মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

  ০২ এপ্রিল, ২০২৩

শিক্ষার্থীদের সেরা ৩ সফটওয়্যার প্রজেক্ট

নানা আয়োজনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্দশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। উদযাপনের অংশ হিসেবে প্রজেক্ট শোকেইসের আয়োজন করে বিভাগটি। এতে বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিজস্ব চিন্তাভাবনায় তৈরি তিনটি প্রজেক্টকে সেরা নির্বাচিত করা হয়েছে। এগুলো মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ‘টিম ম্যাট্রিক্স’-এর ‘এগ্রিভিলেজ’ নামের প্রজেক্ট। প্রথম রানার্সআপ হয় ‘টিম হট হেডস’-এর ‘গ্যারেজ চাই’ এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ হয় ‘টিম প্রজেক্ট স্কার্লেট’-এর ‘অনলাইন কম্পাইলার’।

এগ্রিভিলেজ : এগ্রিভিলেজ হচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর এমন একটি পর্যটন ব্যবস্থা যেখানে একজন কৃষকের ফসলের মাঠ ও তার ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাই পর্যটন স্থান হিসেবে বিবেচিত হবে এবং কৃষকরা সেখান থেকে উপার্জন করতে পারবেন। প্রান্তিক কৃষকদের জন্য প্রযুক্তিভিত্তিক সমাধানে এটি স্মার্ট ইরিগেশন, প্লান্ট ডিজিজ ডিটেকশনসহ নানা রকম কাজ করবে।

সফটওয়্যারটির প্রস্তুতকারক মো. হেলাল উদ্দীন, তামিম মাহমুদ হাওলাদার, রেজাউল করিম হিরা, সৈয়দ মাহিদুল ইসলাম রাফেল জানান, দিনে দিনে কৃষকরা কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এর মূল কারণ ফসল উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধিসহ উৎপাদিত ফসলের দাম কম এবং কৃষকদের সেকেন্ডারি কোনো আয়ের উৎস নেই। এ সমস্যার প্রযুক্তিগত সমাধানের খুঁজে অরগানাইজড কৃষির মাধ্যমে কৃষি জমিকেই কৃষি পর্যটন ক্ষেত্রে রূপান্তরের স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এগ্রিভিলেজের। এর মাধ্যমে বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ সহজেই কৃষকের সুসংগঠিত এবং সুসজ্জিত কৃষিজমি পরিদর্শনের সুব্যবস্থার পাশাপাশি কৃষকের কৃষিকাজ অংশগ্রহণেরও সুযোগ পাবে। দর্শনার্থীর নামমাত্র পরিদর্শন ফিস থেকেই কৃষক উল্লেখযোগ্য বাড়তি অর্থ উপার্জন করতে পারবে এবং গ্রাহকরা সুযোগ পাবেন সরাসরি কৃষকের মাঠ থেকেই বাজার মূল্যেরও কমে ফসল, সবজি, ফলমূল ক্রয়ের। এর ফলে কৃষক যেমন উৎপাদিত কৃষি পণ্যের পাইকারি দামের থেকে ৬০-৭০ শতাংশ বেশি দাম পাবে তেমনি গ্রাহক খুচরা দামের থেকে ৩০-৪০ শতাংশ কম দামে পণ্য কিনতে পারবে এবং পরে অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্ডার করলে কৃষকের পণ্য সরাসরি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেবে এগ্রিভিলেজ।

এগ্রিভিলেজ সব কৃষি খামার, মৎস্য খামার এবং মৌসুমি ফুল ও ফলের খামারের সঙ্গে কাজ করে বাংলাদেশে কৃষি পর্যটনে বিপ্লব ঘটাতে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এগ্রিভিলেজ সাভারের বেশ কটি কৃষি এবং ফুলের খামারে অরগানাইজড ফার্মিং নিয়ে কাজ করছে এবং কৃষকরা সানন্দে এগ্রিভিলেজের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এ ব্যাপারে এগ্রিভিলেজের মেন্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সজীব সাহা বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। এ দেশে কৃষকরা সারা বছরেই বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদনে ব্যস্ত থাকে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ফসলের যথাযথ মূল্য তারা পায় না। অধিকন্তু বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের যে আর্থিক ক্ষতি হয় সেটা তারা সরবরাহ ফসল বিক্রি করেও কাটিয়ে উঠতে পারে না। সেখান থেকেই আমরা চিন্তাভাবনা শুরু করি কীভাবে আমাদের কৃষকদের তাদের কৃষিকাজ থেকে একটি বিকল্প আয়ের উৎস সৃষ্টি করে দেওয়া যায়। এগ্রিভিলেজ আমাদের সেই চিন্তাভাবনারই একটা ফলাফল।

তিনি আরো জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ব্যবস্থাটি একটি বহুল প্রচলিত পর্যটন ব্যবস্থা হলেও আমাদের দেশে এটি এখনো প্রচলিত নয়। আমরা বিশ্বাস করি, এগ্রিভিলেজ প্ল্যাটফরমটি আমাদের কৃষকদের পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক পর্যটনেও উৎসাহিত করবে এবং বাংলাদেশ পর্যটনশিল্পের বিকাশে একটি ভিন্নমাত্রা যোগ করবে।

গ্যারেজ চাই : গ্যারেজ চাই একটি অত্যাধুনিক অ্যাপ, যা গ্যারেজ লিজিং এবং ভাড়া পরিষেবাগুলোর জন্য একটি বিরামহীন সমাধান প্রদান করে। এটি ব্যবহারকারীরা ইন্টারফেসের সাহায্যে খুব সহজেই তাদের গাড়ির জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে একটি গ্যারেজ স্থান খুঁজে পেতে এবং ভাড়া নিতে পারেন। এটি দীর্ঘমেয়াদি বা স্বল্পমেয়াদি ইজারা যাই হোক না কেনো, গ্যারেজ চাই প্রতিটি ব্যক্তির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। অ্যাপটি গ্যারেজ মালিকদের অব্যবহৃত স্পেস তালিকাভুক্ত করতে এবং অতিরিক্ত আয় করার সুযোগ করে দেবে। নিরাপদ অর্থপ্রদান ব্যবস্থা এবং ঝামেলামুক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাপটি গ্যারেজ লিজিং এবং ভাড়া প্রত্যেকের জন্য সহজ এবং সুবিধাজনক করে তুলবে।

গ্যারেজ চাই প্রজেক্টটি নাহিদ রায়হান, নায়িব উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর হোসেন তৈরি করেন। তারা জানান, যারা গাড়ির জন্য উপযুক্ত গ্যারেজ স্থান খুঁজে পেতে লড়াই করে তাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে এবং অ্যাক্সেসযোগ্য গ্যারেজ স্পেসের ব্যবস্থা করা এবং অনেক অব্যবহৃত পার্কিং স্পেসগুলো ব্যবহার উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যেই এই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। গ্যারেজ ব্যবহারকারীকে আশাবাদী করতে এবং অভিজ্ঞতা বাড়াতে ভবিষ্যতে অ্যাপটিতে আইওটি সেন্সর এবং এআই পাওয়ার্ড অ্যানালিটিক্সের মতো স্মার্ট প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

অনলাইন কম্পাইলার : অনলাইন কম্পাইলার হলো এমন একটি প্ল্যাটফরম যা ব্যবহারকারীদের তাদের স্থানীয় মেশিনে কোনো সফটওয়্যার ইনস্টল করার প্রয়োজন ছাড়াই ব্রাউজারে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় কোড লিখতে, কম্পাইল করতে এবং কার্যকর করে দেয়। এটি একটি স্যান্ডবক্স পরিবেশ প্রদান করে যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের কোড পরীক্ষা করতে পারে এবং অবিলম্বে আউটপুট দেখতে পারে।

অনলাইন কম্পাইলার তৈরি করা নাহিদ রায়হান এবং আশরাফুজ্জামান আবির জানান, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী আর্থিক কারণে তাদের ল্যাপটপ বা পিসি না থাকায় কোডিং শিখতে পারে না। এই অনলাইন প্ল্যাটফরমটিতে শুধু ব্রাউজার দিয়েউ ওয়েব কোড চালানো এবং পরীক্ষা করা সম্ভব।

তারা আরো জানান, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে যেখানে একজন অনলাইন বিচারক প্রয়োজন হয়। এর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। একটি উদাহরণ হলো ৬০ জন শিক্ষার্থীর ৩ ঘণ্টার প্রতিযোগিতার জন্য ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। এই পরিস্থিতিতে আমাদের এপিআই ব্যবহার করে খরচ কমাতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close