তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক

  ২২ নভেম্বর, ২০২২

পাঁচটি ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস সুরক্ষিত রাখবে কম্পিউটার

প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে এর কিছুু অভিশাপও আমাদের নিত্যদিনের মতো ঘিরে থাকে। এর মধ্যে সাইবার অপরাধ অন্যতম। তাই অনলাইনে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজন কিছু বাড়তি সুরক্ষা ব্যবস্থা। এ জন্য প্রয়োজন অ্যান্টিভাইরাস। তবে এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে অর্থের প্রয়োজন হয়। আপনি যদি সেই অর্থ ব্যয় না করতে চান তাহলে আপনি ফ্রি কিছু অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। যেগুলোর মাধ্যমে কম্পিউটারের তথ্য-উপাত্তের নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে। এসব অ্যান্টিভাইরাসের প্রায় সবগুলোরই আবার প্রিমিয়াম বা পেইড সংস্করণ রয়েছে। যেটা বারবার হালনাগাদ করতে হয়। তবে সাধারণ ব্যবহারকারীরা চাইলে বিনামূল্যেও এরকম ৫টি অ্যান্টিভাইরাস বেশ ভালোভাবেই ব্যবহার করতে পারেন।

মাইক্রোসফট ডিফেন্ডার : উইন্ডোস পিসিতে এটি বিল্ট ইন প্রোগ্রাম হিসেবে থাকে। মূলত উইন্ডোস ১০ এবং ১১-এর সঙ্গে সমন্বিত সুরক্ষা ব্যবস্থার এই প্রোগ্রামটি পাওয়া যায়। ডিফেন্ডারের যাত্রা বেশ আগে শুরু হয়েছিল। সবচেয়ে ভালো অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম হয়তো এটি ছিল না, কিন্তু মাইক্রোসফট এটি নিয়ে বেশ কিছু বিষয়ের উন্নয়ন করে শেষমেশ এটি একটি নির্ভরযোগ্য সুরক্ষা ব্যবস্থায় পরিণত করেছে। এখন ডিফেন্ডার অন্য থার্ড পার্টি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের সঙ্গে কাজ করে এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এটি ব্যবহার করা যায়। রিয়েল টাইম থ্রেট ডিটেকশনের সঙ্গে এতে একটি অতিরিক্ত ফায়ারওয়ালও রয়েছে। এই প্রোগ্রামটি এসই ল্যাব এবং এভি পরীক্ষায় বেশ ভালো স্কোর অর্জন করেছে।

র‌্যানসমওয়্যারসহ বিভিন্ন ম্যালওয়ার সহজে চিহ্নিত করা ও আটকে দেওয়ার ক্ষেত্রেও এটি বেশ উপযোগী। এতে আছে ইন্টিগ্রেটেড ওয়ানড্রাইভ, যা কিনা ম্যালওয়্যার আক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলোকে আবার ফিরে পেতে সাহায্য করে। তাই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়া গেলেও মাইক্রোসফট ডিফেন্ডারকে কম্পিউটার সুরক্ষা ব্যবস্থায় এগিয়ে রাখাই শ্রেয়।

ক্যাসপারস্কি সিকিউরিটি ক্লাউড : এসই ল্যাবের সাম্প্রতিক র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষে রয়েছে এই অ্যান্টিভাইরাসটি। প্যারেন্টাল কন্ট্রোল, অনলাইন পেমেন্ট সুরক্ষাসহ বিভিন্ন ফিচার রয়েছে এতে। একটি মৌলিক অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার হিসেবে ক্যাসপারস্কি নির্ভরযোগ্য। এর বিনামূল্য সংস্করণটিতেও অনেক অতিরিক্ত ফিচার রয়েছে কিন্তু সক্রিয়তার দিক দিয়ে সেগুলো কিছুটা সীমাবদ্ধ। এতে ভিপিএন সেবা পাওয়া সম্ভব, কিন্তু তা দৈনিক হিসেবে ২০০ মেগাবাইট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে ১৫টি পর্যন্ত এন্ট্রি রেকর্ড করা হয় এবং তথ্য লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণ, ফাইল শ্রেডার এবং ভার্চুয়ার কী-বোর্ডের মতো ব্যবস্থাও রয়েছে। এই প্রোগ্রামটি ব্যবহার করার মাধ্যমে যেকোনো ফাইল একটি রাইট ক্লিকের মধ্য দিয়ে স্ক্যান করা সম্ভব। এ ছাড়া ক্যাসপারস্কির ক্লাউডভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন অ্যাডভাইজরও আছে, যা কিনা প্রতিটি ফাইলের প্রতিটি উপাদানের একটি সম্পূর্ণ পরীক্ষা করে থাকে। কাস্টমার পরিষেবার মধ্যে রয়েছে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দিনভর লাইভ চ্যাটের সুযোগ। তবে এই প্রোগ্রামের একটি নেতিবাচক দিক হচ্ছে, এটির ডাউনলোড এবং ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া কিছুটা সীমিত।

