সাইয়েদ জামিল
সাক্ষাৎকার
একজন লেখক রাষ্ট্রের অস্বীকৃত অ্যাম্বাসাডর
সাইয়েদ জামিল। কবি, গীতিকার, শিশুসাহিত্যিক এবং গবেষক। পড়াশোনা বাংলা ভাষা, সাহিত্যে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর। প্রকাশিত বই ১৮টি। সমাজচিন্তা, রাষ্ট্রভাবনা আর মানবতা তার লেখার অন্যতম উপস্থাপন। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে কর্মজীবন শুরু। পরে যুক্ত হন পর্যটনশিল্পে। সম্প্রতি শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হয়েছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফরিদুল ইসলাম নির্জন
শুরুতেই জানতে চাই আপনি কেমন আছেন?
এই প্রশ্নের উত্তর সাধারণত দিই না। যদি বলি ভালো আছি, তবে তা কেমন ভালো কিংবা তা কীসের সাপেক্ষে- এই রকম প্রশ্ন আসতে পারে। তেমনি খারাপ আছি বললে, কেমন খারাপ আর তা কীসের সাপেক্ষে- সেটাকেও সামনে আনতে হয়। ফলত আমি ভালো এবং খারাপ ব্যাপারটাই এড়িয়ে যাই। সর্বদা আনন্দে থাকার চেষ্টা করি।
বর্তমানে কী পড়ছেন বা লিখছেন?
বর্তমানে পড়ছি মুসা আল হাফিজের দুটি বই। একটি চিন্তা ও দর্শনের বই। নাম ‘ঐন্দ্রজালিক আত্মজীবনী’। অন্যটি কবিতার। নাম ‘ইভের হ্রদের মাছ’। ঐন্দ্রজালিক আত্মজীবনী খুবই চমৎকার একটি বই। পড়ে খুবই আরাম পাচ্ছি। কবিতার বইটিও সুখপাঠ্য।
লিখছি দুটি কবিতার বই। একটির নাম ‘খুনি রাষ্ট্রের বুকের ওপর লেখা কবিতা’। এটি সামনের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হবে। অন্যটির নাম ‘যদি তুই কবি হোস তবে তুই ধাক্কা খা সংবিধানের সাথে’।
আপনার প্রিয় কবি কারা? যাদের কবিতা পড়ে আপনার জীবনবোধ পাল্টে গিয়েছে?
আমার কোনো প্রিয় কবি নেই। তবে দেশ-বিদেশের বহু কবির কবিতায় আমি আলোড়িত হয়েছি। কবিতা নয় শুধু- উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, দার্শনিক রচনা, রাজনৈতিক থিওরি, ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি নানা বিষয়-আশয় দ্বারা আলোড়িত হয়েছি। পরিবর্তিত হয়েছি। আমার জীবনবোধে আমার সব ধরনের পঠনপাঠনের ভূমিকা আছে।
কী কারণে তিনি বা তারা আপনার প্রিয় কবি?
কারণ একটাই- তাদের চিন্তা আমাকে আলোড়িত করে। তাদের দেখার জগৎ আমার অনুভরে ধরা দেয়। ফলে আমি শিখতে শিখতে প্রতিনিয়ত পাল্টে যেতে পারি। মানুষ হিসেবে প্রতিনিয়ত পাল্টে যেতে চাই এবং আপডেট হতে চাই। পাল্টানোর সূত্র যিনি ধরিয়ে দিতে পারেন, যার রচনায় পাল্টানোর ঈঙ্গিত থাকে সে তো প্রিয়ই হবে।
আপনার লেখা আপনার সবচেয়ে প্রিয় বই কোনটি?
