধি বাড়বে। পাশাপাশি এলাকার আরো অনেকেরই মেশিনে কাঁথা তৈরি ও ছাপ দেওয়া কাজের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির হবে।

সম্প্রতি শাহনাজের নকশিকাঁথা তৈরি অর্ডার দিতে এসে হাপসা খাতুন এই কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেলাই মেশিনে তৈরি কাঁথার কদর বাড়ছে। এই নকশিকাঁথা বাংলাদেশকে আলাদাভাবে পরিচিতি এনে দেবে বিশ্বে।

শাহনাজকে সাধুবাদ জানিয়ে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শিরিন আখতার বলেন, যদি বাণিজ্যিকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মেশিনের সাহায্যে এসব নকশিকাঁথা তৈরি করা যায়, তবে তৃণমূলপর্যায়ের নারী কারিগরদের সরকারি সেবার আওতায় আনাসহ উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থারও আশ্বাস দেন তিনি।

সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রেজাউল করিম বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণের আওতায় এনে তাকে যদি আমরা বৃহৎ পরিসরে কাজ করাতে পারি, তবে সে উপজেলা ব্র্যান্ডিং হতে পারে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close