অ্যাভিরা ফ্রি সিকিউরিটি : অ্যাভিরা বেশ দ্রুতগতির, কম স্থান সাপেক্ষ একটি সফটওয়্যার, যা কম্পিউটারের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সক্ষম। যদিও সম্প্রতি এর স্কোর কিছুটা নিচের দিকে, তবে পূর্ববর্তী এভি টেস্ট এবং এভি কম্পারেটিভ পরীক্ষাগুলোতে অ্যাভিরা স্কোর বেশ ভালো ছিল।

এতে অত্যন্ত দক্ষ একটি ম্যালওয়্যারবিরোধী ইঞ্জিন রয়েছে, যা ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ম্যালওয়্যার চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি বিশ্লেষণও করে থাকে। ব্যক্তিগত কম্পিউটারে যেহেতু মূল প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় না, তাই স্ক্যানের সময় গতি নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। রিয়েল টাইম প্রটেকশনের পাশাপাশি এতে রয়েছে ফায়ারওয়াল, প্রাইভেসি অ্যান্ড পারফরম্যান্স অপটিমাইজারের মতো ফিচার। শপিং ব্রাউজার হিসেবেও নিরাপদ ফিচার পাওয়া যায় অ্যাভিরাতে। যা কিনা ব্যবহারকারীর ব্যাংকিং সংক্রান্ত সব তথ্য নিরাপদ রাখে এবং অনলাইন শপিং নিয়ে কোনো ঝুঁঁকি থাকে না।

এই প্রোগ্রামের অন্যতম লক্ষণীয় সুবিধা হচ্ছে, এটি ডাউনলোড বা ইনস্টল করার সময় কোনো ইমেইল আইডি পর্যন্ত দরকার হয় না। ব্যবহারকারীর কোনো ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার না করার ক্ষেত্রে অ্যাভিরার বেশ কড়া নীতিমালা রয়েছে। এই প্রোগ্রামটিতে ভিপিএনও ব্যবহার করা যায়। তবে সেটি মাসিক ৫০০ মেগাবাইট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এটুকু বাদ দিলে সামগ্রিকভাবে অ্যাভিরা বেশ নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য একটি অ্যান্টিভাইরাস।

বিট ডিফেন্ডার : বিট ডিফেন্ডার বেশ শক্তিশালী এবং পরিপূর্ণ একটি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার। বিনামূল্য সংস্করণে এই প্রোগ্রামের সর্বোচ্চ সরলীকৃত রূপটিই পাওয়া যায় এবং সুরক্ষার ক্ষেত্রে তা বেশ কার্যকর। ম্যালওয়্যার চিহ্নিত ও দূরীকরণের ক্ষেত্রে বিট ডিফেন্ডার একশতে একশ পাবে। এতে ক্লাউডভিত্তিক ম্যালওয়্যারবিরোধী একটি ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়, যা একই সঙ্গে দ্রুতগতির এবং দক্ষ। এমনকি এর কাজে কম্পিউটারের অন্য কাজ ব্যহত হয় না। বিট ডিফেন্ডারের স্ক্যানিং প্রক্রিয়ার সময় ভিডিও গেমের মতো বেশ বড় কোনো প্রোগ্রাম চালালেও তাতে কোনো প্রভাব পড়বে না।

এই প্রোগ্রামের অন্যতম স্বস্তিদায়ক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি ব্যবহারকারীদের বারবার হালনাগাদ করে প্রিমিয়াম সংস্করণ ব্যবহার করতে তাগাদা দেয় না। বরং পেইড সংস্করণ ও বিনামূল্য সংস্করণ উভয়টিতেই মৌলিক ফিচারগুলো ব্যবহার করা হয়।

টোটালএভি : ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই অ্যান্টিভাইরাসটি বেশ সহজে পরিচালনা করা যায়। দ্রুতগতি, ক্লাউডভিত্তিক স্ক্যান করার মাধ্যমে এটি র‌্যানসমওয়্যারের মতো ঝামেলাপূর্ণ ম্যালওয়্যারও চিহ্নিত করতে পারে। এতে রয়েছে অত্যন্ত ইউজারফ্রেন্ডলি সুরক্ষা ব্যবস্থা। নকশায় মিনিমালিস্ট এবং পরিপূর্ণ ড্যাশবোর্ড এই প্রোগ্রামের আরেকটি ইতিবাচক দিক। অন্যান্য অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামের তুলনায় এটি কম্পিউটার ডিস্কে খুব কম জায়গা নেয়।

অ্যান্টি-ফিশিং সুরক্ষাতেও টোটাল এভি কার্যকর। পূর্ব পরিচিত ভাঁওতামূলক ফাইল বা ইমেইলের ক্ষেত্রে এটি একটি ব্ল্যাকলিস্ট তৈরি করে এবং নতুন ঝুঁকি চিহ্নিত করতে এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজ করে থাকে। তবে টোটালএভির সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এতে উপলভ্য ইন্টিগ্রেটেড ফায়ারওয়াল এবং রিয়েল টাইম প্রটেকশনের মতো ফিচারগুলো শুধু এর পেইড সংস্করণেই পাওয়া যায়। এ ছাড়া কম্পিউটার সুরক্ষা ব্যবস্থায় হাতের কাছে থাকা একটি প্রোগ্রাম হিসেবে টোটালএভির ওপর সহজে নির্ভর করা যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close