এইটা একটা বিব্রতকর প্রশ্ন এবং একই সঙ্গে যথেষ্ট জটিল। নিজের বই থেকে একটা প্রিয় বাছাই করা দুরূহ ব্যাপার। তবু একটা যেহেতু করতেই হবে সেহেতু ‘কায়কাউসের ছেলে’-এর কথাই বলব।
বইটি লেখা থেকে শুরু করে প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত জার্নিটা জানতে চাই।
বইটি লিখেছিলাম খ্রিস্টাব্দ ২০১৩-২০১৪ সময়কালে। ২০১৩-তে আমার প্রথম বই ‘রাষ্ট্রবিরোধী গিটার’ প্রকাশিত হয়। এরপর চিন্তা করলাম, একটি নতুন ভাষাভঙ্গির দিকে যাওয়া চেষ্টা করা দরকার আমার। একই সঙ্গে বিষয়েও প্রথাগত জায়গা থেকে সরে আসার চেষ্টা করলাম। এভাবে ৪০টি নতুন কবিতা লিখে ফেললাম। পাণ্ডুলিপি ঠিকঠাক প্রস্তুত হয়ে গেলে এক দিন আর্টিস্ট নির্ঝর নৈঃশব্দ্যের অনুপ্রেরণায় সেটি জমা দিই ‘প্রথমা’-এর জীবনানন্দ পুরস্কারের জন্য। জীবনে এই একবারই প্রথম এবং শেষবার কোথাও পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়ার ঘটনা ঘটাই। অপ্রত্যাশিতভাবে কায়কাউসের ছেলে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। সেটা ২০১৫-এর জানুয়ারিতে। এরপর ঘটনা সুখকর নয়। নানা বিতর্ক ঘিরে ধরে আমাকে। বইটির অংশবিশেষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর বিরুদ্ধে প্রথাগত পাঠক এবং অপাঠক শ্রেণি অশ্লীলতার অভিযোগ তোলেন। অবস্থা এতই বেগতিক হয়, একপর্যায়ে এই পুরস্কার বাতিলের ঘোষণা দেয় প্রথমা। তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পাণ্ডুলিপির অংশবিশেষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার জন্য পুরস্কারটি বাতিল করা হলো।’ পুরস্কার বাতিল হলে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কারণ পুরস্কারসংক্রান্ত কারণে বইটির প্রকাশনা আটকে ছিল। এরপর দ্রুত, সম্ভবত ঘটনার তিন দিন পরই বইটি প্রকাশিত হয়।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হয়েছেন। এটা নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা কী?
এটা নিয়ে আসলে ব্যক্তিগত পরিকল্পনার সুযোগ নেই বললেই চলে। অনেকের সঙ্গে মিলে মতামতের ভিত্তিতে কাজ করতে হয়। আমি চেষ্টা করব শিল্পীদের যাতে কোনো ধরনের অসম্মান না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে। শিল্পীদের যে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়, তার আকার বাড়াতে মত দেব। এ ছাড়া ট্রাস্টের অধীনে একটি আর্টিস্ট মিউজিয়াম করার প্রস্তাব করব।
লেখালেখির ক্ষেত্রে একজন লেখক রাষ্ট্রের জন্য কী ভূমিকা রাখতে পারেন?
বিবিধ ভূমিকা রাখতে পারে। একজন লেখক হলেন রাষ্ট্রের অস্বীকৃত অ্যাম্বাসাডর এবং জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার দিশারি। লেখক তার ভাষা, চিন্তা ও অপরাপর তৎপরতা নিয়ে মানুষের কাছে হাজির থাকেন।
এ ছাড়া একজন লেখক সাহিত্যের মাধ্যমে নিজের দেশকে সারা পৃথিবীর কাছে তুলে ধরতে পারেন। পারেন রাষ্ট্রের মর্যাদা বাড়াতে।
বর্তমানে কার বা কাদের কবিতা ভালো লাগে?
অনেকের কবিতা ভালো লাগে। ইমতিয়াজ মাহমুদের কবিতা ভালো লাগে। ভালো লাগে কামরুজ্জামান কামু, ব্রাত্য রাইসু, মারজুক রাসেলের কবিতা। আমাদের জেনারেশনের মধ্যে হিজল জোবায়ের, জব্বার আল নাঈম, পলিয়ার ওয়াহিদ, সালেহীন শিপ্রার কবিতা ভালো লাগে। একেবারে নতুনদের মধ্যে ফরহাদ নাইয়ার কবিতায় আমি চমকিত হই। ভালো লাগে উদয়ন রাজীবের কবিতাও।
সব শেষে যা বলতে চান?
সব শেষে বলতে চাই- বাংলাদেশের মানুষ আরো বেশি রাজনৈতিকভাবে সচেতন হোক। আরো বেশি অধিকারসচেতন হোক।
এবং হে পাঠক, যেকোনো একটি শিল্পমাধ্যমের সংস্পর্শে থাকুন। শিল্পের সংস্পর্শ আপনার জীবনকে বর্ণিল এবং বৈচিত্র্যমণ্ডিত করবে।
পুরো সাক্ষাৎকার পড়ুন পত্রিকার
অনলাইন ভার্সনে
"