তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক

  ১২ জানুয়ারি, ২০২২

ক্যাশ সার্ভার স্থানান্তরে ইন্টারনেট খরচ বাড়বে, শঙ্কা প্রযুক্তিবিদদের

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) নির্দেশে শুক্রবার থেকে স্থানীয় পর্যায়ের ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ক্যাশ সার্ভার স্থানান্তরের কথা রয়েছে। এর ফলে গ্রাহকরা ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ইউটিউব এবং ফেসবুকের ভিডিও দেখার ক্ষেত্রে ধীরগতির শিকার হবেন বলে আশঙ্কা করছেন প্রযুক্তিবিদেরা। এ ছাড়া এমন সিদ্ধান্তের ফলে ইন্টারনেট খরচও কিছুটা বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের।

এ কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে এই সিদ্ধান্তকে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা আইএসপিগুলো। তবে বিটিআরসি বলছে এতে ইন্টারনেট সেবার মানে কোনো ব্যত্যয় হবে না।

ক্যাশ সার্ভার হলো গুগল, ফেসবুক কিংবা ইউটিউবের মতো সাইটগুলোর প্রধান সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত সহযোগী নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা বা স্থানীয় ডেটা সংরক্ষণ ব্যবস্থা। বাংলাদেশ থেকে গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন গুগল, ইউটিউব কিংবা ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফরমগুলো। এগুলোর মূল সার্ভার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ইন্টারনেটের ওই প্ল্যাটফরমগুলো বিভিন্ন আইএসপি অর্থাৎ ইন্টারনেট সেবা দানকারী সংস্থাগুলোকে ক্যাশ সার্ভার দিয়ে থাকে।

এই ক্যাশ সার্ভারের কাজ হলো প্রধান সার্ভারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যুক্ত থেকে প্রধান সার্ভারের তথ্য ক্যাশ সার্ভারে নিয়ে আসা। এর সুবিধা হলো- যখন কোনো ইউজার ইউটিউব কিংবা ফেসবুকের মতো সেবা ব্যবহার করবেন, তখন সেটি আর যুক্তরাষ্ট্রের সার্ভার খুঁজবে না বরং কাছাকাছি যে স্থানীয় সার্ভার আছে সেটা থেকেই ডেটা নিয়ে আপনাকে প্রদর্শন করবে। কারণ ওই কন্টেন্ট স্থানীয় ইন্টারনেট সেবাদাতার ক্যাশ সার্ভারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা আছে। পরবর্তী সময়ে একই কন্টেন্ট যদি ওই দেশটির কোনো গ্রাহক সার্চ করে, তখন স্থানীয় সার্ভার থেকে অল্প ডেটা খরচ করে ওই তথ্য খুব দ্রুত পাওয়া যায়। ফলে নতুন করে আমেরিকা বা ইউরোপ থেকে পুনরায় পুরো নেটওয়ার্ক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এক কথায় ক্যাশ সার্ভার যত কাছাকাছি থাকবে গ্রাহকরা তত দ্রুত সার্ভিস পাবে বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিদরা। ক্যাশ সার্ভার মূলত মূল সার্ভার ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে দূরত্ব কমানোর কাজ করে। সেইসঙ্গে সার্ভার ও ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের চাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন ক্যাশ সার্ভার স্থানান্তরের পর বাংলাদেশে বসে গুগল, ইউটিউব, ফেসবুক ব্যবহার করার সময় যদি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সেই সার্ভার থেকে ডেটা পেতে হয় তাহলে তাহলে সেটার গতি অনেক কমে যাবে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের একজন গ্রাহক যে টাকায় ও গতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন, এখন বিশাল আকারে ক্যাশ সার্ভার স্থানান্তর করা হলে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ বেড়ে যাবে, সেইসঙ্গে গতিও কমবে। যার প্রভাব ঘুরে ফিরে গ্রাহকদের ওপরেই পড়বে।

প্রযুক্তবিদরা বলছে, স্থানীয় পর্যায়ে ক্যাশ সার্ভার না থাকায় দেড় দশক আগেও দেশে ইন্টারনেট খুব ধীরগতির ছিল। সব ধরনের ট্রাফিক আসত যুক্তরাষ্ট্র থেকে। পরবর্তী সময়ে গুগল, ইউটিউব, ফেসবুকের মতো টেক জায়ান্টগুলো গ্রাহকদের দ্রুতগতির সেবা দেওয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্যাশ সার্ভার বসাতে থাকে। পরবর্তী পর্যায়ে তা স্থানীয় আইএসপির কাছে চলে আসে। ফলে ব্যান্ডউইথের খরচও অনেকটা কমে যায়, ইন্টারনেটের গতিও বেড়ে যায়।

কিন্তু বাংলাদেশে এসব সার্ভার বসানোর ক্ষেত্রে তারা বিটিআরসির কাছ থেকে কোনো অনুমোদন নেয়নি বলে জানিয়েছেন ইন্টারনেট সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি। এখন অনুমোদনহীন এই আঞ্চলিক সার্ভারগুলো সরিয়ে নেওয়ার কারণে ইউটিউব ও ফেসবুকের ভিডিও কন্টেন্টগুলোর গতিতে প্রভাব পড়বে বলে প্রযুক্তিবিদরা জানিয়েছেন।

এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আগে যেগুলো স্থানীয় আইএসপির ক্যাশ ব্যবহার করে চলত, সেগুলোকে এখন সিঙ্গাপুর, ভারত কিংবা যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের সার্ভার ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া আইআইজি, নিক্স, নেশনওয়াইড আইএসপির কাছে স্থানীয় আইএসপিগুলো বাড়তি ডেটা চাওয়া শুরু করবে। ব্যান্ডউইথে চাপ পড়ার কারণে ইন্টারনেটের গতিও আগের চেয়ে অনেকটা কমে আসবে। এ ছাড়া একই কন্টেন্ট পেতে বাড়তি ডেটা খরচ হওয়ায় ইন্টারনেটের খরচও বেড়ে যাবে। এসব কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন প্রান্তিক ইউজাররা।

এ ব্যাপারে প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির জানিয়েছেন, একসঙ্গে অনেক ক্যাশ সরানো হচ্ছে, কিছু অপসারণ করা হতে পারে। ডেটা বেশি খরচ হওয়ার ক্ষেত্রে গতি কিছুটা কমবে, বিশেষ করে প্রান্তিক এলাকায়। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের খরচ বাড়বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close