reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১০ মার্চ, ২০১৭

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি : তার শিল্পকর্ম

মোহাম্মদ আলী

মানুষই সবকিছুর মাপকাঠিÑপ্রাচীন গ্রিসের এই আদর্শকে সামনে রেখে মধ্যযুগের ইউরোপ জেগে উঠল নতুন নতুন চিন্তা-চেতনায়। আর এর মূলে রয়েছে সেকালের ফ্লোরেন্স। এখানেই জন্ম বহুবিচিত্র প্রতিভার অধিকারী, শ্রেষ্ঠ শিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির। যে প্রাণকে শরীরের গভীর মূল বলে জানে পৃথিবীর মানুষ, সেই প্রাণকে আকার দিয়েছেন তিনি।

চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, স্থপতি, যন্ত্রকৌশলী ও আবিষ্কারক, লেখক-দার্শনিক, ভূগোল ও ভূতত্ত্ববিশারদ, শারীরতাত্ত্বিক, গণিতজ্ঞ, উদ্ভিদবিদ, সঙ্গীতবিদ, সাজসজ্জাবিশারদÑ কোন বিষয়ে প-িত নন তিনি! সৃষ্টিশীল মানসিকতা আর কোনোকিছু তৈরি করার আগে অনেক অনেক সময় নেওয়ার কারণে তার ছবির সংখ্যা মাত্র ১৫টির মতো। ১৫টি চিত্রের কয়েকটি আবার অসম্পূর্ণ। (সেন্ট জেরোম ইন ওয়াইল্ডারনেস, অ্যাডোরেশন অব দ্য ম্যাজাই, দ্য ভার্জিন অ্যান্ড চাইল্ড উইথ সেন্ট অ্যানা অ্যান্ড সেন্ট জন ব্যাপ্টিস্ট, ১৪৯৯-১৫০০)। কোনোটি আবার হারিয়ে গেছে সময়ের অতলে। (ব্যাটল অব অ্যাঙ্গিয়েরি, পিটার পল রুবেল, ১৫০৫, মেডুসা, শিল্পী কারাভাজ্জিও, ১৫৯৭)। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য প্রস্তুতিমূলক ড্রইংও।

তার আঁকা প্রথম ছবি হিসেবে আমরা পাই একটি ল্যান্ডস্কেপ বা ভূদৃশ্যকল্প। মাতৃভূমির এই অদ্ভুত ভূমি গঠন তার জীবনে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে (ভিডিও)। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে রয়েছে পৃথিবীর সেরার সেরা চিত্র ‘মোনালিসা’য়। একই সঙ্গে প্রকৃতি এবং নারীর চিরন্তন রহস্য ও আবেদনময় এই চিত্র তাকে অমরতা দিয়েছে পৃথিবীর বুকে। ৫০০ বছর পর আজও এই চিত্রকর্ম নিয়ে উৎসাহ-আবেগের শেষ নেই। তার নোটবুক চিত্রশিল্পের জগতে এক বিস্ময়ের নাম। ১৫৬৫ পৃষ্ঠার বইটিতে রয়েছে অজ¯্র্র ড্রইং। আয়নায় ধরলে লেখা যেমন উল্টো হয়ে যায়, ঠিক তেমনিভাবে বাম হাতে ডানদিক থেকে বাঁদিকে লিখতেন হরফগুলো। যখন যা-ই ভেবেছেন, তা লিখে রেখেছেন। লেখাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সাধ্যমতো এঁকেছেন।

সেই যুগের বিখ্যাত শিল্পী ভেরোচ্চিওর দীক্ষা নেন তিনি। লিওনার্দোর আঁকার হাত দেখে ভেরোচ্চিত্ত এতটাই বিস্মিত হয়েছিলেন যে, পণ করলেন, এই জীবনে ছবি আঁকার জন্য তিনি আর তুলিই ধরবেন না। লিওনার্দোর ওপর ফরমায়েশি ছবির দায়িত্ব দিয়ে অন্য কাজ করতেন তিনি। ভেরোচ্চিওর স্টুডিওতে তার অসমাপ্ত কয়েকটি ছবিতে হাত চালিয়েছেন লিওনার্দো। গুরুর টোবিয়াস অ্যান্ড দ্য অ্যাঞ্জেল ছবিতে, বিশেষ করে স্বর্গীয় দূতের হাতে-ধরা মাছটি তাঁরই কীর্তি। পটভূমির অনেকটাই তার আঁকা। ছবি আঁকার ব্যাপারে পিরামিড বা ত্রিভুজাকারকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি করে। (ম্যাডেনা অ্যান্ড দ্য চাইল্ড উইথ সেন্ট অ্যানা, ভার্জিন অব দ্য রকসের দুটি সংস্করণ ও বিভিন্ন প্রতিকৃতি)। গ্রিক দেবতা বাক্কাস এবং সন্ত জন ব্যাপ্টিস্টের পবিত্র প্রতিকৃতি এঁকেছেন কামনাময় করে।

তার শিল্পীজীবনের আয়ের উৎস বিত্তবানদের স্ত্রীলোকের প্রতিকৃতি অঙ্কন। (এখানে সাল ধরে ধরে ছবির নাম উল্লেখ করা হবে। লা জিওকান্ডো বা মোনালিসা, জেনেভ্রা দ্য বেঞ্চি, লেডি উইথ এন এরমাইন, একজন সঙ্গীতজ্ঞের মুখাকৃতি, লা বেলে ফেরোনায়ার, মোনালিসা, (বিতর্কিত)- প্রোফাইল অব আ ইয়ং ফিঁয়াসে) তিনি সিলিংয়ের ছবি এঁকেছেন। (সফরজাদের প্রশাসনিক কক্ষে ফ্রেস্কো, ১৪৯৮-৯৯)। শিশু যিশুখ্রিস্ট ও কুমারী মাতাকে নিয়ে এঁকেছেন বেশকিছু ছবি। (বেনুইস ম্যাডোনা, ম্যাডোনা অব দ্য কারনেশন, ম্যাডোনা লিটা, (বিতর্কিত)- ম্যাডোনা অব দ্য ইয়ার্নউন্ডার, দ্য ড্রেইফাস ম্যাডোনা)। সান্টা মারিয়া দেলা গির্জার দেয়ালে আঁকা তার বিখ্যাত শিল্পকর্মটির নাম দ্য লাস্ট সাপার। মুখভঙ্গির আবেগময় প্রতিচ্ছবি আর জ্যামিতিক সুষমায় উজ্জ্বল নমুনা দ্য লাস্ট সাপার বা যিশুর শেষ ভোজ ছবিটি। যিশুখ্রিস্টের প্রধান চরিত্র। তাই ছবির কেন্দ্রবিন্দুতেও তিনি। তার দু’পাশের ১২ জন অনুরাগী-শিষ্যও সমান দু’ভাগে ভাগ করা। প্রত্যেক পাশে ভক্তের সংখ্যা ৬। তিনি একজন শারীরবিজ্ঞানী। মানুষ ও জন্তুর শরীর নিখুঁতভাবে আঁকার জন্য শল্যচিকিৎসকের কাছে গেছেন। ফাঁসিতে টাঙানো আসামির বিকৃত মুখ পর্যবেক্ষণ করেছেন; এমনকি মানুষের শবদেহ পর্যন্ত কেটেকুটে দেখেছেন ভেতরকার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো। তিনি উদ্ভিদবিজ্ঞানীও। পুরুষ ও স্ত্রী-উদ্ভিদের ব্যবধান তিনিই প্রথম নির্ণয় করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist