আশরাফুল আলম সাজু, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম)
ঐতিহ্যবাহী লাভজনক পেশা শূকর পালন
থেকে অপরূপ সৌন্দর্যের এই দেশ বাংলাদেশ। এখানে যেমন বিভিন্ন জাতি-ধর্মের লোক পাশাপাশি সহাবস্থান করে; ঠিক তেমনি নিজস্ব সংস্কৃতি লালন করে। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে নিজেদের জড়িত করেছে। কালের আবর্তে যান্ত্রিকতা আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে সবকিছু। অনেকে আবার শত পরিশ্রম করে বাপ-দাদার সেই পেশা আঁকড়ে ধরে আছেন। তেমনই একটি পেশা শূকর পালন। সাধারণত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মে বংশপরম্পরায় কিছু লোক সেই পেশায় জড়িত আছেন। প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন জেলায় পথঘাটে দেখা যেত শূকরের পাল। এদের কয়েকটি জাত রয়েছে বরাহ, শুয়ার, জঙ্গলি ইত্যাদি। এদের চারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয় পতিত জমি, জলাশয় কিংবা সড়ক-মহাসড়কের ধারে। প্রতিটি পালে শতাধিক পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা শূকর থাকে। সাধারণত বাংলাদেশে দেশি বন্যজাতের শূকর পালন করা হয়। এদের মাংস ও চর্বি বিদেশে চাহিদা রয়েছে। এদের দেখাশোনার দায়িত্ব যাদের ওপর থাকে, স্থানীয় ভাষায় এদের ডাওয়াই বলা হয়। প্রতিটি পালে দুই থেকে তিনজন করে থাকে। শূকর খুব সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করে। ডাওয়াইরা মহাজনদের কাছ থেকে পাল বুঝে নিয়ে ৬ থেকে ৮ মাসের জন্য পরিবার-পরিজন ছেড়ে বের হয়। রাতে তাঁবু খাটিয়ে রাত্রিযাপন করে। এ রকম একটি শূকরের পাল চোখে পড়ে রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট তিস্তা মহাসড়কের পাশে। কথা হয় খগেন লাল নামের একজন ডাওয়াইয়ের সঙ্গে। পার্শ্ববর্তী জেলা লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা থেকে এই এলাকায় এসেছে। মাসিক বেতন ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলা খুব কষ্টকর। একটি মা শূকর পাঁচ থেকে সাতটি করে বাচ্চার জন্ম দেয়। এদের রোগবালাই হয় না বলেই চলে। একেকটি পূর্ণবয়স্ক শূকর ১৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা বিক্রি করে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ব্যবসাটা সম্পূর্ণ মহাজনদের হাতে বন্দি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শূকর পালনের কোনো ব্যবস্থা করলে আরো লাভজনক ও বিস্তার লাভ করবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
"